Assertion For Justice, Equality And Freedom.

Monday, April 28, 2014

নারী মানবাধিকার কর্মীদের সুরক্ষায় প্রস্তাব পাস

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মানবাধিকারবিষয়ক কমিটিতে গত বুধবার রাতে নারী মানবাধিকারকর্মীদের রক্ষায় একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। ভ্যাটিকান সিটি, ইরান, চীন, রাশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রস্তাবটি পাস হয়। ওই প্রস্তাবে নারী মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে যেকোনো সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নিন্দা জানাতে প্রতিটি দেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে জাতিসংঘের যেকোনো সংস্থায় নারী মানবাধিকারকর্মীদের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করতে আইন সংশোধনেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।

নরওয়ের নেতৃত্বে মানবাধিকারবিষয়ক কমিটি কয়েক মাস ধরে ওই প্রস্তাব তৈরি করে। আফ্রিকা ও মুসলিম বিশ্বের কয়েকটি দেশসহ ভ্যাটিকান সিটি, ইরান, রাশিয়া ও চীন প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেও শেষ পর্যন্ত তা পাস হয়। বিরোধিতাকারীরা দেশের ঐতিহ্য ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মানবাধিকারকর্মীদের অধিকার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রস্তাব পাসের পর নরওয়ে সরকারের পক্ষের প্রধান আলোচক গিয়ার এসজোবার্গ বলেন, ‘এই প্রস্তাব পাসের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি সুস্পষ্ট বার্তা পাঠানো হলো। ওই বার্তা হলো নারী মানবাধিকারকর্মীদের বিরু"ে কোনো অপরাধ একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’ 





এএফপি।

নাইজেরিয়ায় শতাধিক ছাত্রীকে অপহরণ

 
উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ার বোরনো রাজ্যের একটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে শতাধিক ছাত্রীকে অপহরণ করেছে সশস্ত্র ইসলামপন্থী বোকো হারাম জঙ্গিরা। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, অপহূত ছাত্রীর সংখ্যা অন্তত ২০০ হবে। ইমানুয়েল স্যাম নামের একজন স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত সোমবার জঙ্গিরা কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেলে চড়ে ওই বিদ্যালয়ে হামলা চালায়। বার্ষিক পরীক্ষা সামনে রেখে বিদ্যালয়ের অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। এর পরও সেনাদের কাবু করে আবাসিক হোস্টেলের ছাত্রীদের টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। তবে ঠিক কতজন ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি। 




এএফপি।

Tuesday, April 22, 2014

'নারীর অর্থনৈতিক অধিকার রক্ষায় সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন’

 নারীরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার পাশাপাশি অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় নারীরা, বিশেষ করে গ্রামীণ নারীরা, তাঁদের আয়ের অর্থ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না। শহরের অনেক নারীরই নিজের আয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই। এই বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন অর্থনীতিবিদ রুশিদান ইসলাম রহমান। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এ দেশের শ্রমবাজার, বেকারত্ব, দারিদ্র্য, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করছেন। প্রথম আলোর উদ্যোগে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুচিত্রা সরকার। তাই নীচে তুলে ধরা হলোঃ

প্রথম আলো: নারীর অর্থনৈতিক অধিকার কথাটার মানে কী?

রুশিদান ইসলাম রহমান: নারীর অর্থনৈতিক অধিকারের মধ্যে প্রধান হচ্ছে মানসম্মত উপার্জনের কাজে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ; তাঁর নিজস্ব আয়, সঞ্চয় ও সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার। সেই সঙ্গে পরিবারের অর্থনৈতিক বিষয়সমূহ, যেমন: সদস্যদের আয়-উপার্জনের কাজ, ব্যয় ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে মতামত দেওয়ার সুযোগও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। প্রকৃতপক্ষে নারী-পুরুষ সবারই এসব অধিকার থাকতে হবে।

প্রথম আলো: বাংলাদেশে এই অধিকার কি সুনিশ্চিত হয়েছে?

রুশিদান ইসলাম রহমান: পুরোপুরি সুনিশ্চিত না হলেও কিছুটা তো অগ্রগতি হয়েছে। যেমন উপার্জনের কাজে নারীর নিয়োগের হার বাড়ছে। বর্তমানে এটা ৩৬ শতাংশ, যা আগে ছিল ২৯ শতাংশ। ১৯৯০-এর দশকে ছিল এর অর্ধেক।

প্রথম আলো: নারীর নিজস্ব আয়ে তাঁর অধিকার নেই কেন? কোন মানসিকতা থেকে পুরুষ নারীর আয়ে হস্তক্ষেপ করে?

রুশিদান ইসলাম রহমান: পরিবারের পুরুষ সদস্যরা যে নারী সদস্যদের বঞ্চিত করে সব আয় নিজের হাতে নিচ্ছে বা নিতে চায়, সেটা তো অবশ্যই আমাদের দেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ও সমাজমানসের ফল। সেই সঙ্গে অবশ্য কর্মনিয়োজনের ধরনটিরও প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে, সেদিকেই প্রথম দৃষ্টি দিই। এ দেশে নারীর শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ বা কর্মনিয়োগের হার বাড়লেও আসলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নারী অংশগ্রহণ করছে পরিবারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে। সেখানে পুরুষই উদ্যোক্তা, কারণ তাঁরাই সম্পদ ও বিনিয়োগের মালিক। আর বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ বা মূলধনের মালিকানা যে পুরুষের হাতে তার পেছনে আমাদের পুরো সমাজব্যবস্থা ও মানসিকতার ভূমিকা রয়েছে যুগ যুগ ধরে। 

আর এসব পারিবারিক উদ্যোগে, তা সেটা কৃষিকাজ হোক বা পশুপালন, ক্ষুদ্র শিল্পই হোক, সেখানে ক্রয়-বিক্রয়ের কাজটি চলে পুরুষের হাত দিয়ে। কাজেই নারী যে শ্রমঘণ্টা এই কাজে দিচ্ছে সে অনুপাতে অর্থ তাঁর হাতে আসছে না। এমনকি নারী সব সময় জানতেও পারেন না এই উদ্যোগ থেকে কত আয় হচ্ছে, তা কীভাবে ব্যয় হচ্ছে বা বিনিয়োগ হচ্ছে। অন্যদিকে যখন নারী শ্রমিক মজুরি বা বেতনের কাজ করেন, সেখানেও তাঁর আয়ের ওপর অধিকার, ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নিশ্চিত নয়। পুরুষ সদস্যরা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সেটার ওপর কর্তৃত্ব করেন। এখানে মানসিকতার বিষয়টি তো আছেই। কিন্তু সঙ্গে আছে আনুষঙ্গিক কিছু দিক।

যেমন যে নারীর ১৬-১৭ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছে এবং স্বামী বা তাঁর পরিবারের নির্দেশে কোনো পোশাক কারখানায় কাজ নিয়েছে তিনি তো বাধ্য হবেনই বেতনের টাকাটা ওই পরিবারকে দিতে। নারীদের কম বয়সে বিয়ে হওয়াটা এখনো চলছে, এমনকি বিয়ের গড় বয়স কমছে। তারপর আছে পারিবারিক সহিংসতার ভীতি। বেতনের টাকা স্বামী বা শাশুড়ির হাতে তুলে না দিলে তাঁদের নির্যাতনের শিকার হতে হবে।

পরোক্ষভাবেও নারীর আয়ে তাঁর পুরো অধিকার থাকে না। যেমন উপার্জনরত স্বামী যদি তাঁর আয় সন্তানদের জন্য ব্যয় না করেন তাহলে তাঁর স্ত্রী বাধ্য হন নিজের আয় সন্তানদের জন্য ব্যয় করতে। এ ছাড়া পুরুষেরা পছন্দমতো উপার্জনকাজ না পেলে স্ত্রীর আয়ের ওপর নির্ভর করেন। অনেকে আবার মজুরিকাজে নিয়মিত যান না, স্ত্রীর উপার্জনের অংশ নিয়ে নানা বিনোদনে সময় ব্যয় করেন। এটা শুধু যে স্ত্রীর আয়ের বিষয়ে ঘটছে তা নয়। স্ত্রী যখন ক্ষুদ্রঋণ নিচ্ছে সেখানেও স্বামী এভাবে ঋণের অর্থ ব্যয় করছেন। অথচ কিস্তি পরিশোধের দায় বহন করছেন স্ত্রী।

প্রথম আলো: এর ফলে কি সামাজিকভাবে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন? নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে এটা কি কোনো বাধার সৃষ্টি করছে?

রুশিদান ইসলাম রহমান: এটা একেবারেই পরিষ্কার যে এই পরিস্থিতি নারীর সার্বিক ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক অধিকার অর্জনের পথে একটি বিশাল অন্তরায়। এতে করে ভবিষ্যতে নারীর কর্মনিয়োজন কমে যেতে পারে উৎসাহের অভাবে।

প্রথম আলো: আপনি কি মনে করেন সার্বিকভাবে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের দরকার আছে? কী ধরনের উদ্যোগ নারীর জীবনের এই প্রতিবন্ধকতা দূর করবে বলে আপনি মনে করেন?

রুশিদান ইসলাম রহমান: এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্য সম্পূর্ণ সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। শুধু স্বামীর ক্ষেত্রে নয়, স্বামী- পিতা-পরিবারের অন্যান্য পুরুষ এবং এমনকি অন্য নারীরা, যাঁরা নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, তাঁদেরও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। কাজেই উপার্জনরত নারীর ভূমিকাটিকে আরও সম্মানের, আরও কার্যকর করার জন্য সচেতনতা দরকার, মানসিকতা তৈরি করা দরকার। এখানে সমাজ, রাষ্ট্র ও অন্যান্য ব্যক্তি খাতের প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নতুন করে নারীর অধিকার শক্তিশালী করার মতো নিয়ম, কাঠামো ও সুবিধা তৈরি করতে হবে। যেমন একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নারীর জন্য সঞ্চয়ী হিসাব খোলা সহজ করতে হবে। শহরের যে এলাকাতে নারী শ্রমিক বেশি, সেখানে বুথ খোলা যেতে পারে, স্বল্প বেতনের নারী কর্মীরা যেন বেতন পেয়েই তা ব্যাংকে রাখতে পারেন। ক্ষুদ্রঋণের পুরো দায়ভার যেন নারীর ওপর চেপে না বসে, সে জন্য ক্ষুদ্রঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ম-নীতি তৈরি করতে হবে যেন নারী ঋণগ্রহীতা ঋণ বিনিয়োগ করতে পারেন, উপার্জনের টাকার ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।





তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলো, বংলাদেশ।

নিজ আয়ের ওপর অধিকার নেই নারীর

‘বেতনডা পাইতে দেরি হইলেও, হের আইতে দেরি অয় না। বেতন পাইছি খবর পাইলে দ্যাশ থাইক্যা আইয়্যা পড়ে। ঘর ভাড়া আর খাওনের কিছু ট্যাকা দিয়া বাকি ট্যাকা লইয়্যা যায়। মন চাইলেও আমি কোনো খরচ করতে পারি না।’ কথাগুলো বলছিলেন তাসলিমা আক্তার। তিনি রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। মোহাম্মদপুরের আদাবরে কয়েকজন মেয়ের সঙ্গে একটি ঘরে ভাড়া থাকেন। বাড়িভাড়া, খাওয়া আর যাতায়াত বাবদ তিন হাজার টাকা ওর হাতে দিয়ে বাকি টাকা ওর স্বামী নিয়ে নেন।

ফাতেমার বিয়ে হয়েছে এক বছর আগে। বিয়ের আগে থেকেই তিনি পোশাক কারখানায় কাজ করে আসছেন। বিয়ের আগে তাঁর রোজগারের টাকায় বাবার সংসার চলত। বিয়ের পরও বাবাকে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা দিতেন। কিন্তু একদিন শাশুড়ি বাবাকে টাকা দিতে নিষেধ করলেন। অথচ টাকা না দিলে বাবা অনেক সমস্যায় পড়বেন। ফাতেমা ওভারটাইম শুরু করলেন লুকিয়ে লুকিয়ে। আর বাড়িতে শাশুড়িকে বললেন, কাজের চাপ বেশি। মাস শেষে বেতনের টাকাটা শাশুড়ির হাতে দিলেন। শাশুড়ি বললেন বাকি টাকা কই। ফাতেমা তো অবাক। খানিকটা ভয়ও পেলেন। তারপর শাশুড়ি পাশের ঘরে নিয়ে দেয়ালে খড়িমাটির কিছু দাগ দেখালেন। বললেন, ‘তুমি যত দিন দেরি কইর‌্যা আইস তত দিন দাগায়া রাখছি। জানি, তুমি ওভারটাইম করছ। ওই ট্যাকা দেও। কোনো টাকা বাপের বাড়িতে দেওয়া যাইব না।’ নীলক্ষেতে পিঠা বিক্রি করেন সুফিয়া বেগম। প্রায় ১০ বছর ধরে এই কাজ করছেন। স্বামী পলাশী বাজারে কুলির কাজ করেন। সুফিয়া পিঠা বিক্রি শুরু করেন বিকেল থেকে। চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।

জিজ্ঞেস করলাম, ‘টাকা কী করেন? সুফিয়ার উত্তর, ‘আমি কী করুম? ট্যাকার হিসাব আমার স্বামীর কাছে। বিক্রি-বাট্টা শ্যাষ হইলে সব ট্যাকা হিসাব কইর‌্যা হের কাছে রাইখ্যা দেয়।’ ‘আপনি কোনো খরচ করেন না?’ ‘নাহ্, পিঠা বানানির চাল, গুড় তো সে-ই কিন্যা দেয়। আর সংসার খরচও হেই চালায়। আমি ট্যাকা দিয়া কী করুম?’ যখন তাঁর সঙ্গে কথা বলছিলাম, স্বামী রফিক তাঁর পাশেই বসে ছিলেন। জিজ্ঞেস করলাম, আপনার স্ত্রী আয় করছেন, কিন্তু আপনি তাঁর আয়, তাঁর নিজের মতো খরচ করতে দিচ্ছেন না কেন? ‘ও ট্যাকা দিয়া কী করব? যা লাগে তা তো আমিই কিন্যা দেই। কাম করতাছে আমার সংসারের লাইগ্যা। আমি যদি বেশি রোজগার করতে পারতাম, তহন তো ওরে কাম করতে দিতাম না।’

একটি সরকারি ব্যাংকে কর্মরত আছেন আফিয়া ইসলাম (ছদ্ম নাম)। তাঁর স্বামীও অন্য একটি ব্যাংকে কাজ করেন। আফিয়ার অভিজ্ঞতাও প্রায় একই রকম। তিনি সংসারের জন্য দৈনন্দিন বাজারসহ আরও কিছু খরচ করেন। তিনি কোথায় কত টাকা খরচ করলেন, সে হিসাবটা পুঙ্খানুপুঙ্খ নেন স্বামী। কোনো মাসে যদি মাকে একটা শাড়ি বা বাবার বাড়ির জন্য কিছু কেনেন, তখন সংসারে অশান্তি শুরু হয়। স্বামী অনুযোগ করেন, কী দরকার ছিল এই সব খরচের। বাড়তি খরচ না করে টাকা সংসারের জন্য রাখা উচিত, এমন অনেক কথা শোনান স্বামী। তাই মন চাইলেও সংসারে অশান্তির ভয়ে বাড়তি কোনো খরচ করেন না। নিজের পছন্দমতো একটি শাড়িও তিনি কিনতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘আয় করি ঠিকই, কিন্তু মনে হয় এই আয়ে আমার কোনো অধিকার নেই। আমি শ্রমিক মাত্র। কিন্তু আমার স্বামী কিন্তু তাঁর আয়ের কোনো হিসাব আমাকে দেবে, এটা কল্পনাও করতে পারি না।’ চারজন নারী। চারজনেরই নিজস্ব আয় আছে। অথচ তাঁদের কারোরই নিজস্ব আয়ের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। শুধু তাঁরাই নন। এই রকম চিত্র দেশের অনেক পরিবারেই রয়েছে।

যেসব নারী আয় করেন তাঁদের প্রায় ২৪ শতাংশেরই নিজের আয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন (ভিএডব্লিউ) সার্ভে ২০১১ শীর্ষক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে গ্রামের তুলনায় শহুরে নারীদের নিজেদের আয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ কিছুটা বেশি আছে। এ জরিপে আরও দেখা গেছে, ৮৫ শতাংশ নারীর উপার্জনের স্বাধীনতাও নেই। মাত্র ১৫ শতাংশ নারী নিজের ইচ্ছায় উপার্জনের স্বাধীনতা পান। আবার যাঁরা নারীকে উপার্জন করতে দেন, তাঁদের মধ্যে ৯৩.১৯ শতাংশ স্ত্রীর উপার্জন করার বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখেন না।
 
আয়ের ওপর স্বামী বা শাশুড়ির হস্তক্ষেপের ফলে অনেক নারী কাজ করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। এঁদেরই একজন সাদিয়া চৌধুরী। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন তিনি। প্রথম প্রথম নিজের রোজগার নিজে ইচ্ছেমতো খরচ করতে পেরেছেন। কিন্তু কয়েক দিন না যেতেই স্বামী সব টাকা তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বলেন। যদিও স্বামীর আয় ভালো। একপর্যায়ে সাদিয়া চাকরি ছেড়ে দেন। তাঁর ভাষায়, ‘আমি যদি আমার নিজের টাকা খরচই না করতে পারব তাহলে আর চাকরি করা কেন?’

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুরুষ ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি এ বিষয়টির মধ্যে কোনো অন্যায় দেখি না। আমার স্ত্রী আমার ঘরের কাজ না করে, ঘরের লোকজনকে সময় না দিয়ে বাইরে গিয়ে উপার্জন করছে। এ জন্য তাকে অবশ্যই আমার সংসারে টাকা দিতে হবে। আর টাকাই যদি না দেয় তাহলে আমি স্ত্রীকে চাকরিই বা করতে দেব কেন? আর আমরা পুরুষেরা আমাদের আয়ের টাকাও তো আমরা সংসারে খরচ করি। তাহলে নারীরা কেন করবে না?’ এ বিষয়ে মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম বলেন, ‘নারীর উপার্জিত অর্থে পুরুষের হস্তক্ষেপ লিঙ্গীয় বৈষম্যের প্রতিফলন। পুরুষ নারীকে কখনো এককভাবে একজন ব্যক্তি হিসেবে দেখে না। তারা ভাবে পরিবারের প্রয়োজনেই নারী আয় করেন, সুতরাং পরিবারের সবকিছু দেখভালের দায়িত্ব যেহেতু পুরুষের, তাই নারীর আয়ের ওপরও পুরুষের পুরোপুরি কর্তৃত্ব থাকা উচিত। পুরুষের এই মানসিকতা, মূল্যবোধ নারীকে আর্থিক ও মানসিকভাবে পুরুষের ওপর নির্ভরশীল করে রাখে। আর এটাই নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে। আর এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হলে নারী-পুরুষ উভয়ের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি।’

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘নারীরা আয় করছে। অথচ সেই অর্থ খরচের স্বাধীনতা তার নেই। এটা দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যা। পারিবারিক মূল্যবোধে সমস্যা রয়েছে। আর এসব সমস্যা দূর করতে হলে নারীকেই এগিয়ে আসতে হবে। নারীকে আরও দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হবে। তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে। নারীকে শোষণ-নির্যাতনের হাত থেকে মুক্ত হতে হলে বাইরের কাজেও পুরুষের সঙ্গে সমান তালে কাজ করতে হবে। দেশকে, দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে নারীকেও সব ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। অনেক বেশি সংখ্যক নারীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে হবে। যদিও দেখা যায় গার্মেন্টস সেক্টরে নারী শ্রমিকের হার বেশি। এ শিল্পের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশই নারী। এটা আশার কথা। কিন্তু অন্য ক্ষেত্রগুলোতে নারীর অংশগ্রহণের হার খুবই কম। এটা বাড়াতে হবে। প্রত্যেক মানুষকে উন্নতির শিখরে পৌছাতে হলে দক্ষতা, সততা, সময়জ্ঞান ও পরিবার- সমাজকে দেয়া প্রতিশ্রুতি- এই চারটি বিষয়কে ধারণ করতে হয়। নারীকেও এই চারটি বিষয় নিজের মধ্যে ধারণ করেই এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই নারীর অগ্রগতি সুনিশ্চিত।’



তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলো, বাংলাদেশ

 

 
Our Another Site : Right Way BD | Right Way BD FB Group | Right Way BD FB Page |