Assertion For Justice, Equality And Freedom.

Wednesday, March 26, 2014

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা

১৯ মার্চ ২০১৪, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সহযোগিতায় ছিল কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম (সিডিএমপি-২)। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশিত হলো।
 
আলোচনা
১ দুর্যোগ-পূর্ব প্রস্তুতিতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে
২. দুর্যোগ বিষয়ে গণমাধ্যম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে
৩. ত্রাণ কার্যক্রমের পাশাপাশি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিতে হবে
৪. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সাফল্যের দৃষ্টান্ত গণমাধ্যমে প্রচার করা
৫. দুর্যোগের আগে থেকেই সচেতনতামূলক প্রচার চালানো
৬. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির সংবাদ প্রচার করা।

যাঁরা অংশ নিলেন

মেছবাহ উল আলম               : সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়
মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম     : অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় প্রকল্প পরিচালক, সিডিএমপি
এ এস এম মাকসুদ কামাল : চেয়ারম্যান, ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ও ডিন, ফ্যাকাল্টি অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, ঢাবি
রিয়াজউদ্দিন আহমেদ            :   সম্পাদক, দ্য নিউজ টুডে
মতিউর রহমান চৌধুরী          :   সম্পাদক, মানবজমিন
সৈয়দ বদরুল আহসান             : নির্বাহী সম্পাদক, দ্য ডেইলি স্টার
মাহবুবা নাসরীন             : পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ, ঢাবি
আফসানা হক                          : সহকারী অধ্যাপক, আরবান অ্যান্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগ, বুুয়েট
এ এইচ এম বজলুর রহমান   : প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন
মো. সামছুর রহমান                 : পরিচালক প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর
পিটার মিডওয়ে                        : প্রজেক্ট ম্যানেজার, সিডিএমপি
আবদুল লতিফ খান                   : ডিজাস্টার রেসপনস ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ, সিডিএমপি
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম, সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো।

আব্দুল কাইয়ুম: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ এখন মডেল। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও দেশের মানুষ—সবার প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে। এখানে গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে দুর্যোগের আগে মানুষের মধ্যে সতর্কবার্তা ও করণীয় সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। ২০০৭ সালের সিডরে এক বাড়িতে দেখলাম ১৮ জনের মধ্যে ১০ জন বেঁচে গেছেন। তাঁরা একটি পাকা বাথরুমে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাহলে প্রতি বাড়িতে যদি একটি করে ছোট পাকা ঘর থাকে, সেটাও মানুষকে দুর্যোগের সময় রক্ষা করতে পারে। এসব বিষয়ে গণমাধ্যম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে পারে। প্রথম আলো সিডরের ওপর লেখা ও ছবি নিয়ে একটি প্রামাণ্য বই প্রকাশ করেছে। এটা ভবিষ্যতে গবেষণায় কাজে লাগবে। গণমাধ্যম এ ধরনের আরও অনেক কিছু করতে পারে। এখন আলোচনা করবেন মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম।

মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম: আমাদের দেশ ঝুঁকিপ্রবণ। ঝুঁকির দিক থেকে বাংলাদেশের স্থান বিশ্বে পঞ্চম। দেশের সব অঞ্চল কোনো না কোনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দুর্যোগে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বলতে কেবল ত্রাণ তৎপরতাকে বোঝানো হতো। আশির দশকের পর থেকে এ ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। বেশি জনসংখ্যার ঘনত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ছোট একটি ভূখণ্ডে ১৬ কোটি মানুষের বাস। বাধ্য হয়ে মানুষ উপকূল, শহরের বস্তিসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বাস করে। যথেষ্ট অর্থনৈতিক সক্ষমতা থাকলে দ্রুত ঝুঁকি মোকাবিলা করতে সহজ হতো। বঙ্গোপসাগর ও হিমালয়ের মাঝখানে আমরা আছি। সাগরের পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেলে দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোর লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়। উন্নয়ন নীতিতে দীর্ঘমেয়াদি সুবিধার কথা ভাবতে হবে। কেবল স্বল্পমেয়াদি সুবিধার কথা ভাবা হয়। ফলে অনেক সময় সুবিধার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। ১৯৯৮ সালে বন্যার স্থায়িত্ব ছিল ৬৮ দিন।
বাংলাদেশের রাস্তাগুলো পানি চলাচলের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে। গ্রাম থেকে বেশি পরিমাণে মানুষ শহরে আসছে। দুটোই জীবনের ঝুঁকি তৈরি করছে। এখন ৩০ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করে। ২০৫০ সালের আগেই ৫০ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করবে। এ ক্ষেত্রে আগুন, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় যেকোনো ধরনের দুর্যোগে ব্যাপক প্রাণহানি হবে। সাইক্লোন মোকাবিলায় কিছুটা অগ্রগতি হলেও বন্যা মোকাবিলায় যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি। দুর্যোগের একটি বড় কারণ হচ্ছে আবহাওয়ার পরিবর্তন। আমাদের খাদ্যের প্রধান উৎস কৃষি। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে কৃষি, পশুপালন, মৎস্য চাষ—সবকিছুর ব্যাপক ক্ষতি হবে। ফলে বেকার সমস্যা তীব্রতর হবে। তীব্র লবণাক্ততার জন্য এক হাজার কিলোমিটার উপকূলীয় অঞ্চলে ভয়াবহ পানিসংকট তৈরি হয়েছে। এ অঞ্চলের কৃষি, পশুপালন, মাছ চাষ সবকিছু বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। শহরে ভবনধস ও অগ্নিকাণ্ডের পরিমাণ বাড়ছে। অবস্থানগত কারণে পানি আমাদের সমস্যায় ফেলছে।
বেশি পানি, কম পানি, অসময়ে পানি—সবই সমস্যা তৈরি করছে। ১৯৭১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের মোট ৪৪০টি দুর্যোগ হয়। এতে দেশের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়। মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫৪০ কোটি ৩৮ লাখ ২ হাজার মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ।প্রাণহানি হয় দুই লাখ ৪৩ হাজার ৮৪ জনের। দুর্যোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের বিষয় হলো ভূমিকম্প। ৭ মাত্রার বেশি তীব্র ভূমিকম্প হলে বড় শহরগুলোতে ব্যাপক মানুষের মৃত্যু ও ভবনধস হবে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে না ভাবলে বিপর্যয়ে পড়ব, যা থেকে উদ্ধার পাওয়া কষ্টকর হবে।

রিয়াজউদ্দিন আহমেদ: ১৯৭০ সালের সাইক্লোনের ঘটনা কভার করেছি। আমেরিকা থেকে জাহাজ এসেছিল। সিঙ্গাপুর থেকে প্লেন এসে কেরোসিনের ড্রাম, রিলিফ নিচে ফেলে দিত। এখন সে অবস্থা নেই। দুর্যোগ মোকাবিলা করতে করতে দেশের মানুষ জীবন থেকে অনেক কিছু শিখেছে। ষাট-সত্তরের দশকের মতো এখন আর মানুষ মারা যায় না। এখন কোনো দুর্যোগ আসার আগে প্রায় সবাই জানতে পারে। এসব ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। দুর্যোগের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাংবাদিকেরা উপকূলের সংবাদ পাঠান। ফলে মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি জানতে পারে। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আমরা দুর্বল অবস্থায় আছি।
এ জন্য অনেক কিছু জানার পরও ঠিকভাবে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করতে পারছি না। শহরের রাস্তায় খোলা তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে প্রচণ্ড অব্যবস্থাপনা রয়েছে। ভূমিকম্পের ফলে অগ্নিকাণ্ড হবে। এতে জীবন ও সম্পদের হয়তো ৯০ শতাংশ ধ্বংস হবে। বারবার এসব বিষয় বলছি। আমার জানামতে, কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হয়েছে। একটা ভবনধস হলে সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রায় এক মাস লাগে সেটা ঠিক করতে। আর ভূমিকম্পে ঢাকায় যদি এক লাখ ভবন ধ্বংস হয়, তাহলে অবস্থা কী হবে? দুর্যোগের সময় কোথায় সাহায্য দরকার, কোথায় রিলিফের অনিয়ম হচ্ছে, গণমাধ্যম সবই তুলে ধরছে। কোনো বিষয়ে দ্বিমত হলে ছবি দেখিয়ে প্রমাণ করা হচ্ছে। গণমাধ্যম অনেক বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে। এবং কিছু কাজও হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বংলাদেশ একটা মডেল। আগামী দিনে গণমাধ্যম এ ক্ষেত্রে আরও বেশি কাজ করবে।

মাহবুবা নাসরীন: ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালে পরপর দুবার বাংলাদেশে বন্যা হয়। তখন আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। আমি ১৯৮৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিই। এ সময় টাইম ম্যাগাজিন-এ একটি ছবি ছাপানো হয়। মানুষ গলাপানিতে দাঁড়িয়ে সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছে। একজন তাদের কবিতা পড়ে শোনাচ্ছেন। তখন মনে হলো আমরা সমাজবিজ্ঞানীরা কী করছি। তাই রুটি বানানোসহ বিভিন্ন কাজ শুরু করলাম। আমার কমনওয়েলথ বৃত্তিতে দুর্যোগে মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকে—এ বিষয় নিয়ে গবেষণা করি। গবেষণার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা ছিল না। গণমাধ্যমের খবরই ছিল প্রধান উৎস।
১৯৯৩ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো হলো। তখন ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যানসহ কিছু কাজ শুরু হলো। আমার গবেষণায় সাহায্য করেছে বাংলাদেশের মানুষ। অত্যধিক গরম, শীত, মঙ্গা ইত্যাদিকে দুর্যোগ বলা হবে কি না এসব বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। গণমাধ্যম এ ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে। আমাদের প্রবণতা হলো দুর্যোগ হলেই কাজ করব। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা হলো প্রতিনিয়ত কাজ করার একটা বিষয়। ২০০৪ সালের পর থেকে বাংলাদেশ রিলিফ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছে। কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম কাজ করছে। মন্ত্রণালয় তৈরি হলো। ১৯৯৭ সালে স্ট্যান্ডিং অর্ডার অন ডিজাস্টার তৈরি হয়েছে। এর ফলে দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ মডেল হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনা হয়নি। কিছু মানুষ আর্সেনিক লবণাক্ততাসহ বিভিন্ন দুর্যোগের মধ্যে আছে। তাদের জন্য গণমাধ্যম কাজ করতে পারে। নীতিমালা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে গণমাধ্যম ভূমিকা রাখতে পারে। আহ্বান করব গণমাধ্যম যেন সারা বছর এ ক্ষেত্রে কাজ করে।

মো. সামছুর রহমান: ২৭ মার্চ দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালন করব। অক্টোবরে আমাদের দুর্যোগের বিষয় নিয়ে কর্মসূচি রয়েছে। পত্রপত্রিকায় ঘোষণা যায়। অনেক সময় সংবাদ সম্মেলন করি। গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা অনুষ্ঠানে আসেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, পরের দিন পত্রিকা দেখে হতাশ হই। আমাদের খবর পাওয়া যায় না। বিষয়টি আমাদের ভাবিয়ে তোলে। কী করলে গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। তখন সচিব মহোদয় বললেন, ওনাদের কাছে যাই। ওনারাই বলবেন কী করলে গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে।
আমরা খুব বেশি বলতে চাই না। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে শুনতে চাই, কী করলে আমাদের খবর বেশি বেশি গণমাধ্যমে আসবে। মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেশে প্রতিবছর বন্যা হয়। দরিদ্র ও অল্পশিক্ষিত মানুষগুলো অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শিখে গেছে। তাদের বেশি কিছু বলতে হয় না। সমস্যা হচ্ছে শিক্ষিত মানুষদের নিয়ে। তাঁরা বেশি জানেন। আমাদের কথা শুনতে চান না। তর্ক-বিতর্ক করেন। এ জন্য আমরা শহরের দুর্যোগ সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারি না। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সাফল্য অর্জিত হয়েছে। অনেকের কাছে রোল মডেল হয়েছি। এর সব কৃতিত্ব শিক্ষাবঞ্চিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর। দেশে পারাপারের নৌকাগুলোতে বেশি যাত্রী ওঠে। ফলে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জ বন্দর ও শহরে যোগাযোগের জন্য প্রতিদিন আসা-যাওয়া মিলে প্রায় এক লাখ লোক পারাপার হয়। নিয়ম করলাম কোনো নৌকায় ছয়জনের বেশি উঠবে না। কিন্তু দেখা গেল সবাই হুড়মুড় করে উঠে পড়ে। মানুষ তার জীবনের ঝুঁকির ব্যাপারে সচেতন নয়। এসব ক্ষেত্রে গণমাধ্যম এগিয়ে এলে জনগণের উপকার হয়। তাই গণমাধ্যমকে অনুরোধ করব তারা যেন আরও বেশি বেশি সহযোগিতা করে।

এ এইচ এম বজলুর রহমান: এ ধরনের অনুষ্ঠান নিয়মিত হওয়া দরকার। তাহলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। আমরা দেখতে চেয়েছিলাম দুর্যোগের ক্ষেত্রে কমিউনিটি রেডিও কীভাবে কাজ করে। উপকূলীয় অঞ্চলে এখন ছয়টি কমিউনিটি রেডিও কাজ করছে। ২০১৩ সালে মহাসেন হয়েছিল। মহাসেনে কমিউনিটি রেডিওর কার্যকারিতা লক্ষ করেছি। দুর্যোগে উপকূলীয় অঞ্চল বিদ্যুৎবিহীন ছিল। আধুনিক প্রযুক্তি কাজ করছিল না। একনাগাড়ে ৫১৪ ঘণ্টা কমিউনিটি রেডিও কাজ করেছে। তাই নীতিনির্ধারকদের বলব নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পুরোনো প্রযুক্তিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। ক্যাটরিনায় আমেরিকাও একই ভুল করেছিল। ক্যাটরিনার ভয়াবহতায় আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পারেনি। তখন তারা পুরোনো প্রযুক্তি ফিরিয়ে আনে। এ বিষয়ে বেশি করে আলোচনা হওয়া দরকার। তাহলে অনেক বিষয় বেরিয়ে আসবে। উপকূলীয় অঞ্চলে সিপিপি (সাইক্লোন প্রিপিয়ার্ডনেস প্রোগ্রাম) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখান থেকে গণমাধ্যম অনেক তথ্য পেয়ে থাকে। সিপিপি আরও বেশি কার্যকর রাখার ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

আফসানা হক: দুর্যোগের সময় গণমাধ্যম যথেষ্ট কাজ করে। তাদের প্রচারের ফলে বিদেশেও জনমত তৈরি হয়। প্রচুর সাহায্য আসে। কিন্তু দুর্যোগ-পূর্ব সময়েও গণমাধ্যম জনমত তৈরি করতে পারে। মানুষকে সচেতন করতে পারে। প্রচলিত গণমাধ্যম ছাড়াও বিলবোর্ড, লিফলেট, পোস্টার—এগুলোও গণমাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পরে। স্থানীয়ভাবে বিএনএনআরসি ভালো করে। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যম দুটোর মধ্যে সমন্বয় আনতে হবে। দুভাবে দুর্যোগ আসছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ। মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের জলাশয় ভরাট হচ্ছে। ফলে শহর ও গ্রামের মানুষ দীর্ঘ সময় পানিতে আবদ্ধ থাকছে। যেখানে সেখানে ভবন তৈরি হচ্ছে। ভবন তৈরিতে জাতীয় ভবন বিধিমালা মানা হচ্ছে না। ভবনধসে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের অসতর্কতাসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিবছর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম আগে থেকেই মানুষকে সচেতন করতে পারে। এসব নিয়ে তাদের ব্যাপক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সরকার ও নীতিনির্ধারণী মহলকে জানাতে পারে। তাদের কোথায় ঘাটতি রয়েছে, কী করণীয় আছে। সারা বছর গণমাধ্যম এসব নিয়ে কাজ করতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক আমার এক শিক্ষিকাকে বলছিলেন, তুমি দেশে গিয়ে কি গাছে থাকবে? তোমার দেশ তো বন্যায় ভেসে গেছে। ফলে কোনো বিষয় এমনভাবে উপস্থাপন করা যাবে না, যাতে সম্পূর্ণ নেতিবাচক ধারণা বিশ্বের কাছে যায়। গুজব-আতঙ্কের ক্ষেত্রেও মিডিয়া ভূমিকা রাখতে পারে। চূড়ান্তভাবে বলতে চাই, যাঁরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কাজ করবেন, তাঁদের যেন এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ থাকে। তাহলে নিজের নিরাপত্তা হবে। কাজটিও ভালো হবে। তাদের কাজ নিয়ে পরবর্তী সময়ে ফলপ্রসূ ডকুমেন্টেশন করা যাবে।

এ এস এম মাকসুদ কামাল: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দিবস উপলক্ষে আজকের গোলটেবিল বৈঠক। এ আলোচনায় গণমাধ্যম সম্পৃক্ত না থাকলে আলোচনাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা হলো দুর্যোগের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সবকিছু প্রস্তুত রাখা দ্রুত সতর্ককরণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। যদি নির্মাণবিধি না মেনে ভবন তৈরি করা হয়, তাহলে জেনেবুঝেই নিজের বাসস্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ করা হলো। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় দেশ অনেক এগিয়েছে। ৫০ হাজার সিপিপি সদস্য আছে। তিন হাজার সাইক্লোন শেল্টার আছে। তবে এ অঞ্চলে পাঁচ হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ প্রস্তুত অবস্থায় নেই। গণমাধ্যম কাজ করছে। কিন্তু কোন পর্যায় পর্যন্ত করছে, তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
দুর্যোগের সময় গণমাধ্যম ব্যাপক কাজ করে। কিন্তু দুর্যোগের আগে ও পরে সেটি আর থাকে না। বিশেষ করে মৌসুমি দুর্যোগগুলোর আগে গণমাধ্যম মানুষকে সচেতন করতে পারে। কীভাবে সাইক্লোন শেল্টারে যেতে হবে। কী কী নিতে হবে। আরও কী প্রস্তুতি দরকার ইত্যাদি। টেলিভিশনের পাশাপাশি এর মালিকদের অন্য ব্যবসা আছে। তাঁরা তাঁদের ব্যবসায়িক ও সামাজিক কার্যক্রম (সিএসআর) তহবিল এ কাজে ব্যবহার করতে পারে। 

সরকারসহ সবাইকে এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। সিডরের সময় গণমাধ্যমে প্রথম সাত নম্বর সতর্ক সংকেত দেওয়া হলো। তার দু-তিন ঘণ্টার মধ্যে ১০ নম্বর সতর্ক সংকেত দেওয়া হলো। মানুষ প্রস্তুত হওয়ার বেশি সময় পায়নি। টেলিভিশন স্ক্রলে বিপত্সংকেত ও গান একই সঙ্গে যায়। ফলে মানুষ বিপদকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। কোন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠান পরিবেশন কী হবে, এটা গণমাধ্যমকে ভাবতে হবে। ঢাকা শহরে কিন্ডারগার্টেনসহ দুই হাজার ৭০০-এর বেশি স্কুলের মধ্যে অনেক নামীদামি স্কুলও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে রয়েছে। দুর্যোগের ওপর জাতিসংঘ এক গবেষণা করেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় এক ডলার খরচ করলে রিলিফসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ১০ ডলার ব্যয় কমে আসবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বাজেটের বড় অংশ ব্যয় হয় রিলিফের জন্য। রিলিফ থেকে বেরিয়ে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য অনেক বেশি ব্যয় করতে হবে। প্রথম আলো সিডরের ওপর ডকুমেন্টেশন করেছে। এমন ডকুমেন্টেশন আরও করতে হবে।

সৈয়দ বদরুল আহসান: আমরা সংবাদপত্রে কাজ করি। মনে করি, সব জানি। আজ এখানে এসে অনেক কিছু জানা হলো। জনগণকে সচেতন উদ্বুদ্ধকরণের কথা বলা হয়েছে। সাংবাদিকদেরও আরও সচেতন হতে হবে। টেলিভিশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেবল রাজনীতির বিষয়ে আলোচনা হয়। অনেককে বলেছি কেন এত আওয়ামী লীগ-বিএনপির কথা বলা হয়। তাঁদের ব্যবস্থাপনা নাকি এটাই চায়। এর বাইরে আরও সামাজিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
কয়েক বছর আগে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নদী বাঁচাও আন্দোলন করেছিলাম। এখন এ বিষয়ে কথা শোনা যায় না। রাজনৈতিক দল ক্ষমতার বাইরে থাকলে গণমাধ্যমের বন্ধু হয়। ক্ষমতায় গেলে গণমাধ্যমকে চেনে না। আমাদের কথা শোনে না। বিলবোর্ডে অনেক রকমের বিজ্ঞাপন দেখি। দুর্যোগের বিষয় এখানে তুলে ধরা যেতে পারে। তাহলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা আরও বাড়বে। সাংবাদিকদের সব বিষয়ে লিখতে বলি। কোনো বিশেষ বিষয়ে দক্ষতা থাকে না। দুর্যোগের বিষয়ে কাজ করার জন্য সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। দুর্যোগসহ বেশি করে অন্য সামাজিক বিষয়গুলো টক শোতে আনতে হবে। আমি মনে করি, গণমাধ্যমকে আরও বেশি কাজ করতে হবে।

মতিউর রহমান চৌধুরী: আমরা সবাই গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই। কিন্তু মিডিয়ার অবস্থান কোথায়, সেটা বুঝতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় জাতীয় কমিটি আছে। এ কমিটিতে কি গণমাধ্যমের কোনো প্রতিনিধি আছেন? কোনোকালে ছিল? ছিল না। গণমাধ্যমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তাহলে তাদের কাছ থেকে কতটুকু আশা করতে পারেন? টক শোতে রাজনীতি নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। কারণ কী? রাজনীতিবিদেরা অনেক বিষয়ে কথা বলেন। এর মধ্যে রাজনীতি নিয়ে কথা বললে এটাই হেডলাইন হয়। টেলিভিশনের স্ক্রলে এটাই দেখা যায়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দিবসে প্রধানমন্ত্রী অনেক কথা বলবেন।
যেই রাজনীতি নিয়ে দুটো লাইন বলবেন, এটাকে সবাই হেডলাইন করবেন। মূল বিষয়টি মানুষের মধ্যে আলোচনায় আসবে না। আলোচনাগুলো যে জায়গার বিষয়, সেখানে হওয়া উচিত। বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও ইলেকট্রিক তার রাস্তার ওপর নেই। ইলেকট্রিক লাইনকে অবশ্যই মটির নিচে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, মাটির নিচে তার নেওয়ার জন্য কয়েকবার টাকা এসেছে। এ টাকা নয়ছয় হয়েছে। গণমাধ্যমে এ খবর দিলে হয়তো মামলা হবে। ভয়ংকর সিডরের সময় গণমাধ্যমে গান বেজেছে। এটা ঠিক নয়। অনেক সময় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় থাকে না। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায় না। টেলিভিশনকে যেতে দেওয়া হয় না। বলে সেনসেটিভ। কিসের সেনসেটিভ? বিদেশি পত্রিকাগুলো সহযোগিতা পাচ্ছে। আমরা পাচ্ছি না। যাঁরা দুই লাইন লেখেন না, তাঁরা বিদেশে সম্মেলনগুলোতে যান। অথবা এমন একজনকে নেওয়া হলো, যিনি সাত দিন পর বদলি হলেন অন্য কোথাও। তাঁর অভিজ্ঞতা কোনো কাজে লাগল না। এসব বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। মসজিদভিত্তিক ক্যাম্পেইন হতে পারে। সবার সঙ্গে একমত, দুর্যোগের আগে-পরে গণমাধ্যমের কাজ করা প্রয়োজন।

মেছবাহ উল আলম: দুর্যোগ মন্ত্রণালয় ও গণমাধ্যম মানুষের জন্য কাজ করছে। এখানে কোনো রাজনীতি নেই। দুর্যোগ সবার জন্য। ঝড় এলে বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর মানুষকে ক্ষতি করবে, অন্যরা বেঁচে যাবে তা নয়। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের মডেল মনে করা হয়। কিন্তু সব ধরনের দুর্যোগ নয়। কেবল ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় মডেল। ১৯৭০ সালের ঝড়ের কথাই আলোচনায় আসে। ষোলো শ-সতেরো শ সালেও এ রকম বড় ঝড় হয়েছে। একটি বইয়ে পড়েছি, ইংরেজ বাহাদুর ঝড় দেখতে গিয়ে গাছে লাশ দেখেছেন। ১৯৭০ সালের পর থেকে আমরা রিলিফনির্ভর ছিলাম। এখন বেরিয়ে আসছি। বিভিন্নভাবে ঝুঁকি মোকাবিলার দক্ষতা বাড়াতে হবে। এখানে সবার ভূমিকা আছে।
মহাসেনে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ব্যাপক লোককে উদ্ধার করতে পেরেছি। সম্পদ বাঁচাতে পেরেছি। গণমাধ্যমসহ সবার সহযোগিতায় এটা হয়েছে। যেকোনো দুর্যোগের ক্ষেত্রে আগে থেকেই প্রচার-প্রচারণা চালানো উচিত। জাতি হিসেবে আমরা অত্যন্ত ভালো। প্রতিবেশীর বিপদে দেশের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমেরিকার একটা দলকে বললাম দুর্যোগের সময় ৫০ হাজার সদস্য বিনা পয়সায় কাজ করে। ওরা বিশ্বাস করতে পারে না, এটা কী করে সম্ভব। সবার বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। এখানে গণমাধ্যমের ভূমিকা আছে। ছোটবেলা থেকেই রেডিওতে আবহাওয়ার সংবাদ শুনে আসছি। এখন কতটুকু গ্রহণ করছি, সেটা একটা বিষয় হতে পারে। গত বছর প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ বিষয়ে আলোচনা হলো। কিন্তু কোনো পত্রিকায় সে খবর পেলাম না। তখন মনে হলো সমস্যা কোথায়, ওনাদের সঙ্গে বসি। ওনারাই বলুক কী করতে হবে। সাংবাদিকেরা লেখার বিষয় খোঁজেন। এটা কি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়? সিপিপির জন্য ১৫ কোটি টাকার সরঞ্জাম দিয়েছি। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সিপিপি খুব ভালো অবস্থায় আছে। রানা প্লাজাধসের সময় আমাদের আরবান স্বেচ্ছাসেবকেরা চরম ঝুঁকি নিয়ে রাত-দিন কাজ করেছেন। এ কাজের যাবতীয় তহবিল দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে গেছে। কিন্তু পত্রিকায় এ খবর আসেনি। অন্তত আমাদের জন্য দুই লাইন লিখলে উত্সাহিত হই। সাংবাদিক-আমরা উভয়ই মানুষের জন্য কাজ করি। এ কাজ আরও কত ভালোভাবে করা যায়, সেটি আমাদের উভয়ের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

অবদুল লতিফ খান: দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। সবার মধ্যে ভালো যোগাযোগ থাকলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ার সুযোগ বেশি হবে। অনেক নতুন বিষয় আছে। এগুলো মানুষের জানা দরকার। গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ জানতে পারে। আগে আমরা তিন দিনের অগ্রিম বন্যার পূর্বাভাস দিতে পারতাম। এখন পাঁচ দিন আগে পূর্বাভাস দিতে পারি। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক একটা সমীক্ষা করেছে। এ সমীক্ষায় বলা হয়েছে, তিন দিনের জায়গায় পাঁচ দিন আগে বন্যার পূর্বাভাস দেওয়ায় বাংলাদেশের জনগণের স্থানান্তরযোগ্য সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ২০ শতাংশের বেশি রোধ করা সম্ভব হয়েছে। মিলিয়ন ডলার ক্ষতি কমে যাচ্ছে। এসব ইতিবাচক ঘটনা গণমাধ্যম প্রচার করতে পারে। তাহলে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও আপনারা আজকের অনুষ্ঠানে এসেছেন, সময় দিয়েছেন। সবাইকে আমাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।

পিটার মিডওয়ে: গণমাধ্যম এবং কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করতে পারে। যুক্তরাজ্যে ১৮ শ শতকে গণমাধ্যম সরকার পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যুক্তরাজ্যে সাংবাদিকেরা দুর্যোগ নিয়ে বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করেন। এটা অনেক বেশি জনপ্রিয়। বড় দুর্যোগে অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা সবকিছুকে দুর্বল করে দেয়। তাই দুর্যোগ মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দুর্যোগে গণমাধ্যম দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করতে পারে। সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীরা দুর্যোগ মোকাবিলায় ভালো কাজ করছে। এদের সঙ্গে যদি গণমাধ্যম আরও সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলায় আরও সাফল্য অর্জন করতে পারবে। আজ প্রথম আলো ও কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের উদ্যোগে যে ফলপ্রসূ আলোচনা হলো তাতে ভবিষ্যতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় গণমাধ্যমের ভূমিকা আরও অনেক বেশি বাড়বে বলে মনে করি।

আব্দুল কাইয়ুম: বারবার দুর্যোগ এসে আমাদের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়। বাংলাদেশকে আরও শক্তভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় অন্য সবার মতো গণমাধ্যমও কাজ করছে। ভবিষ্যতে গণমাধ্যমের আরও বেশি অংশগ্রহণ থাকবে বলে আশা করি। আপনাদের সবাইবে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।




তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলো, বংলাদেশ

ডায়াবেটিস যখন অনিয়ন্ত্রিত

ডায়াবেটিসের জটিলতা নানাবিধ। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ধীরে ধীরে কিডনি, হূদ্যন্ত্র, চোখ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি করে ও অকার্যকর করে দেয়। তবে হঠাৎ করে রক্তে শর্করা অনেক বেশি বেড়ে গেলে মারাত্মক জীবনাশঙ্কা দেখা দিতে পারে। এর একটি হলো ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস। সাধারণত টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশু-কিশোরদেরই এটি বেশি হয়। কেননা, তাদের দেহে ইনসুলিন হরমোন প্রায় থাকে না বললেই চলে।


ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিসে তিনটি মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে: 
১। হাইপারগ্লাইসেমিয়া: রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়
২। চর্বি ভেঙে রক্তে কিটোন নামের অম্ল তৈরি হতে থাকে 
৩। মেটাবলিক এসিডোসিস: ক্রমে এই কিটোন দেহে জমে গিয়ে রক্তের অম্লত্ব অস্বাভাবিক বেড়ে যায় এবং বাইকার্বোনেট কমে যায়।

কীভাবে বুঝবেন: কিটোএসিডোসিস একটি আকস্মিক জরুরি অবস্থা। কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের মধ্যে কিছু উপসর্গ দ্রুত বেড়ে গিয়ে এতে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ও কোমায় আক্রান্ত হয়। উপসর্গগুলো হলোঃ 
১। প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
২। প্রচণ্ড তৃষ্ণা জোরে জোরে শ্বাস এবং শ্বাসে এসিটোনের গন্ধ 
৩। বমি
৪। চোখে ঝাপসা দেখা
৫। পেটে ব্যথা 
৬। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
৭।  জ্ঞান হারিয়ে ফেলা

কেন হয়: আকস্মিকভাবে রক্তে শর্করা অনেক বেশি বেড়ে যাওয়াই এই অবস্থার কারণ। এমনটা হতে পারে যদি কেউ কয়েক দিন ইনসুলিন না নেয়, না বুঝে ইনসুলিনের ডোজ বেশি কমিয়ে দেয়, সঠিকভাবে ইনসুলিন না দেয়, জ্বর বা সংক্রমণের কারণে রক্তে শর্করা বেড়ে যায়, ডায়াবেটিক রোগীর অস্ত্রোপচার বা গর্ভাবস্থা বা প্রসবের সময় ঠিকমতো চিকিৎসা না হলে। ছোটদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস প্রথমবারের মতো এই সমস্যা নিয়ে ধরা পড়তে পারে।

চিকিৎসা
ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস একটি জরুরি অবস্থা এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হলে মৃত্যু অবধারিত। যত দ্রুত সম্ভব এ ধরনের রোগীকে বিশেষায়িত হাসপাতালে নিতে হবে। এই সমস্যায় দেহ প্রচণ্ড রকমের পানিশূন্য হয়ে পড়ে। তাই দ্রুত শিরায় স্যালাইনের মাধ্যমে পানিশূন্যতা পূরণ করতে হবে। হাসপাতালে শিরায় বিশেষ পদ্ধতিতে ইনসুলিন দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়।

প্রতিরোধ
যারা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে বা টাইপ-১ ডায়াবেটিসের রোগী, তারা কোনো অবস্থাতেই একদিনের জন্যও ইনসুলিন নেওয়া বন্ধ করবেন না। সাধারণ জ্বর বা রোগে হঠাৎ করে ইনসুলিনের ডোজ কমাবেন না। অনিয়ন্ত্রিত শর্করার লক্ষণ যেমন ঘন ঘন পিপাসা বা ঘন ঘন প্রস্রাব ইত্যাদি বোধ করলে দ্রুত শর্করা মাপুন ও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। শৃঙ্খলা ও নিয়মকানুন মেনে চললে এ ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

-অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ 
ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।





তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলো, বংলাদেশ

আগামীর পথে রাজিয়া

৯ মার্চ। সকাল সাড়ে ১০টা। কলেজের গেটে এসে থামল একটি রিকশা। নেমে দাঁড়ালেন এক ছাত্রী। বাঁ কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ। লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে যান কলেজের ভেতর। একটু খেয়াল করতেই দেখা গেল মেয়েটির ডান হাত নেই। নেই বাঁ পাও। শুধু ডান পায়ে ভর দিয়েই হাঁটছেন। কলেজের নিচতলার সিঁড়ি পেরিয়ে একটু একটু করে উঠে গেলেন তিনতলার শ্রেণীকক্ষে। মেয়েটির নাম রাজিয়া সুলতানা। চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন ডিগ্রি কলেজের বিকম (পাস) কোর্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। প্রতিদিন এভাবেই রিকশায় করে কলেজে আসেন তিনি। ক্লাস শেষে একইভাবে আসেন কলেজের ফটকের সামনে। এরপর এক বান্ধবী তাঁকে ধরে রিকশায় তুলে দেন। পতেঙ্গা পূর্ব কাঠগড় এলাকায় বাড়ি ফেরেন তিনি।  রাজিয়ার সহপাঠী ও শিক্ষকেরা জানান, কখনো ক্লাস কামাই করেন না রাজিয়া। ছয় ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট রাজিয়া। বাবা শেখ আহমেদ একসময় ব্যবসা করতেন। এখন বয়স হয়ে যাওয়ায় নিজেদের ভাড়া ঘরের দেখাশোনা করেন। মা আয়েশা খাতুন গৃহিণী।

 রাজিয়া বললেন, ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে। তিনি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়েন। একদিন বিকেলে ফুপাতো বোনের বাড়ির ছাদে হাঁটার সময় অসতর্কতাবশত বৈদ্যুতিক তারে হাত লেগে যায়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অস্ত্রোপচার করে তাঁর ডান হাতটি কেটে ফেলতে হয়। কিছুদিন পর বাঁ পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়।

চিকিৎসায় অবহেলার জন্যই এমনটি হয়েছে বলে জানান রাজিয়া। বললেন, ‘সময়মতো চিকিৎসা করাতে পারলে হয়তো আমার বাঁ পাটি হারাতে হতো না।’ দুর্ঘটনার পর প্রায় বছর তিনেক রাজিয়ার পড়াশোনা বন্ধ ছিল। বাড়িতে শুয়ে-বসে কাটাতে হয়েছে। একটু সুস্থ বোধ করার পর বাড়িতেই পড়াশোনা শুরু করেন। এরপর এক ভাইয়ের সহযোগিতায় রাজিয়া মাইজপাড়া মাহমুদুন্নবী চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ২০১০ সালে সেখান থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এসএসসি পাস করেন। ২০১২ সালে নৌবাহিনী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন।

তবে ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট নন রাজিয়া। বললেন, ‘বাঁ হাত দিয়ে লিখতে হয়। প্রশ্ন কমন পড়লেও তিন ঘণ্টায় সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই এসএসসি ও এইচএসসিতে আশানুরূপ ফল করতে পারিনি।’ কারণ, লেখার পাশাপাশি হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে প্রচুর ছক ও ক্যালকুলেটরে হিসাব-নিকাশ করতে হয়। ভবিষ্যতে শিক্ষকতা, নয়তো ব্যাংকিং পেশায় নিয়োজিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেন রাজিয়া। কলেজের অধ্যক্ষ ইসমত আরা বলেন, ‘রাজিয়া পড়াশোনায় অনেক ভালো করছে। তাঁর পরীক্ষার সুবিধার্থে সহযোগী উত্তরদাতা বা পরীক্ষার সময় বাড়ানো যায় কি না সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব আমরা।’




নিজাম সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম
তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলো, বাংলাদেশ

Sunday, March 23, 2014

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা কিশোরী মায়েরা

কিশোরী মায়েরা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোট প্রজনন হার কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সার্বিক সাফল্য আছে। কিন্তু কিশোরী মায়েদের ক্ষেত্রে প্রজনন হার কমছে না। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যার চাপ কমাতে হলে বাল্যবিবাহ কমাতে হবে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) বলছে, বিশ্বে বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। বাংলাদেশ এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। বাল্যবিবাহ কমাতে একাধিক মন্ত্রণালয় কাজ করলেও বিক্ষিপ্ত সেই সব কাজ সমস্যার তুলনায় অপ্রতুল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাল্যবিবাহকে জনসংখ্যার সমস্যা হিসেবে দেখে এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
 
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৫ কোটি ৭০ লাখ। নগররাষ্ট্র বাদ দিলে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে এক হাজার ১৫ জন মানুষ বাস করে। বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অনেকে মনে করেন, সম্পদের তুলনায় অধিক জনসংখ্যা বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে বড় বাধা।
 
পরিস্থিতি: বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগে বাংলাদেশে ৬৪ শতাংশ নারীর বিয়ে হয়। গ্রামে এই হার ৭১ এবং শহরে ৫৪ শতাংশ। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের জাতীয় জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ‘চাইল্ড ম্যারেজ ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এ বছর প্রকাশিত ওই জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষার সঙ্গে বাল্যবিবাহের সম্পর্ক আছে। ১৮ বছরের কম বয়সে বিয়ে হওয়া নারীদের ৮৬ শতাংশ নিরক্ষর। দুই দশক ধরে অবস্থা প্রায় একই রকম আছে। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের (নিপোর্ট) জ্যেষ্ঠ গবেষক সুব্রত ভদ্র বলেন, ১৯৯৩ সালে দেশে নারীদের বিয়ের গড় বয়স ছিল ১৫ দশমিক ৩ বছর। আর ২০১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৬ বছরে। তিনি বলেন, ‘দুই দশকে বিয়ের বয়স বেড়েছে মাত্র এক বছর চার মাস। অর্থাৎ অগ্রগতি সামান্যই।’

কিশোরী মায়ের প্রজনন হার কমছে না: ‘চাইল্ড ম্যারেজ ইন বাংলাদেশ’ গবেষণার সহগবেষক এবং আইসিডিডিআরবির জনসংখ্যা, নগরায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তন কেন্দ্রের সহযোগী বিজ্ঞানী কামরুন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, আগে বিয়ে মানেই আগে গর্ভধারণ ও শিশুর জন্মদান। তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, কিশোরী মায়েরা দ্বিতীয় সন্তানও আগে আগে নেয়। এদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার ছেড়ে দেওয়ার হারও বেশি। মোট শিশু জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে কিশোরী মায়েদের অংশটি বাড়ছে। ১৯৯৩ সালে জন্ম নেওয়া ৩২ লাখ ৭৮ হাজার শিশুর মধ্যে কিশোরী মায়েরা জন্ম দিয়েছিল ২৬ শতাংশ। ২০১১ সালে জন্ম নেওয়া ৩২ লাখ ৬২ হাজার শিশুর মধ্যে কিশোরী মায়েরা জন্ম দেয় ২৯ শতাংশ। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ জনসংখ্যার ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে মূলত মোট প্রজনন হার (টোটাল ফার্টিলিটি রেট—টিএফআর) কমানোর মাধ্যমে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ বলছে, স্বাধীনতার পরপর দেশে টিএফআর ছিল ৬ দশমিক ৩। অর্থাৎ একজন মা গড়ে ছয়টির বেশি শিশুর জন্ম দিতেন। ১৯৯৩ সালে টিএফআর কমে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৪। ২০১১ সালে হয় ২ দশমিক ৩। গত দুই দশকে প্রজননক্ষম নারীদের মধ্যে টিএফআর কমেছে ৩২ শতাংশ। কিন্তু বয়সভিত্তিক শ্রেণী বিভাজনে দেখা যায়, ১৫-১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে কমেছে মাত্র ১৬ শতাংশ। আর ২০-২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ২২ শতাংশ কমেছে। ৩৫-৩৯ বছর বয়সীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে, ৬৩ শতাংশ। ২৫-২৯ বছর ও ৩০-৩৪ বছর বয়স শ্রেণীতে কমেছে যথাক্রমে ৩২ ও ৪৭ শতাংশ।

কাজ কী হচ্ছে: বাল্যবিবাহ কমানো বা বন্ধের ব্যাপারে জাতীয়ভিত্তিক প্রচার-প্রচারণা নেই। তবে একাধিক মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজ করছে। জানতে চাইলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) গণেশ চন্দ্র সরকার বলেন, ২৪২টি উপজেলায় একটি করে স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণীর ছাত্রীদের সচেতন করার কাজ তাঁরা শিগগিরই শুরু করবেন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল-ইসলাম জানান, দেশের ৪০০ উপজেলায় ৪০০ কিশোর-কিশোরী ক্লাব আছে। এ ছাড়া অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সারা দেশে আরও তিন হাজার এ রকম ক্লাব আছে। এসব ক্লাবে বাল্যবিবাহের খারাপ দিক নিয়ে কিশোর-কিশোরীদের সচেতন করা হয়। এ ছাড়া স্কুল বা কলেজ থেকে ঝরে পড়া প্রায় ১০ হাজার কিশোরীকে বৃত্তিমূলক কাজের জন্য আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মেয়েদের বিনা বেতনে শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ বাল্যবিবাহ কমাতে সহায়তা করছে।

বাংলাদেশে কিশোরীর সংখ্যা দেড় কোটির মতো। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পপুলেশন কাউন্সিলের এদেশীয় পরিচালক ওবায়দুর রব বলেন, সমস্যার তুলনায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ অপ্রতুল। তিনি বলেন, মেয়েদের কলেজে পড়ার হার বাড়লে বাল্যবিবাহ কমবে। দেখা গেছে, মেয়েরা শিক্ষিত হলে দেরিতে বিয়ে হয়। এ ছাড়া পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির আওতায় জাতীয়ভিত্তিক প্রচার দরকার।





তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলো, বাংলাদেশ।

৬৬ শতাংশ কিশোরী বাল্যবিবাহের শিকার

বাংলাদেশে ৬৬ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয় বয়স ১৮ হওয়ার আগেই। আর ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ গর্ভধারণজনিত জটিলতা। দেশে ৭০ শতাংশ প্রসব হয় বাড়িতে। অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার মতো কিশোরী মায়েরাও সন্তান জন্ম দেন দক্ষ ধাই বা স্বাস্থ্যকর্মীর সহায়তা ছাড়াই। মা হওয়ার পর কিশোরী তাঁর জীবনীশক্তি হারান, তাঁর শিক্ষাজীবন সংক্ষিপ্ত হয়। তাঁকে ফিস্টুলার মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়তে হয়। বর্তমানে দেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী এক কোটি ৬০ লাখ কিশোরী প্রতিবছর সন্তান জন্ম দিচ্ছেন।

পুরুষের চেয়ে নারীরাই কাজে বেশি ব্যস্ত থাকেন

একজন বেকার পুরুষ দৈনিক ২০ ঘণ্টা ২৪ মিনিট নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অনেকটা ‘অলস’ সময় কাটান। ঘুম, আড্ডা, পড়াশোনা, টিভি দেখা, খাওয়াদাওয়াসহ ব্যক্তিগত পরিচর্যায় তাঁরা এই সময় ব্যয় করেন। তবে বেকার নারীরা এভাবে দৈনিক সাড়ে ১৬ ঘণ্টা সময় দেন। তবে কর্মজীবী নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে এই ব্যবধান অনেক কম। গতকাল বৃহস্পতিবার সময় ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। বিবিএস প্রথমবারের মতো এ দেশের মানুষের সময় ব্যবহার নিয়ে জরিপ করেছে। জরিপে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, পুরুষের চেয়ে নারীরাই কাজে বেশি ব্যস্ত থাকেন। তাঁরা চাকরির পাশাপাশি গৃহস্থালিসহ বিভিন্ন কাজকর্মে পুরুষদের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করে থাকেন। অথচ পুরুষের তুলনায় নারীরা অবসর কাটানও কম। আর গৃহস্থালির কাজে নারীরাই এগিয়ে রয়েছেন।

বিবিএসের জরিপে বলা হয়েছে, কর্মে নিয়োজিত একজন পুরুষ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অর্থের বিনিময়ে ৬ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট কাজ করেন। আর নারীরা পাঁচ ঘণ্টা ১২ মিনিট কাজ করেন। তবে কর্মজীবী নারীরা গৃহস্থালির কাজে পুরুষের চেয়ে তিন গুণ বেশি সময় দেন। এ ক্ষেত্রে পুরুষ ১ ঘণ্টা ২৪ মিনিট আর নারীরা ৩ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট ব্যয় করেন। অন্যদিকে বেকার পুরুষেরা গৃহস্থালির কাজে মাত্র ১ ঘণ্টা ১২ মিনিট ব্যয় করেন। আর পুরুষের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি সময় দেন নারীরা। নারীরা ৬ ঘণ্টা ১২ মিনিট বাসার কাজ করেন। আবার বেকার পুরুষেরা বেকার নারীদের চেয়ে অবসর ও বিনোদনে প্রায় দ্বিগুণ সময় ব্যয় করেন।

পেশাওয়ারি হিসেবে চাকরিজীবী ও বিপণনকাজে নিয়োজিত নারীরা সবচেয়ে কম অবসর পান। তাঁরা দৈনিক গড়ে ৫ ঘণ্টা ১২ মিনিট চাকরিস্থলে কাজ করে বাসায় এসে মাত্র ৫৪ মিনিট অবসর পান। কেননা, বাসায় এসে তাঁরা পৌনে চার ঘণ্টা গৃহস্থালির কাজ করেন। আর একই পেশার পুরুষেরা পৌনে ৯ ঘণ্টা কাজ করে কর্মস্থল থেকে ফিরে মাত্র ৫৪ মিনিট গৃহস্থালির কাজে সময় দেন। গ্রামের পেশাজীবী নারীরা প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট কাজ করেন, পুরুষেরা করেন মাত্র দেড় ঘণ্টা। শহরে পেশাজীবী নারীরা বাসার কাজ করেন ৩ ঘণ্টা, আর পুরুষেরা করেন মাত্র ১ ঘণ্টা।  ২০১২ সালে সময় ব্যবহার নিয়ে এই পরীক্ষামূলক জরিপ শুরু হয়। সেই বছরের মে মাসে বাংলাদেশের তিন হাজার ৭৮০টি খানার ১৫ বছর ও এর ঊর্ধ্বে ১০ হাজার দুজন লোকের মধ্যে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে বিবিএসের সম্মেলনকক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রতিবেদনের ফলাফল তুলে ধরেন বিবিএসের শিল্প ও শ্রম শাখার উপপরিচালক কবির উদ্দিন আহমেদ। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব নজিবুর রহমান বলেন, এই প্রতিবেদনে নারীদের অর্থনৈতিক জয়গানই উঠে এসেছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় নীতিনির্ধারকদের এই প্রতিবেদন কাজে লাগবে। অ্যাকশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, বিনোদন হিসেবে নারীরা পিঠা বানান, কাঁথা সেলাই করেন। এসব কাজের অর্থনৈতিক অবদান রয়েছে। আরও বক্তব্য দেন বিবিএসের মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামাল, বিটিভির মহাপরিচালক ম হামিদ, বিবিএসের শিল্প ও শ্রম শাখার পরিচালক সামছুল আলম প্রমুখ।




তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলো, বাংলাদেশ।

Wednesday, March 12, 2014

সম্মাননা পেলেন নারী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) সদস্য সম্মেলনে সম্মাননা প্রদান করা হয় বাংলাদেশের পথিকৃৎ নারী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সিতে নারী-পুরুষ সমতাবিষয়ক একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। সেটি উপস্থাপন করেন গবেষক জাভেদ সিদ্দিকী। সেখানে উঠে এসেছে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীরা এ পেশায় আসছেন না। তবে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা তাঁদের পুরুষ সহকর্মীদের চেয়ে যোগ্যতায় পিছিয়ে নেই। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য গবেষক দিয়েছেন কিছু পরামর্শ।

অনুষ্ঠানে সম্মাননা প্রদান করা হয় আইসিএবির প্রথম নারী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সুরাইয়া জান্নাত খান, আইসিএবির প্রথম নারী কাউন্সিল সদস্য ও সভাপতি পারভীন মাহমুদ এবংপ্রথম ‘প্র্যাকটিসিং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট’ আক্তার সানজিদা কাশেমকে।এছাড়া চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সিতে বাংলাদেশের নারীদের অংশগ্রহণের পেছনে বিশেষ অবদান রয়েছে এমন ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সম্মানিত করা হয়।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। আইসিএবির সভাপতি শওকত হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

সম্মাননাপ্রাপ্ত পারভীন মাহমুদ বলেন, ‘আজকাল এ পেশায় নারীর সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নারীরা তাঁদের যোগ্য মর্যাদা নিয়ে কাজ করতে পারছেন না। তবে আমাদের নারীরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী।’





 তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলো, বাংলাদেশ।


Friday, March 7, 2014

আড়ালেই থাকছে নারীর অবদান

 আ ন্ত র্জা তি ক না রী দি ব স আ জঃ

 বাংলাদেশে নারীদের গৃহস্থালির কাজের অর্থমূল্য হিসাব করা হয় না। এটা করা গেলে অর্থনীতিতে নারীর অবদান আড়ালে থেকে যেত না। উপরন্তু, জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) অনেক বেশি হতো। দেশের এক গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশেও একই অবস্থা বলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক গবেষণায় বলা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের হিসাবে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। কৃষি, শিল্প, উদ্যোক্তা, অফিস-আদালতসহ সব কর্মক্ষেত্রেই নারীরা কাজ করছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১০ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে এক কোটি ৬২ লাখ নারী কর্মক্ষেত্রে রয়েছেন। ২০০৬ সালে এই সংখ্যা ছিল এক কোটি ১৩ লাখ। এর মানে, ওই চার বছরে প্রায় ৪৯ লাখ নারী শ্রমবাজারে প্রবেশ করেছেন। সপ্তাহে যাঁরা এক ঘণ্টা কাজ করেন, তাঁদের নিয়ে এই হিসাব করা হয়েছে।

২০১২ সালে প্রকাশিত এই জরিপ অনুযায়ী, গৃহস্থালির কাজ করে কোনো মজুরি পান না ৯১ লাখ নারী। তাঁদের মধ্যে কেউ আছেন পরিবারের সদস্য, আবার কেউ গৃহকর্মী। আবার মজুরি দেওয়ার ক্ষেত্রেও নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। পুরুষের চেয়ে নারীদের কম মজুরি দেওয়া হয়। শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে আট লাখ ৪৯ হাজার নারী দিনমজুর রয়েছেন। তাঁরা পুরুষের সমান কাজ করেও মজুরি কম পান। পুরুষ দিনমজুরেরা পান গড়ে ১৮৪ টাকা, নারীরা পান ১৭০ টাকা। তবে শহরে নারী-পুরুষের মজুরির বৈষম্য কিছুটা কম। এখানে নারী-পুরুষেরা গড়ে প্রায় সমান মজুরি পান। শহরের পুরুষ দিনমজুরেরা পান ২০০ টাকা, নারীরা পান ১৯৮ টাকা। শহরে মূলত নির্মাণশ্রমিকই বেশি।

এদিকে ‘বাংলাদেশের নারীর অনুদ্ঘাটিত অবদান অনুসন্ধান: প্রতিবন্ধকতা, সম্পৃক্ততা ও সম্ভাব্যতা’ নামের গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নারীরা দৈনিক গড়ে ১৬ ঘণ্টা গৃহস্থালির কাজ করেন, যার জন্য কোনো মজুরি তাঁরা পান না। তাঁরা সব মিলিয়ে প্রতিবছর ৭৭ কোটি ১৬ ঘণ্টা কাজ করেন। এতে এ কাজের মোট অর্থমূল্য হয় ছয় হাজার ৯৮১ কোটি থেকে নয় হাজার ১০৩ কোটি ডলার। এই অর্থ যদি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যুক্ত করা হতো, তাহলে এর আকার দ্বিগুণেরও বেশি হতো।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণাপ্রধান ফাহমিদা খাতুন এ গবেষণা করেছেন। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে একজন পুরুষ যে কাজ করেন, তার ৯৮ শতাংশই জিডিপিতে যুক্ত করা হচ্ছে। আর একজন নারীর মাত্র ৪৭ শতাংশ কাজের স্বীকৃতি জিডিপিতে মিলছে। এই গবেষণার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরির কাজ এখনো চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন। বাংলাদেশে নারীর বাসাবাড়িতে রান্নাবান্না, সন্তান লালন-পালনসহ গৃহস্থালির কাজকর্মের স্বীকৃতি জিডিপিতে নেই। এই শ্রমের আর্থিক মূল্যমানও নির্ধারণ করা হয় না।
 
এমন প্রতিকূলতার মধ্যেও সুখবর হলো, পুরুষদের মধ্যে যেখানে বেকারত্বের হার বাড়ছে, সেখানে নারীদের বেকারত্বের হার কমেছে। ২০০৬ সালে যেখানে নারী বেকারের হার ছিল ৭ শতাংশ, ২০১০ সালে এসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে। আর পুরুষের ক্ষেত্রে দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়ে ৪ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে। আবার যুবশক্তিতে তরুণীদের অংশগ্রহণও বেড়েছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত ৪৬ লাখ তরুণী শ্রমবাজারে ছিলেন। আর ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮ লাখে। আলোচ্য সময়ে তরুণীদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের হার প্রায় ৭০ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে তরুণ-তরুণী মিলিয়ে মোট যুবশক্তিতে রয়েছেন দুই কোটি নয় লাখ। সাধারণত ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীরাই তরুণ প্রজন্ম।

সময় ব্যবহারের দিক থেকেও পুরুষদের চেয়ে নারীরা এগিয়ে রয়েছেন। বিবিএসের সময় ব্যবহার জরিপে দেখা গেছে, কর্মজীবী একজন পুরুষ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অর্থের বিনিময়ে ছয় ঘণ্টা ৫৪ মিনিট কাজ করেন। আর নারীরা পাঁচ ঘণ্টা ১২ মিনিট কাজ করেন। তবে কর্মজীবী নারীরা বাসায় এসে পুরুষের চেয়ে তিন গুণ বেশি সময় কাজ করেন, যার শ্রমমূল্য নির্ধারণ করা হয় না। এ ক্ষেত্রে পুরুষ এক ঘণ্টা ২৪ মিনিট আর নারীরা তিন ঘণ্টা ৩৬ মিনিট ব্যয় করেন।
 
সামগ্রিক বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ যথেষ্ট বেড়েছে। ২০০৬ সালে হিসাব করা শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ২৯ শতাংশ, ২০১০ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। তবু নারীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি স্বীকৃত হচ্ছে না। তাঁদের বড় অংশই কাজ করেন পারিবারিক মণ্ডলে, মজুরি পান না। রুশিদান ইসলাম মনে করেন, পুরুষদের অধিকারেই থাকে সব বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ। পুরুষের অধিকারে থাকে জমি। ঋণও পান পুরুষেরাই। তবে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান মনে করেন, নারীর অবদান গণনায় এল কি না, সেটা বড় কথা নয়। নারীর অবদানের ফলেই অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন এসেছে। তাঁর মতে, শ্রমবাজারে প্রবেশ করে নারীরা অর্থনীতিতে তাঁদের প্রথম ধাপ অর্জন করেছেন।

বৈশ্বিক চিত্র: আইএমএফ গত সেপ্টেম্বরে ‘নারী, কর্ম ও অর্থনীতি’ শীর্ষক যে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, শ্রমবাজারে নারীরা পূর্ণ কর্মদক্ষতা দেখাতে পারলে সামষ্টিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাতে করে বিশ্ব জিডিপি ২৭ শতাংশ বাড়ত। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৫ শতাংশ, জাপানে ৯ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১২ শতাংশ ও মিসরে ৩৪ শতাংশ জিডিপির আকার বাড়ত। আইএমএফ বলছে, সারা বিশ্বে ৮৬ কোটির বেশি নারী রয়েছেন, যাঁরা পুরো কর্মদক্ষতা দেখাতে পারছেন না। আশঙ্কার বিষয় হলো, দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ কমছে। ২০০৫ সালে শ্রমবাজারের ৩৮ শতাংশই ছিলেন নারী। আর ২০১০ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ শতাংশে। আর পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এই হার সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৬৩ শতাংশ নারী রয়েছেন, যা ওই সব দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের, বিশেষ করে শ্রমবাজারের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।




 জাহাঙ্গীর শাহ
সুত্রঃ প্রথম আলো, বংলাদেশ।

নারীর শ্রম ও মেধার মূল্যায়ন জরুরি

বাংলাদেশের রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে আছেন নারীরা। জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারি দল এবং বর্তমান ও সাবেক বিরোধীদলীয় নেতাও নারী। আর এতেই কেউ কেউ তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন। কিন্তু এই নারীরা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত থাকার পরও নারী নির্যাতন কিন্তু কিছু কম হচ্ছে না। পরিবার থেকে কর্মক্ষেত্রে, পাহাড় থেকে সমতলে—সর্বত্রই নারীরা পুরুষের আগ্রাসী আচরণের শিকার। রাষ্ট্রক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ স্তরে নারীদের উপস্থিতিই নারীর ক্ষমতায়নকে নিশ্চিত করে না; বরং সমগ্র রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং সর্বোপরি সামাজিকভাবে নারীকে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তনই নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে নারীর শ্রম ও মেধার মূল্যায়নটাই সর্বাগ্রে জরুরি।

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায় ১৯৭৪ সালে। কিন্তু এর পটভূমি তৈরি হয় দেড় শতাধিক বছর আগে, ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ, যখন নিউইয়র্ক শহরে সুই তৈরির কারখানার নারী শ্রমিকেরা বিপজ্জনক ও অমানবিক কর্মপরিবেশ, স্বল্পমজুরি ও দৈনিক ১২ ঘণ্টা শ্রমের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চের নিউইয়র্ক শহরের নারী শ্রমিকদের এই প্রতিবাদ প্রতিধ্বনিত হয়ে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। আর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পর নারী দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে সারা বিশ্বে। কিন্তু নারী দিবসের সঙ্গে শ্রমজীবী নারীদের ঐতিহাসিক যোগসূত্রটি অনেকটা বিস্মৃত হওয়ার পথে। অথচ নারীর ক্ষমতায়নের পথে শ্রমজীবী নারীদের অধিকারের প্রশ্নই সবার আগে সামনে আসা উচিত।

১৮৫৭ সালের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৮৬০ সালে সুই তৈরি কারখানার নারী শ্রমিকেরা ইউনিয়ন গঠনের আইনগত অধিকার আদায় করে নিতে সক্ষম হন। ন্যায্য মজুরি আর আট ঘণ্টা শ্রমের দাবি পূরণে ১৯০৮ সালের ৮ মার্চ আবারও নিউইয়র্ক শহরের রাজপথে সমবেত হন পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের হাজার হাজার নারী শ্রমিক। ঠিক পরের বছরই (১৯০৯) প্রায় একই দাবিতে আমেরিকার ৩০ হাজার নারী শ্রমিক ১৩ সপ্তাহ ধরে ধর্মঘট পালন করেন। ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে সমাজতান্ত্রিক নারীদের প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের দ্বিতীয় সভায় জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নারীনেত্রী ক্লারা জেৎকিন শ্রমজীবী নারীদের বছরে একটি নির্দিষ্ট দিনে একত্র হওয়ার একটা খসড়া প্রস্তাব করেন, যাতে ওই নির্দিষ্ট দিনে শ্রমিক নারীরা একত্র হয়ে মতবিনিময় করতে পারেন। ক্লারা জেৎকিনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ৮ মার্চকে নারীদের সম্মিলিত হওয়ার দিবস হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

আমাদের দেশে আজ সর্বত্রই নারীদের সরব উপস্থিতি। তবে নারীদের সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য বিজ্ঞাপনে! তা শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপনই হোক কিংবা শেভিং ক্রিমের। তবে বিজ্ঞাপনের পণ্যটির চেয়েও নারী মডেলটি বেশি আকর্ষণীয় হওয়া চাই! এভাবে পণ্যের বিজ্ঞাপনের নারীকেও আদতে পণ্য হিসেবেই উপস্থাপন করা হচ্ছে। নারী দিবসকে ঘিরে আজ অনেক কোম্পানি যখন নারীদের ব্যবহূত নানা পণ্যের বিজ্ঞাপন তৈরি করছে, সেখানেও নারীকে একইভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আর পুঁজিবাদী দুনিয়ায় এটা মোটেও আজব কিছু নয়।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ দিক ব্যাপকতরভাবে নারীদের অংশগ্রহণ। এই আন্দোলনের বিশেষ অনুপ্রেরণা হিসেবে যাঁকে আমরা মনে করেছি, তিনি শহীদজননী জাহানারা ইমাম, যাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণ-আদালত গড়ে উঠেছিল। ৫ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে স্লোগান, গান কিংবা বক্তৃতায় আন্দোলনকে পরিচালনায় মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন নারীরা। শাহবাগ আন্দোলনকে ঘিরে কতিপয় কাগজ, ফেসবুকসহ সব সামাজিক মাধ্যম ও মুঠোফোনে সংগঠিতভাবে অপপ্রচারের মূল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন নারীরাই। শাহবাগের বিপরীতে গড়ে ওঠা হেফাজতের ১৩ দফা যেন নারীদের কয়েক শ বছর পিছিয়ে নেওয়ার এক অপচেষ্টা। তাদের দেখা যায় পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকদের উদ্দেশ করে অবমাননাকর বক্তব্য দিতে। নারীশিক্ষার বিরুদ্ধেও এই ধর্মব্যবসায়ীদের ব্যাপক আক্রোশ। নারীনীতি বাতিলের দাবিতেও তাঁরা সোচ্চার ছিলেন।

গণজাগরণ মঞ্চের সব নারীযোদ্ধা এবং বাংলাদেশের সব নারী শ্রমিক এবং নারীমুক্তি আন্দোলনের সব সাহসী যোদ্ধাকে জানাই নারী দিবসের সংগ্রামী শুভেচ্ছা।




লাকী আক্তার,
সুত্রঃ প্রথম আলো, বাংলাদেশ।

Thursday, March 6, 2014

'উন্নয়নের মূল কথা নারী পুরুষের সমতা'

বিশ্বের সব দেশে নারীরা অধিকার আদায়ের আন্দোলন করছেন। আর একটি দিনকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী নারী আন্দোলন একসূত্রে গাঁথা হচ্ছে। বৈশ্বিকভাবে মোকাবেলার জন্য একটা ইস্যু চিহ্নিত করে একই সুরে কথা বলা হচ্ছে। এভাবে ক্রমাগত আন্তর্জাতিক নারী আন্দোলন শক্তি সঞ্চয় করেছে। আন্তর্জাতিক নারী আন্দোলন জাতীয় নারী আন্দোলনের সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা, বিচ্ছিন্ন কোনো সংগ্রাম নয়।

বাংলাদেশে এখন নারী দিবস পালিত হচ্ছে ভিন্ন মাত্রায়। সরকার, বিভিন্ন নারী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন এবং উন্নয়ন সংগঠনগুলো উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ৮ মার্চ পালন করছে। গণমাধ্যমও ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এবারের ৮ মার্চের স্লোগানের মূল প্রতিপাদ্য_ 'নারীর সমান অধিকার সকলের অগ্রগতির নিশ্চয়তা'। নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সব সম্পদে নারী-পুরুষের সমান অংশীদারি। এখানে যেমন প্রয়োজন রয়েছে পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, তেমনি রয়েছে রাষ্ট্রের দায়িত্ব।


জাতিসংঘ সনদসহ কাগজে-কলমে বিশ্বে নারীদের অধিকারের কথা স্বীকৃত হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। উন্নত বিশ্বে নারীরা শিক্ষায়, কর্মে ও উদ্দীপনায় পুরুষের পাশাপাশি অবস্থান করলেও তাকে তার কর্মক্ষেত্রে ও সমাজজীবনে কমবেশি নির্যাতিত হতে হচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বে শিক্ষায় ও কর্মক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে থাকায় সর্বোপরি ধর্মীয় সংস্কার ও সামাজিক নিষ্পেষণের জাঁতাকলে পড়ে নারী যেমন তার প্রাপ্য অধিকার পাচ্ছে না, তেমনি নির্যাতিত-নিগৃহীত হচ্ছে নানাভাবে।

স্বাধীনতার বিয়ালি্লশ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। সরকার এসেছে, গিয়েছে; কিন্তু নারীর জীবনমানের উন্নতি হয়নি। নারীশিক্ষা, নারীর কর্মসংস্থান, নারীর প্রতি সামাজিক মূল্যবোধের খুব একটা উন্নয়ন ঘটেনি। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রণীত আইনের বাস্তবায়ন ঘটেনি। প্রচলিত আইনের সংস্কারও যথোপযুক্তভাবে হয়নি। আজকের নারী আন্দোলনের মূল দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ্য হচ্ছে, পূর্ণ মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে নারীকে বিবেচনা বা মূল্যায়ন করা। নারী-পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও উন্নত ও সমতাপূর্ণ, বৈষম্যমুক্ত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠা করা, যা গোটা সমাজকে সমঅধিকার ও সমমর্যাদাভিত্তিক করার প্রয়াসকে সাফল্যের পথে অনেকদূর এগিয়ে দেবে।
শুধু বাজেট প্রণয়নই নয়, তার সুষ্ঠু বণ্টন এবং সে সঙ্গে রাষ্ট্র ও সমাজের অভ্যন্তরে নারীর জন্য বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটানো অত্যন্ত জরুরি। নারী-পুরুষের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির বাধা ভেঙে অর্থনীতির মূল স্রোতধারায় নারীকে কী করে সার্থকভাবে যুক্ত করা যায়, নারী সংগঠনগুলো তা বিবেচনায় রেখেই আজকের বাংলাদেশে বর্তমান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

আমাদের সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় নানা আইনে নারীর অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু বর্তমান আর্থসামাজিক ও রাষ্ট্রব্যবস্থার কারণে নারীরা এখনও সাংবিধানিক অধিকার ও আইনানুগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমাদের সংসদে ৩০টি আসন সংরক্ষিত ছিল নারীদের জন্য, বর্তমানে তা বাড়িয়ে ৫০ করা হয়েছে। কিন্তু প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের সুযোগ না থাকায় সত্যিকার নারী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছে না। এ ছাড়া বিবাহবিচ্ছেদ অভিভাবকত্ব ও সম্পত্তির উত্তরাধিকারবিষয়ক আইনগুলোতে নারী-পুরুষের মধ্যে বিরাট ব্যবধান তৈরি করেছে। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষায় এগিয়ে আসা, কর্মক্ষেত্রে উচ্চপদ থেকে তৃণমূল পর্যায়ে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণ, নারীর অধিকার সচেতনতার বিষয়ে জোর দিতে হবে।

 




 দিল মনোয়ারা মনু
লেখক :সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মী
 তথ্যসুত্রঃ সমকাল।

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর ভূমিকাঃ কতটা এগিয়েছি আমরা

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর ভূমিকা যে কোনো দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অর্থনীতিতে কখনই তাদের কাজের মূল্যায়ন সঠিকভাবে করা হয়নি এবং অর্থনৈতিক তত্ত্বগুলোতে অনেক ক্ষেত্রে নারীর অ-আর্থিক কাজগুলোকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে ধরা হয়। যদিও নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব এখন অনেকাংশে জাতীয় নীতিতে মূল্যায়ন পাচ্ছে তথাপি তার অগ্রগতি সামান্য। একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে নারীর অবদানকে উপেক্ষা করে একটি টেকসই অর্থনৈতিক অবকাঠামো কখনই চিন্তা করা যায় না। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতেও নারীর অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি ও তাদের ক্ষমতায়ন দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। এ দেশের নারীরা শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ করছে, উচ্চশিক্ষা লাভ করে পেশাগত সাফল্য লাভ করছে, জাতীয় উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করছে, পারিবারিক আয় ও কল্যাণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। বিশ্বের দরবারে তৈরি পোশাক শিল্প আর ক্ষুদ্র ঋণের সাফল্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। শুধু এ ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপের সারণি-১ থেকে প্রতীয়মান হয়, বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ক্রমে বেড়ে চলেছে। সারণি-২ থেকে আরও স্পষ্ট হয়, কোন কোন খাতে নারীর অংশগ্রহণ কত।

সারণি-১-এ শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ২০১০ সালে মোট শ্রমশক্তি ছিল ৫৬.৭ মিলিয়ন (৫৪.১ শতাংশ)। পুরুষের সংখ্যা ছিল ৩৯.৫ মিলিয়ন (৩৭.৯ শতাংশ)। নারীর সংখ্যা ছিল ১৭.২ মিলিয়ন (১৬,২ শতাংশ)। শহরে মোট শ্রমশক্তি ছিল ১৩.৩ মিলিয়ন (১২.৪ শতাংশ)। পুরুষের সংখ্যা ছিল ৯.৩ মিলিয়ন (৮.৮ শতাংশ), নারীর সংখ্যা ছিল ৪.৯ মিলিয়ন (৩.৬ শতাংশ)। গ্রামে মোট শ্রমশক্তি ছিল ৪৩.৪ মিলিয়ন (৪১.৭ শতাংশ)। পুরুষের সংখ্যা ছিল ৩০.২ মিলিয়ন (২৯.১ শতাংশ), নারীর অংশগ্রহণ ছিল ১৩.৩ মিলিয়ন (২.৬ শতাংশ)। 
সারণি-২ :অর্থনীতির মূল মূল খাতে নারীর অংশগ্রহণ (শতাংশ হিসাবে)  
কৃষি খাতে পুরুষের অংশগ্রহণ ৪০.৫১ শতাংশ, নারীর অংশগ্রহণ ৫৩.২ শতাংশ। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে পুরুষের অংশগ্রহণ ১২.৫৯ শতাংশ, নারীর অংশগ্রহণ ১৬.৯৬ শতাংশ। খুচরা ব্যবসায় পুরুষ ১৬.৫৪ শতাংশ, নারী ৫.৪৩ শতাংশ। যোগাযোগ খাতে পুরুষ ১০.৭৪ শতাংশ, নারী ০.৪ শতাংশ। ব্যাংক ও ইন্স্যুরেন্সে পুরুষ ১.২২ শতাংশ, নারী ১.৩৭ শতাংশ। জনপ্রশাসন ও ডিফেন্সে পুরুষ ২.১৮ শতাংশ, নারী ১.০২ শতাংশ। শিক্ষা-বিনোদনে পুরুষ ৩.২১ শতাংশ, নারী ৪.৭ শতাংশ। কমিউনিটি ও সেবা খাতে পুরুষের অংশগ্রহণ ৪.১৩ শতাংশ এবং নারীর অংশগ্রহণ ১০.৭৮ শতাংশ।

সূত্রঃ ২০১০ সালের শ্রমশক্তি জরিপ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। 

উল্লেখ্য, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধানতম ক্ষেত্র গার্মেন্ট শিল্পে ৮০ ভাগ কর্মীই নারী। দেশের ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণকারীও নারী। অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের এক গবেষণায় জানা যায়, নারী বিনা পারিশ্রমিক ও কম পারিশ্রমিকে যে পরিমাণ শ্রম দান করে, তা টাকার অঙ্কে জিডিপির শতকরা ৪৮ ভাগ। এই চিত্র নারীর অর্থনৈতিক অবদানের কথা উল্লেখ করে।

তবে আমাদের সন্তুষ্ট হলে চলবে না। কারণ, নারীর অর্থনৈতিক উন্নতি মানে দেশের সার্বিক উন্নতি। তাই উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোতে এবং জাতীয় বাজেটে নারী উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। জাতীয় বাজেটে যে প্রকল্পগুলো নারীদের জন্য রাখা হয় সেখানে তাকে শুধু দুস্থ ও বিত্তহীন নারী হিসেবে না দেখে উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে দেখা উচিত। নারী উন্নয়ন এবং তার ক্ষমতায়নের জন্য একদিকে যেমন দরকার সহযোগী নীতিমালা অন্যদিকে সেই নীতিমালাগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ। শ্রমবাজরে নারীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। যেমন_ অনানুষ্ঠানিক খাতেই নারীদের অংশগ্রহণ বেশি। যার ফলে তাদের আয় কম এবং কাজের নিশ্চয়তাও কম। তা ছাড়া সরকারি চাকরিতে এখনও নারীর অংশগ্রহণ কম। মোট নিয়োজিত নারীর মাত্র ৩.২৫ শতাংশ সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত। আবার শ্রমবাজারে কর্মরত নারীদের অধিকাংশই খণ্ডকালীন কাজে নিয়োজিত। সুতরাং আনুষ্ঠানিক খাতেও আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে হবে। শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের জন্য নারীদের শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়াতে হবে। শুধু শিক্ষার হার বাড়ালেই যথেষ্ট নয়। শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে হবে।

 


ড. ফাহমিদা খাতুন
লেখক :অর্থনীতিবিদ
তথ্যসুত্রঃ সমকাল

Wednesday, March 5, 2014

Home Beautification in New Style

It is important for people to decorate and restore their home; revive, revamp, recycle and reclaim, in order to create a stylish yet individual home without or with spending a small fortune. Our miniature endeavor is to share with the communities around the world about home adornment and to furnish some refreshments for the people here.
Welcoming Entrance
Your front door is the first introduction that guests have to like your style and it is not expensive to ensure that people are greeted with an attractive front door, properly polished furniture and a vintage cabinet for shoes, umbrella or a drawer unit for mail and car keys. Here louvered semi classical cabinets may be placed. A sleek punch may be kept top on the cabinet for small plants.  A long mirror is a gorgeous addition to any entry way makeover. Greenway brings quick changes. You can easily arrange a single line of green at the stairway to your entry door.


Old living with new furnishing
An empty living space often looks smarter than one that is overcrowded, so if you cannot afford exactly what you want then leave a space for it later. Go for simple shapes in solid, neutral colours.   An old sofa reupholstered could cost one third as much as buying a new one. Here you can add the upholstery and the cushion patterns. Actually after changing the fabric, these sofa look quite striking. For makeovers, you can also add something tall like an open shelf for books or a decorative piece or an appealing corner of greenery. In this project, you can add an open wooden shelf a lot more things.

Inviting Dining
Furnishing organically for the dining area is very essential, because it is the place where all the family members gather every time. The old dining table is in a central position, but modified the dinner wagon may be modified . The upper unit may be separated and hung a partition two feet above the lower part. Here an open counter option may be made . Another side of a lower hatch will be attached to create the illusion of it seeming like a continuous part of the serving counter. Lighting in this area may be enhanced. Coloured glasses, cookeries and cutleries complete the dinner wagon.


 Vintage vogue
The popularity of vintage looks has been on the rise in recent years.
After the furniture, bed linen and curtains are probably the most important design elements of any room. You may choose solid curtains and lighter floral curtains for the day.




Bedrooms: It should be sanctuaries that provide respite from the world as well as places where you go to sleep. Recent trends have favoured the use of modern furniture with a few classic pieces. Vintage furniture adds soul to a modern interior, while the crisp clean lines of modern lighting for example, provide old furniture a new edge. Here you are opted bed, modified closet and add a new low dressing cabinet with a long mirror. Fabrics play an essential role in terms of aesthetics in any bedroom. For this room you can use a minimal amount of furniture, a neutral colour palette, beige classic curtains and a lovely white round mosquito net. In terms of embellishments, be careful not to use too many, as this may tamper the visual balance of the room.


 More pictures on Interior Decoration:
Modern Kitchen

Bath with natural fragrance


Silent Study

Tuesday, March 4, 2014

এক পায়ে প্রতিদিন পাঁচ কিলোমিটার !

গাড়ি ভাড়ার পয়সা নেই। তাই হেঁটেই চলতে হয় সোনিয়াকে। কিন্তু একটি পা নেই তার। তবে মনের জোর আছে ষোলআনা। ক্র্যাচ বা লাঠি কিচ্ছু নেই। এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে প্রতিদিন আড়াই কিলোমিটার পথ পেরিয়ে বিদ্যালয়ে যায় সে। সোনিয়া খাতুন (১২) রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ধোপাপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। বাড়ি পুঠিয়ার পূর্ব ধোপাপাড়া গ্রামে। বাবার নাম মজিবুর রহমান। তিনি মানসিক প্রতিবন্ধী। কেউ তাঁকে কাজে নেন না। মা রহিমা বেগম এক বেলা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। আরেক বেলা মাঠে কাজ করেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে সোনিয়া দ্বিতীয়। বড় বোন জলি খাতুনের লেখাপড়া পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। সেও অন্যের বাড়িতে কাজ করে। ছোট ভাইটি প্রথম শ্রেণীতে পড়ছে।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে ধোপাপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে সোনিয়াকে পাওয়া গেল। শ্রেণীকক্ষে বসে ছিল সে। শিক্ষক নাম ধরে ডাকতেই এক পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, মেয়েটি পড়াশোনায় ভালো। এক পায়ে হেঁটে আসতে কষ্ট হয় তার। এ জন্য স্কুল থেকে তাকে দুই সেট বই দেওয়া হয়েছে। এক সেট বই বিদ্যালয়েই থাকে। ও শুধু খাতা-কলম নিয়ে আসে। ডান পা ঊরুর কাছ থেকে নেই। কারপেটিং উঠে যাওয়া সড়কে চলতে গিয়ে ইটের খোয়া লেগে পা কেটে যায়। চিকিৎসার খরচ জোগানো বা কৃত্রিম পা লাগানোর মতো অবস্থা নেই পরিবারের।
 
কীভাবে তার পা কাটা গেছে সোনিয়া বলতে পারে না। শুধু জানে দুই বছর বয়সে ট্রেনে তার পা কাটা গেছে। সোনিয়া বলে, ছোটবেলা থেকেই এক পায়ে হাঁটতে শিখেছে সে। প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বাড়ির পাশেই ছিল। এ জন্য কষ্ট হয়নি। কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয় বাড়ি থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে হওয়ায় যাতায়াতে অনেক কষ্ট হয়। লাঠি ব্যবহার করলে শরীরের ভারসাম্য রাখা যায় না। ওই দিন পূর্ব ধোপাপাড়া গ্রামে সোনিয়ার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার মা রহিমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, অভাবের সংসার। তাই অন্যের বাড়িতে কাজ করেন।
 
সোনিয়ার দুর্ঘটনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একদিন সোনিয়াকে নিয়ে বড় জা মমতাজ বেগমের সঙ্গে তাঁরা নওগাঁর আত্রাইয়ে ননদের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছিলেন। মমতাজ দুই বছরের সোনিয়াকে কোলে নিয়ে নাটোরের নলডাঙ্গায় রেলসেতু পার হচ্ছিলেন। রহিমা ভয়ে সেতুতে না ওঠে নৌকায় নদী পার হন। এ সময় রেললাইন যাচাই করার জন্য একটি ইঞ্জিনের বগি সেতুর ওপর চলে আসে। ওই ইঞ্জিনের বগিতে কাটা পড়ে মমতাজ ঘটনাস্থলেই মারা যান। আর সোনিয়ার একটি পা কাটা পড়ে। পরে স্থানীয় লোকজন মেয়েটিকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এ ঘটনায় রেলওয়ের লোকেরা ক্ষতিপূরণ দেবে বলে একটা কাগজে স্বাক্ষর নেন। পরে আর খোঁজ নেননি। এখনো পায়ের ক্ষতস্থানে ঘা হয় সোনিয়ার। দুবেলা দুমুঠো ভাতের জোগাড়ের পর চিকিৎসার টাকা থাকে না। রহিমা বেগম বলেন, ‘ওর পড়াশোনার খুব আগ্রহ।’






তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলো, বংলাদেশ।
 

10 Most Powerful Women Politicians Around The World

Dalia Grybauskaite. (Rank on  Most Powerful Women list: 10)

Dalia Grybauskaitė, born 1 March 1956 is the current President of Lithuania, inaugurated on 12 July 2009. She had previously been Vice-Minister of Foreign Affairs, Finance Minister, and European Commissioner for Financial Programming and the Budget.
The list of top ten most authoritative women politicians cannot be concluded without naming the current President of Lithuania, Dalia Grybauskaite. Dalia might have worked part time to earn her Ph.D. in Economics but now she is the most influential lady in the nation and is referred to as the “Iron Lady” or the “Steel Magnolia”, Grybauskaitė is Lithuania’s first female head of state.


Tarja Halonen (Rank on 10 Most Powerful Women Politicians list: 9)

Tarja Kaarina Halonen, born 24 December 1943 was the 11th President of Finland, serving from 2000 to 2012, the first female to hold the office. Apart from politics, she also had a long and extensive career in trade unions and in various nongovernmental organisations. A law graduate from the University of Helsinki, she was active in student politics as well as served as the Social Affairs Secretary and Organization Secretary of the National Union of Students from 1969 to 1970. Tarja was also a lawyer in the Central Organisation of Finnish Trade Unions thus proving herself as one among the most powerful women politicians. During the time of her presidency she has been extremely popular among Finns: her approval ratings rose and reached a peak of 88% in December 2003. Ineligible to run in the 2012 presidential elections due to term limits, and she left office on 1 March 2012.


Laura Chinchilla (Rank on  Most Powerful Women list: 8)

Born on 28 March 1959, Laura Chinchilla Miranda is a Costa Rican politician is the present President of Costa Rica. She is the first female President of Costa Rica and is the sixth woman to be elected president of a Latin American country, she was sworn in as president of Costa Rica on May 8, 2010. A former Vice President, she was also the Public Security Minister and Justice Minister in the National Liberation Party. Environmental protection and sustainability is very essential for the Lady, and she continues Costa Rica’s level of management in these sectors.

Johanna Sigurdardottir (Rank on  Most Powerful Women list: 7)

Johanna Sigurdardottir, born 4 October 1942, is the current Prime Minister of Iceland. A former flight attendant, Johanna Sigurdardottir has entered politics 1978 and since then has won eight consecutive elections. The present Prime Minister of Iceland, she was also Iceland’s Minister of Social Affairs and Social Security. She has not only earned a named for being one of the most authoritative women politicians but also is the world’s first openly gay head of state. In 2009, Forbes listed her among the 100 Most Powerful Women in the world.


Sheikh Hasina Wajed (Rank on  Most Powerful Women list: 6)

Sheikh Hasina is a Bangladeshi politician and current Prime Minister of Bangladesh. She has been the President of the Bangladesh Awami League, a major political party, since 1981. Sheik Hasina Wajed was elected the Prime Minister of Bangladesh thrice – once in 1996, then in 2009 and again in 2014. The lady is still going strong and politically active despite losing 17 members of her family in an assassination. Hasina is also a member of the Council of Women World Leaders whose aim is to mobilize women leaders globally for collective action on issues of critical importance to women’s development.


Ellen Johnson Sirleaf (Rank on  Most Powerful Women list: 5)

Served as Liberia’s Minister of Finance in the late 1970s Ellen Johnson Sirleaf is the 24th and current President of Liberia,born 29 October 1938. Educated at the University of Wisconsin and at Harvard she was honoured with the Nobel Peace Prize in 2011 jointly with Leymah Gbowee of Liberia and Tawakel Karman of Yemen. The women were recognized “for their non-violent struggle for the safety of women and for women’s rights to full participation in peace-building work.”. Dedicating her life for the non violent struggle for the safety of women and for women’s right Ellen has been regarded one among the most powerful women politician.


Julia Gillard (Rank on  Most Powerful Women list: 4)

The first woman Prime Minister of Australia, Julia Eileen Gillard is the 27th and current Prime Minister of Australia, in office since 24 June 2010. Julia Eileen Gillard was born in Barry on 29 September 1961, but later migrated to Adelaide, Australia in 1966 with her family. Previous to her existing post she was also the minister for Education, Employment and Workplace Relations. The 2010 federal election saw the first hung parliament since the 1940 federal election. Though she respects all religion she herself does not believe in any.


Dilma Rousseff (Rank on  Most Powerful Women list: 3)

Dilma Vana Rousseff, the 36th and the present Brazilian president was born on 14 December 1947 and was raised in in an upper middle class household in Belo Horizonte. She is the first woman to hold the office. Prior to that, in 2005, she was also the first woman to become Chief of Staff to the President of Brazil. She was a socialist since her childhood and had also joined various left-wing and Marxist urban guerrilla groups to fight against the military dictatorship. An economist by education, Dilma is one of the most authoritative women politicians who once said “I would like parents who have daughters to look straight in their eyes and tell them: ‘Yes, a woman can,’”.


Cristina Fernández de Kirchner (Rank on  Most Powerful Women list: 2)

Born as Cristina Elisabet Fernández de Kirchner on 19 February 1953, commonly known as Cristina Fernández or Cristina Kirchner, Christina is the 55th and current President of Argentina and the widow of former President Néstor Kirchner. She is Argentina’s first elected female president from the nation to hold this post. A fashion icon for women and a notable advocate for human rights, poverty awareness and health improvement she is the most outspoken promoter of Argentina’s claim to sovereignty of the Falkland Islands.


Angela Merkel (Rank on  Most Powerful Women list: 1)

Angela Dorothea Merkel is a German Chancellor and the Chairwoman of the Christian Democratic Union (CDU). Merkel is the first female Chancellor of Germany, Born on 17 July 1954, Angela pursued doctorate degree in Physics before joining politics. Childless and twice married she won a seat in the Bundestag during the first post-reunification general election, in December 1990 and the very next year she was appointed as the Cabinet minister by Chancellor Helmut Kohl. A vital role player in the management of European financial crisis at international level, Angela Merkel is the most powerful women in the world of politics.





Source: Wonderlist.

 
Our Another Site : Right Way BD | Right Way BD FB Group | Right Way BD FB Page |