Assertion For Justice, Equality And Freedom.

Tuesday, April 30, 2013

মৃত্যুর মিছিলে একজন শাহীনা


নয়তলা ভবনটি মাথার ওপর পড়ার পরও মরতে মরতে বেঁচে ছিলেন শাহীনা আক্তার। ধসের ৮০ ঘণ্টা পর তাঁকে জীবিত খুঁজে পান উদ্ধারকারী কিছু তরুণ। এর পরের ৩০ ঘণ্টা তাঁকে বাঁচানোর মরণপণ লড়াই করেন স্বেচ্ছাসেবক এবং সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয় অপ্রত্যাশিত অগ্নিকাণ্ড। মরতে মরতে বেঁচে থাকা সেই শাহীনা বাঁচতে বাঁচতেই মারা গেলেন। গতকাল সোমবার বিকেলে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকারীদের ধারণা, বয়স তাঁর ২৫ থেকে ৩০-এর মধ্যে। শত শত মৃত্যুর ভিড়ে জীবনসংগ্রামী এই নারীর মৃত্যু কাঁদিয়েছে সবাইকে। শোকাবহ পরিবেশের মধ্যে তাঁর লাশ নিয়ে চলেছে টানাহেঁচড়া। ধ্বংসস্তূপের ভেতরে থাকার সময় উদ্ধারকারীদের শাহীনা বলেছিলেন, তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়ায়। গতকাল তাঁর বাবা মোতালেব গোলদার লাশ শনাক্ত করে জানান, তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়। শাহীনা ও তাঁর বাবার বক্তব্যে ঠিকানার গরমিলের কারণে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ চার ঘণ্টা পর লাশ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। এই চার ঘণ্টা লাশটি রাখা হয় অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের বারান্দায়। সেখানেও শাহীনাকে একনজর দেখতে আসেন অনেকে।


শাহীনাকে উদ্ধার করতে গিয়ে রড কাটার সময় গত রোববার রাত ১১টার দিকে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে আগুন লেগে যায়। এরপর গতকাল বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর বিকেল চারটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করতে যান। কিন্তু শাহীনা তখন মৃত। উদ্ধারের পর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা তাঁর লাশ ঘিরে গোল হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ান। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন কয়েকজন। শাহীনাকে উদ্ধারের জন্য জীবন বাজি রেখেছিলেন ওশান বয়েজ নামের তরুণদের একটি সংগঠনের কর্মীরা। সেই তরুণদেরও লাশ দেখতে খবর দেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। মৃত মুখ দেখে তাঁরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শাহীনার লাশ ধ্বংসস্তূপের ওপর থেকে নিচে নামানো হলে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় মানুষ ও গণমাধ্যমের কর্মীরাও চোখের পানি আটকাতে পারেননি।

পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশটি অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে শাহীনার ফুফু দাবিদার আকলিমা বেগম লাশ দেখেই চিৎকার করে বলেন, ‘পাইছি, আমার মারে পাইছি।’ এরপর শাহীনার বাবা মোতালেব লাশ শনাক্ত করেন। এ সময় সাভার থানা পুলিশের সদস্যরা নিয়ম অনুযায়ী নিহত ব্যক্তির নাম-ঠিকানা সংগ্রহের সময়ই ঝামেলা বাধে। মোতালেব বলেন, তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নিশানবাড়িয়া গ্রামে। কিন্তু পুলিশের কর্মকতারা বলেন, মৃত্যুর আগে শাহীনা গণমাধ্যম ও উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় জানিয়েছিলেন, তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়ায়। মোতালেব দাবি করেন, শাহীনার স্বামীর বাড়ি কুষ্টিয়ায়। স্বামীর নাম আসানুর রহমান। শাহীনার দেড় বছরের একটি ছেলে রয়েছে। এরপর শুরু হয় শাহীনার স্বজনদের সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের দেনদরবার। সাভার থানার উপপরিদর্শক মো. মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, শাহীনার মৃত্যুর আগের বক্তব্য ও তাঁর বাবা দাবিদার ব্যক্তির বক্তব্যে গরমিল রয়েছে। এর আগে এক ব্যক্তি তিনটি লাশ তাঁর আত্মীয়ের বলে দাবি করে দাফন খরচ বাবদ ৬০ হাজার টাকা বুঝে নিয়ে লাশ রেখে পালিয়ে যান। এ জন্য তাঁরা সাবধানতা অবলম্বন করছেন। সাভার উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া হক বলেন, যেহেতু বক্তব্যে গরমিল রয়েছে, তাই সাবধানতা হিসেবে ডিএনএ টেস্টের কথা চিন্তা করেছিলেন তাঁরা।

তবে শাহীনার বাবা মোতালেব গোলদার বলেন, তাঁর বাঁ হাতের তর্জনী আঙুলে সাপ কামড়েছিল। সেই আঙুল পরে বাঁকা হয়ে যায়। মাঠে উপস্থিত রোভার স্কাউটের কর্মীরা পরীক্ষা করে দেখেন, আসলেই ওই আঙুল বাঁকা। মোতালেব গোলদার গেন্ডার একটি বাড়িতে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করেন। সেই বাড়ির বাসিন্দা মেহনাজ তাবাসসুম বলেন, টিভিতে শাহীনাকে দেখে তাঁরাই মোতালেবকে জানান এটি তাঁর মেয়ে। এরপর তাঁরা লাশ নিতে এসেছেন। একপর্যায়ে পুলিশের এসআই মোস্তফা শাহীনার বাবাকে বলেন, ‘আপনি একটা বাটপার। আপনাকে জুতা দিয়ে মারা উচিত।’ এ কথা শুনেই উপস্থিত জনতা খেপে উঠে ওই পুলিশের ওপর চড়াও হন। পরে রোভার স্কাউটের সদস্যরা এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। রাত পৌনে ১০টার দিকে শাহীনার লাশ তাঁর বাবা মোতালেব গোলদারের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়।

শাহীনাকে উদ্ধার করতে শনিবার থেকেই চেষ্টা করছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ও স্বনিয়োজিত উদ্ধারকর্মী রকিবুল মুরাদ। গতকাল বিকেলে অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে শাহীনার লাশ দেখতে এসে মুরাদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, শনিবার মাগরিবের নামাজের সময় কয়েকজন তরুণ তাঁকে শাহীনার বেঁচে থাকার কথা জানান। অষ্টম তলা থেকে ছাদ ফুটো করে তৃতীয় তলায় নামেন তিনি। এরপর সরু একটা সুড়ঙ্গ দিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর দুই ইঞ্চির মতো ফাঁকা দুটি বিমের পেছনে শাহীনাসহ চারজন জীবিত দেখতে পান। তখন শাহীনা ও কল্পনা নামের দুজনের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। বিম দুটো এমনভাবে সামনে পড়েছিল যে সামান্য ফাঁকা থাকলেও তা দিয়ে একটা পানির বোতলও ঢোকে না। পানির বোতলের মধ্যে গ্লুকোজ মিশিয়ে পাইপ দিয়ে তাঁদের পান করতে দেওয়া হয়। কখনো দেওয়া হয় স্যালাইন। তবে মাঝেমধ্যেই তাঁরা সাদা পানি পান করতে চাইছিলেন।

রকিবুল মুরাদ জানান, পানীয় ছাড়াও তাঁদের জন্য অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়। এসব দিয়ে বাঁচিয়ে রেখে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও তরুণেরা মিলে বিম কেটে তাঁদের বের করার রাস্তা তৈরি করছিলেন। কিন্তু সরু সুড়ঙ্গে শুয়ে শুয়ে বেশি কাটা যাচ্ছিল না। রোববার বিকেলেও শাহীনার সঙ্গে কথা হয় তাঁর। টাইলস কাটার সময় খণ্ডিত অংশবিশেষ হাত দিয়ে সরিয়ে সাহায্য করেছিলেন ওই নারী। এভাবে উদ্ধার-প্রক্রিয়া চলার মধ্যে বৈদ্যুতিক রড কার্টার ব্যবহার করা হয়। রাত ১১টার দিকে রড কাটার সময় স্ফুলিঙ্গ থেকে আবদুল আজিজ নামের এক স্বেচ্ছাকর্মীর গায়ে আগুন লেগে যায়। সবাই কোনো রকমে বের হয়ে আসেন। আজিজ পুড়ে যান। এরপর পাওয়া যায় শাহীনার লাশ।

Saturday, April 27, 2013

৭০ ঘণ্টা পর উদ্ধার হওয়া সালমা বললেন, "বাইচা থাকলে কেমন লাগব বুঝতাছি না"

‘কবরের অন্ধকারের কথা হুনছি। কবরের আজাবের কথাও হুনছি। গত চার দিন নিজে তা বুঝতে পারছি। মরি যাওয়ার কোনো ভয় এখন আর নাই। কিন্তু বাইচা থাকলে কেমন লাগব বুঝতাছি না।’  সাভার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) বিছানায় শুয়ে এভাবেই নিজের অনুভূতি জানালেন মানিকগঞ্জের সালমা আক্তার। প্রায় ৭০ ঘণ্টা পর গতকাল সকাল সাতটার দিকে সালমাকে উদ্ধার করা হয় ধসে পড়া ভবনের চতুর্থ তলা থেকে। উদ্ধারের সময় তাঁর জ্ঞান ছিল না।  সিএমএইচে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ২২ বছর বয়সী সালমার কথা হয় গতকাল দুপুর ১২টার দিকে। সালমার মতো জীবিত উদ্ধার হওয়া প্রায় ১০৭ জনের চিকিৎসা চলছে সিএমএইচে। তাঁরা ৪০ থেকে ৭৫ ঘণ্টা পর্যন্ত ধসে পড়া ভবনের অন্ধকার মৃত্যুপুরীতে আটকে ছিলেন।
 
চিকিৎসাধীন একাধিক ব্যক্তি প্রথম আলোকে তাঁদের বিভীষিকাময় সময়ের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। বলেছেন, অন্ধকারে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে মৃত্যুর ভয়ে অস্থির হয়ে উঠতেন। সে জন্য সব সময় চোখ বন্ধ করে থাকতেন। ঘুমানোর ভান করতেন। মাঝেমধ্যে ঘুমিয়েও পড়তেন।  সালমা বলেন, মড়মড় শব্দ হওয়ার পরই সবাই জীবন বাঁচাতে সিঁড়ির দিকে দৌড় শুরু করেন। কিন্তু মুহূর্তে ছাদ মাথার ওপরে চেপে আসতে দেখে দুই পাশে থাকা মেশিনের মাঝখানে মেঝেতে বসে পড়েন তিনি। ছাদ ধসে উঁচু মেশিনে পড়ে ক্ষণিকের জন্য আটকে থাকে। পরক্ষণেই ছাদ আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামতে নামতে একপর্যায়ে ফ্লোরের এক হাত ওপরে এসে আটকে থাকে। সেখানে তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েকজন কর্মী ছিলেন। সালমা বলেন, অল্প একটু জায়াগায় সাত-আটজন একজনের ওপর আরেকজন শুয়ে ছিলেন। অন্ধকারে কারও মুখ দেখা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় একজন সহকর্মী মারা যান। মারা যাওয়ার সময় তিনি যন্ত্রণায় সালমার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলেন বলে জানান তিনি। চতুর্থ তলায় ছিলেন গাইবান্ধার মোমেনা বেগম। বয়স ২৩-২৪ বছর হবে। তিনি জানান, তাঁর ওপর আরও কয়েকজন পড়েছিলেন। জীবিত না মৃত কিছুই বুঝতে পারেননি। মোমেনাকেও গতকাল সকালে উদ্ধার করা হয়।
 
নাসরীন আক্তারকে উদ্ধার করা হয় গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। তিনিও চতুর্থ তলায় ছিলেন। গতকাল দুপুরে হাসপাতালে গেলে তিনি এলোমেলো কথা বলছিলেন। কোনো কথাই শেষ করতে পারছিলেন না। হাতে, মুখে ও শরীরে আঁচড়ের চিহ্ন। ধারণা করা হচ্ছে, মেশিনের লোহা বা রডের আঁচড়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গা কেটে-ছিঁড়ে গেছে। জানা গেল, তিনি একটি কলামের পাশে আটকে ছিলেন। তাঁর ওপর পড়ে ছিলেন কয়েকজন। নাসরীনকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।  নাসরীনের ভাই সিরাজুম মনির জানান, নাসরীনের স্বামী নান্নু মিয়াও ওই ভবনে কাজ করতেন। ধসে পড়ার আগে তিনি চা খেতে বের হয়ে বেঁচে যান। তাঁর দুটি সন্তান আছে।  নাসরীনের সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে আরেকজনকে। তাঁর অবস্থা খুবই গুরুতর। তাঁকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে রাখা হয়েছে আইসিইউতে।
 
সাভার সিএমএইচের প্রধান লেফটেনেন্ট কর্নেল শরীফ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, নাসরীন মারাত্মক আঘাত না পেলেও তাঁর ওপর লাশ পড়ে থাকার কারণে মানসিকভাবে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। উদ্ধার হওয়া অনেকের মধ্যে এমন সমস্যা দেখা যাচ্ছে। তাঁদের চিকিৎসায় মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ আনা হচ্ছে। উদ্ধার হওয়া কয়েকজন মারাত্মক চাপা পড়ায় তাঁদের শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।  গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিএমএইচে আনা হয় চম্পা নামে একজনকে। তাঁকে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে দেখা গেছে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় চোখগুলো বড় হয়ে যাচ্ছে। লাশের আশপাশে ছিলেন বলে তখনো তাঁর শরীর থেকে পচা লাশের দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল।
 
চিকিৎসকেরা জানান, চম্পা কথা বলতে পারছেন না। অনেক কষ্টে নামটা শুধু বলতে পেরেছেন। বেলা দেড়টা পর্যন্ত সেখানে থাকা অবস্থায় আরও দুজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় সিএমএইচে আনতে দেখা গেছে। ভবন ধসে পড়ার পর জীবিত উদ্ধার ৩৬৯ জনকে সাভার সিএমএইচে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৮ জন পথে এবং দুজন চিকিৎসধীন অবস্থায় মারা যান। ৩২ জনকে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।  সিলেটের সুমিত্রা জানান, আটকে থাকা অবস্থায় তাঁর জ্ঞান ছিল। সারাক্ষণ মৃত্যু ছাড়া অন্য কিছুই ভাবতে পারেননি। উদ্ধারকর্মীরা বের করে আলোতে আনার পর তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।
 
ফরিদপুরের রকিবুল হাসান উদ্ধার হন গতকাল বেলা ১১টার দিকে। বয়স বড়জোর ২০ হবে। তাঁকে মোটামুটি সুস্থই দেখা গেছে। তিনি জানান, তাঁর পাশে অণিমা নামে একটি মেয়ে ছিল। ভবনধসের পর মেয়েটি একটি কার্টুনের নিচে চাপা পড়েন। কার্টুন ছিঁড়ে ছিঁড়ে তাঁর মাথা বের করা হয়। দুজনকে একসঙ্গেই উদ্ধার করা হয়।  সকালে উদ্ধার হওয়া আবদুর রউফ (৪০) পুরোপুরি সুস্থ। তিনি জানান, মেশিন এবং কলামের মাঝখানে এক জায়গায় তিনি আটকে ছিলেন। প্রচণ্ড গরমের কারণে তিনি পাশে থাকা কার্টুন ছিঁড়ে নিজেকে বাতাস করতে পেরেছেন। ঘুমিয়েছেনও সময়ে সময়ে।

Sunday, April 21, 2013

যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করে পাঁচ মাস বাড়িছাড়া

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ডামোশ গ্রামে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় ছয় অভিভাবককে মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। তাঁরা পাঁচ মাস ধরে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।  ওই ছয় অভিভাবক হলেন ডামোশ গ্রামের বোরহান উদ্দিন (৫১), আমিরুল ইসলাম (৪৫), মো. রশিদ (৩৭), মানিক উদ্দিন (২৯), মিজানুর রহমান (৫২) ও আতিয়ার রহমান (৪৫)। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ প্রভাবিত হয়ে অভিযোগপত্র, অপরাধীদের রক্ষা ও পাল্টা মামলা দিয়ে তাঁদের হয়রানি করছে। জানা গেছে, ডামোশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছয় ছাত্রী সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিতে গত বছরের ২৮ নভেম্বর বেলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল। এ সময় বেলগাছি গ্রামের তরিকুল ইসলামসহ পাঁচ-ছয়জন তাদের টানাহেঁচড়া, জাপটে ধরা ও দুজনের জামা ছিঁড়ে ফেলে। জানতে পেরে বিক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা ছাত্রীদের উদ্ধার ও তরিকুলকে পিটুনি দেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনজুমান আরা উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের পরিদর্শক আবু তাহের ও শিক্ষক আবুল কাশেমকে ঘটনাস্থলে পাঠান। তাঁরা পুলিশি পাহারায় ছাত্রীদের বাড়ি থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে আসেন ও এক ঘণ্টা দেরিতে পরীক্ষার কক্ষে বসান।
 
অভিভাবকদের অভিযোগ, অভিযুক্ত লোকদের শাস্তি না দিয়ে ইউএনও বেলগাছি ইউপির চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলামকে বিষয়টি মীমাংসার দায়িত্ব দেন। চেয়ারম্যানের পরামর্শে অভিভাবকেরা মামলা না করলেও তরিকুলের বাবা আহার আলী ৫ ডিসেম্বর ছয় অভিভাবকের নামে হত্যাচেষ্টা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে দ্রুত বিচার আইনে আদালতে মামলা করেন। আলমডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মালেক ঘটনাস্থলে না গিয়েই গত ২ জানুয়ারি অভিযোগপত্র দেন। ১৬ জানুয়ারি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন আলমডাঙ্গার ইউএনওর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেলগাছি ইউপির চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম দুই পক্ষকে নিয়ে সমঝোতার উদ্যোগের কথা জানালে তিনি সম্মতি দেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এক পক্ষ আদালতে মামলা করে।
 
অভিভাবকদের পক্ষে সাদ আহম্মেদ ২০ জানুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় তরিকুল (২০), জাহাঙ্গীর আলম (২৪), মনজু (২২), আনু (২১), আমির (২২) ও লিটনকে (২০) আসামি করা হয়। কিন্তু চার মাসেও আসামিদের গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। পরদিন বেলগাছি গ্রামের রবগুল হোসেন অভিভাবকদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন।  জানতে চাইলে সব কটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল মালেক জানান, দুটি পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি তিনটি মামলা হয়েছিল। তবে উভয় পক্ষের মধ্যে আপস হয়ে গেছে। তদন্তে প্রভাবিত হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি দাবি করেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজ নিয়ে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

জীবন থেকে ছুটি নিল খাদিজা

ইচ্ছার বিরুদ্ধে বছর দেড়েক আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরগঙ্গা গ্রামের খাদিজাতুত তাহিরা। তখন সে সপ্তম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে মাত্র। বিয়ের পরদিনই তাকে শ্বশুরবাড়ি যেতে হয়। এরপর কেটে যায় ছয়টি মাস। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে বাবার বাড়ি যেতে দেয়নি।  এ সময়ের মধ্যে স্বামী সোহাগ শরীফ ৫০ হাজার টাকা ও একটি মোটরসাইকেল যৌতুক দাবি করেন খাদিজার বাবার কাছে। সোহাগ শরীফ বরগুনার আমতলী উপজেলার রাওঘা গ্রামের মো. নসু শরীফের ছেলে। অপরিণত বয়সে বিয়েটা যেমন মেনে নিতে পারেনি খাদিজা, তেমনি স্বামীর যৌতুক চাওয়াটাকেও স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়নি। প্রতিবাদ করায় শারীরিকভাবে কয়েক দফা লাঞ্ছিত হতে হয় তাকে।
 

গত বছরের মে মাসের শেষ দিকে বাবার বাড়িতে আসার সুযোগ পায় খাদিজা। তার বাবা একজন কৃষক। বাবার বাড়ি ফিরে সে আবার যোগাযোগ করে বড় বাইশদিয়া এ হাকিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়েরই ছাত্রী ছিল সে। বছরের প্রায় অর্ধেক সময় চলে গেলেও অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে আবার পড়াশোনা শুরু করে মেয়েটি। ২০১২ সালের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৪ দশমিক ৫৮ পায় সে। এরপর একই বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়।  গত শুক্রবার রাতে সোহাগ শরীফের বড় ভাই জাফর শরীফ চরগঙ্গা গ্রামে গিয়ে এলাকার লোকজনকে ধরে সমঝোতার মাধ্যমে খাদিজাকে তাঁদের বাড়িতে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তীব্র প্রতিবাদ করে খাদিজা। তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না দেখে গত শনিবার রাতে ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে।
 
এ হাকিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহতাব হোসেন জানান, খাদিজা অনেক মেধাবী ছিল। খাদিজার পড়ার টেবিলে রাখা একটি ডায়েরির পাতা উল্টিয়ে দেখা গেল সেখানে লেখা, ‘কর্মজীবন: আ. মজিদ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিতে হবে। পরে বিএড করতে হবে। এরপর গ্রামের এই বিদ্যালয়েই শিক্ষকতা...।’  খাদিজার মা হেলেনা বেগম বলেন, ‘আমরা ওরে শ্বশুরবাড়ি দিতামই না। ও ক্যান যে এভাবে চইল্যা গ্যাল, জানি না!’

Friday, April 19, 2013

সাগর সেচে মুক্তা এনেছেন শরীফা


হাঁটার জন্য দুটি পা নেই। হাত দুটি ভালো ছিল। আগুন লেগে তারও একটি পুড়ে গেছে। লেখাপড়া শেখার আগ্রহ ছিল। বই-খাতা ছিল না। কাঠি দিয়ে মাটিতে বর্ণমালা লিখতে শিখেছিল। অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। একসময় বাবা-মা মারা যান। তবু মনোবল ফুরায় না তাঁর। লেখাপড়া শিখে নিজেই অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন। পেয়ে যান দেশের প্রথম প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তা পুরস্কার।
 
ঠিক সাগর সেচে মুক্তা আনার মতো সাহস দেখানো মেয়েটির নাম নার্গিস আক্তার ওরফে শরীফা। রাজশাহী নগরের রামচন্দ্রপুর মহল্লায় এক দরিদ্র পরিবারে ১৯৮৩ সালে শরীফার জন্ম। বাবা শরিফুল ইসলাম ও মা মসিয়া বেগম। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে শরীফা সবার ছোট। তাঁর সবার আদর পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিবন্ধিতার কারণে সবার বোঝা হয়ে যান। তাঁর হাঁটুর নিচ থেকে পা দুটি পেছনের দিকে ভাঁজ করা। খেলার সাথিরা তাঁর এ অচল দুটি পা ধরে টানত। আর মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে যেতেন তিনি। মাটিতে কাঠি দিয়ে বর্ণমালা লেখার চেষ্টা করতে দেখে মায়ের পীড়াপীড়িতে বাবা বই-খাতা কিনে দিয়েছিলেন। এক প্রতিবেশীর বাড়িতে সারা দিনের জন্য মা রেখে আসতেন তাঁকে। সেই বাড়িতে ছিল ‘পদ্মমুনি হস্তশিল্প’ নামের একটি কুটিরশিল্পের প্রতিষ্ঠান। সেখানে মাটি দিয়ে তৈরি করা হতো বিভিন্ন ধরনের ভাস্কর্য ও ঘর সাজানোর শোপিস। সেগুলো তৈরি করা দেখে শেখার চেষ্টা করতেন শরীফা। একসময় কিছু কাজ শিখেও ফেলেন। সেখান থেকে সামান্য যা আয় হতো, তা দিয়ে বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। 

এভাবেই ১৯৯৮ সালে এসএসসি পাস করেন শরীফা। কিন্তু সে বছর কলেজে ভর্তির আগেই বাবা মারা যান। ভাইয়েরা নিজ নিজ পরিবার নিয়ে আলাদা হয়ে যান। বন্ধ হয়ে যায় শরীফার কলেজে পড়ার স্বপ্ন। তবে এবার শুরু হয় নতুন করে বেঁচে থাকার সংগ্রাম। বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন, কুটিরশিল্পের কাজ এবং সেলাই মেশিনে ছোটখাটো সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন তিনি। এ ছাড়া বসতবাড়ির চারপাশে শাকসবজি চাষ করতে থাকেন। তা দিয়েই কোনোমতে দিন চলে যেত। এরই মধ্যে ২০০০ সালে মারা যান শরীফার মা। এবার শরীফা যেন পৃথিবীতে একেবারে নিঃসঙ্গ।  একসময় জানতে পারেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে সনদ ও ঋণ দেওয়া হয়। তিনি সমাজসেবায় যোগাযোগ করে নিজের সম্পর্কে জানান এবং পাঁচ হাজার টাকা ঋণ পান। তা দিয়ে দুটি ভালো জাতের ছাগল কেনেন। তা ছাড়া তাঁর মায়ের রেখে যাওয়া দুটি গাভি ছিল। একটি গাভির বাচ্চা হলে বাড়ি বাড়ি দুধ বিক্রি করে আস্তে আস্তে ঋণ পরিশোধ করতে থাকেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে পরিচয় হয় আবদুর রহিম ওরফে মনা নামের এক যুবকের সঙ্গে। পরিচয় গড়ায় পরিণয়ে। সুন্দর চেহারার এই মানুষটির মনটা আরও সুন্দর। ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তাঁদের বিয়ে হয়।
 
২০০৬ সালের কথা। শরীফ-রহিম দুজনে খুব ছোট পরিসরে একটি উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নেন। নাম দেন ‘এল এস কেমিক্যাল কোম্পানি’। এ জন্য তাঁরা পুঁজির সন্ধানে নেমে পড়েন। গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি সব বিক্রি করে দেন। তাতে কিছু হয়। কিন্তু আরও টাকার প্রয়োজন। ঋণের কথা ভাবেন। এ জন্য ব্যাংকে ধরনা দেন। সিঁড়ি বেয়ে ব্যাংকের ওপর তলায় ওঠা-নামা করতে করতে শরীফার দুই হাঁটুতে ফোসকা পড়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, সিঁড়ি ভাঙতে গিয়ে তাঁর গর্ভের প্রথম সন্তানটিও গর্ভেই মারা যায়। পরে সেই ঋণও মেলেনি।   অনেক কিছু করে অবশেষে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ পান। সঙ্গে স্বামীও কিছু টাকা দেন। সব মিলিয়ে পুঁজি দাঁড়ায় দুই লাখ টাকা। ২০০৬ সালে খুব ছোট পরিসরে তাঁর কারখানার যাত্রা শুরু হয়। পরের বছরই সরকারি অনুমোদন পান।  কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়। তবে মালিক নন, শরীফা প্রথম ব্যবসা শুরু করেন শ্রমিক হয়ে। পণ্য নিয়ে বাজারে বাজারে বিক্রি করতেন। এভাবে দূর-দূরান্তে তাঁর পণ্যের বাজার তৈরি করেন। কখনো ক্লান্তিকে প্রশ্রয় দেননি। একটু একটু করে টাকা জমিয়ে মেশিন কেনেন। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী যন্ত্রপাতি সংগ্রহ হয়নি। ব্যবসা হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগোচ্ছিল, ঠিক তখনই তাঁর জীবনে নেমে আসে আরেকটি বিপর্যয়।   

২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে রান্না করতে গিয়ে গায়ে আগুন লেগে সারা শরীর পুড়ে যায়। স্বামী তাঁকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেন। ঢাকায় দুই মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন। এতে বাঁ হাতটি অকেজো হয়ে যায়। তবু তিনি থেমে যাননি। ডান হাত দিয়েই শুরু করেন কাজ। তাঁর কারখানায় যে পণ্যগুলো উৎপাদন হয়, তা বিক্রি করার জন্য কিছু বিক্রয় কর্মকর্তা, এলাকা ব্যবস্থাপক, পরিবেশক ও কিছু সুবিধাবঞ্চিত নারী মাঠপর্যায়ে কাজ করেন।  তাঁর এ কোম্পানিতে বর্তমানে প্রত্যক্ষভাবে ২০ জন এবং পরোক্ষভাবে নয়জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন প্রতিবন্ধীও রয়েছে। শরীফার কোম্পানিতে তৈরি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে স্ক্রিন ক্রিম, উপটান, লোশন, নেইলপলিশ ইত্যাদি। কয়েক দিন আগে কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, শরীফা কর্মীদের নিয়ে কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে শাম্মী আক্তার (১৯) নগরের শাহ মখদুম কলেজে স্নাতক শ্রেণীতে পড়াশোনা করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি এ কাজ করেন। প্রতিবন্ধী সেতারা খাতুন (১৯) এবার রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছেন। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি এখানে কাজ করেন।  সেতারা খাতুন বলেন, ‘আমরা শরীফা আপার কারখানায় শুধু কাজ করি তা নয়, তাঁর কাছে অনেক কিছু শিখি।’  কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সবচেয়ে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে শরীফা ‘অ্যাকসেস বাংলাদেশ-অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ সম্মাননা ২০১২’-এর প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন। সম্প্রতি শরীফার কোলজুড়ে এসেছে একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান।
 
শরীফার কারখানায় উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণবিষয়ক সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের রাজশাহীর উপপরিচালক রেজাউল করিম সরকার বলেন, বিএসটিআইয়ের আওতাধীন যে কয়টি আইটেম তাঁদের রয়েছে, সেগুলো পরীক্ষার পর মান যাচাই করে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শরীফার জীবন অনেক দুঃখে গড়া। তাই তিনি দুঃখী মানুষের কথা মনে রেখেছেন। প্রতিবন্ধীদের কোনো অনুষ্ঠানে, দরিদ্র মানুষের যেকোনো প্রয়োজনে সাধ্যমতো পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি। শরীফার কথা, প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারের একটি অনুদান থাকা উচিত, যার মাধ্যমে তারা সামনে এগিয়ে দিতে পারবে।

১০০ প্রভাবশালীর একজন মালালা



নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পাওয়ার পর এবার বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির মধ্যে স্থান করে নিয়েছে পাকিস্তানের কিশোরী নারীশিক্ষাকর্মী মালালা ইউসুফজাই। আজ শুক্রবার প্রসিদ্ধ ‘টাইম’ সাময়িকীতে বিশ্বের এ সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী শত ব্যক্তির নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে অন্যতম প্রভাবশালী হিসেবে স্থান করে নিয়েছে মালালা। খবর এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের। ভারতের খ্যাতিমান নির্মাতা-অভিনেতা আমির খান ও আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভারের নামও রয়েছে এই তালিকায়।
 

পাকিস্তানের নারীশিক্ষাকর্মী মালালা কয়েক মাস আগে তালেবানের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর তাকে উন্নত চিকিত্সার জন্য যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার মাথার খুলির ছিদ্র সারিয়ে তোলা হয়। চিকিত্সা শেষে সেখানকার একটি স্কুলে পড়াশোনা করছে মালালা (১৫)। ‘টাইম’ সাময়িকী শিল্পসংস্কৃতি, ব্যবসা ও রাজনীতি অঙ্গনে যাঁরা নিজ নিজ কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বিশ্বে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী হিসেবে ১০০ জনের বার্ষিক তালিকা তৈরি করেছে। তালিকায় রয়েছেন হলিউড চলচ্চিত্রনির্মাতা স্টিভেন স্পিলবার্গ, অস্কারজয়ী অভিনেতা ড্যানিয়েল ডে লুইস, মার্কিন অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্স, যুক্তরাজ্যের রাজবধূ ডাচেস অব কেমব্রিজ কেট মিডলটন। 

এবারের তালিকায় অষ্টমবারের মতো স্থান করে নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সঙ্গে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী মিশেল ওবামা। এ ছাড়া রাজনীতিবিদদের মধ্যে আরও রয়েছেন মার্কিন সিনেটর রন পল, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি ও উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। স্পেস-এক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা এলন মাক্স এবং পোপ ফ্রান্সিস রয়েছেন প্রভাবশালীদের মধ্যে। প্রভাবশালীদের মধ্যে সংগীত জগতের পপতারকা জাস্টিন টিমবারলেক, জে জি এবং তাঁর স্ত্রী বিয়ন্স রয়েছেন। ক্রীড়াজগত্ থেকে রয়েছেন ইতালির ফুটবলার মারিও বালোতেল্লি, মার্কিন বাসকেটবল তারকা লিবর্ন জেমস।





উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো

নারীদের আটকাতে চাইলে রুখে দাঁড়াব: দীপু মনি


পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, ‘যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীদের ঘরে আটকে রাখতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াব। নারীদের জন্য আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তাই সজাগ থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, সবাইকে রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন দীপু মনি। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘ধর্মকে অপব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করবেন না। এ দেশ গণতান্ত্রিক দেশ। এ দেশের মানুষ গণতন্ত্রের বাইরে যেতে চায় না।’
 
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. ইসমাইল হোসেন, পুলিশ সুপার মো. আমির জাফর, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওসমান গনি পাটওয়ারী, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মিহির লাল সাহা, চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাদেকুর রহমান প্রমুখ।
এর আগে মন্ত্রী চাঁদপুর সরকারি কলেজের বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠানে যোগ দেন। ওই অনুষ্ঠান শেষ করে তিনি মহিলা কলেজে যান। এরপর তিনি যান পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের ক্রীড়ানুষ্ঠানে যোগ দিতে।



 

উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো 

Monday, April 15, 2013

নারীর জন্য এ কেমন ব্যবস্থা? দরকার সচেতনতা...


ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ডিএমসি) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে ধর্ষণের শিকার নারীর শারীরিক পরীক্ষা করেন পুরুষ চিকিৎসক। ওই চিকিৎসককে সহায়তা করেন পুরুষ ওয়ার্ডবয়। দেশের সবচেয়ে গৌরবময় চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে ধর্ষণের প্রমাণপত্র নিতে এসে নারীকে চরম লজ্জা আর অপমানের মুখোমুখি হতে হয় প্রায়ই। ধর্ষণ, হত্যা, দুর্ঘটনার মামলা অথবা ছেলে বা মেয়ের বয়স নির্ধারণে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থেকে সনদ নিতে হয়। আইনের চোখে এ সনদ গুরুত্বপূর্ণ দলিল। অনেকে মনে করেন, এ দলিল পেতে দ্বিতীয়বার ধর্ষণের শিকার হন নারী। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে কোনো নারী চিকিৎসক নেই। কোনো নারী নার্স, এমনকি আয়াও নেই। অধ্যাপকসহ নয়টি চিকিৎসকের পদের একটিতেও নারী নেই। ১৫ বছর আগে বিভাগটি প্রতিষ্ঠিত হলেও এত দিনে পিয়ন পদে একজন নারী ছাড়া আর কোনো পদে কোনো নারীকে পদায়ন করা হয়নি।
 
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ কাজী দ্বীন মোহাম্মাদ গত ২৪ মার্চ প্রথম আলোকে বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে একজন নারী চিকিৎসককে ওই বিভাগে পদায়ন করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসাশাস্ত্রে নারী-পুরুষের কাজ আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।’  কিন্তু ১৫ এপ্রিল ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মোখলেছুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, তিনি এখনো এ বিভাগের জন্য নারী চিকিৎসক নিয়োগ বা পদায়ন বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাননি।  সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই বিভাগে শারীরিক পরীক্ষার জন্য পৃথক কক্ষ নেই। চিকিৎসকদের বসার কক্ষের সামনের বারান্দায় একটি টেবিল রাখা। পুরুষ চিকিৎসক পুরুষ ওয়ার্ডবয়ের সহযোগিতায় সেই টেবিলের ওপর ধর্ষণের শিকার নারীকে রেখে তাঁর পরিধেয় কাপড় খুলে শারীরিক পরীক্ষা করেন। ওই একই টেবিলে এবং একইভাবে পরীক্ষা করে বয়স নির্ধারণ করা হয় নারী-শিশু সবার। আর এভাবে পরীক্ষার মুখোমুখি হয়ে আঁতকে ওঠেন সবাই। পরীক্ষার আতঙ্কে অনেকে অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়া থেকে বিরত থাকেন।
 
সম্প্রতি ময়মনসিংহের এক পোশাকশ্রমিক ধর্ষণের মামলা করেন। এ আয়োজন দেখে পরীক্ষা না করেই ফিরে যান তিনি।  সবুজবাগ থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক বিকাশ কুমার ঘোষ আদালতের নির্দেশে বয়স নির্ধারণের জন্য একটি মেয়েকে ফরেনসিক বিভাগে আনেন। খোলা বারান্দার টেবিলের ওপর পুরুষ ওয়ার্ডবয় কাপড় খুলতে শুরু করলেই চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মেয়েটি। জ্ঞান ফেরার পর বয়স নির্ধারণে আর রাজি হননি তিনি।  এই প্রতিবেদককে মেয়েটি বলেন, তাঁর বয়স ১৯ বছর দুই মাস। এইচএসসি পাস করলেও সনদে তাঁর বয়স কম দেওয়া হয়। সনদে তাঁর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়নি। নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করায় মেয়েটির বাবা মামলা করেছেন তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে। আদালতে হাজির হয়ে নিজের ইচ্ছায় বিয়ের কথা স্বীকার করেন মেয়েটি। কিন্তু সনদ অনুযায়ী বয়স কম হওয়ায় তাঁকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠিয়ে দেন আদালত। মেয়েটি নিজেই আদালতের কাছে ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁর বয়স নির্ধারণের আবেদন জানান। আদালত বয়স নির্ধারণের জন্য সবুজবাগ থানার পুলিশকে নির্দেশ দেন।
 
ডিএমসিতে প্রতিদিন ধর্ষণ ও বয়স নির্ধারণের এক-দুটি ঘটনা আসে। পরীক্ষা না করেই এঁদের কেউ কেউ ফিরে যান। অন্যদিকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, টাকা দিতে রাজি হলে হাসপাতালের অন্য বিভাগ থেকে নারী চিকিৎসক এনে পরীক্ষা করানো হয়। টাকা বেশি দিলে ওই দিনই পরীক্ষা সনদও পাওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় অভিভাবকদের কাছ থেকে। টাকা খরচ না করলে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয় ধর্ষণ কিংবা বয়স নির্ধারণের প্রতিবেদনের জন্য।
 
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ডিএমসিতে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ধর্ষণের শিকার নারীকে নিয়ে যেতে হয় পরীক্ষা করানোর জন্য। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানোর পরও ফরেনসিক বিভাগে নারী চিকিৎসক বা নার্স পদায়ন করা হয়নি। এটা দুঃখজনক।  স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এম নিয়াজউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তিনি প্রথম শুনলেন। কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত নারী চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে।




 উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো

 
Our Another Site : Right Way BD | Right Way BD FB Group | Right Way BD FB Page |