Assertion For Justice, Equality And Freedom.

Wednesday, October 1, 2014

নারীর বিরুদ্ধে জিঘাংসা, ঠেকাতে প্রয়োজন সচেতন শিক্ষা ব্যাবস্থা

প্রতিদিন প্রতিটি সংবাদ মাধ্যমের কোন না কোন অংশ জুড়ে নারী নির্যাতনের যে ঘটনা গুলি দেখা যায়, তা থেকে এটুকু প্রতীয়মান হয়; ঘটনাগুলি ঘটতেই থাকবে,  আর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের আনাচে কানাচে কিশোরী থেকে শুরু করে প্রত্যেক বয়সের নারীরা কোন না কোনভাবে নির্যাতনের শিকার হতেই থাকবে। আর দেশের সচেতন নাগরিকেরা নানাভাবে তাদের প্রতিবাদ ব্যক্ত করতে থাকবেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলি নারী নির্যাতন বিষয়ে বিভিন্ন রকমের গুরুত্তপুর্ন কার্যাবলী সম্পাদন করছেন, যেগুলি প্রশংসার দাবীদার।

 বাস্তব চিত্র কি বলে? নারী নির্যাতন কি প্রকৃত অর্থে কমছে? মোটেই তা নয়। মোবাইল, ইন্টারনেটের এই ভয়াল যুগে যেখানে খুব সহজেই প্রাপ্ত যৌনতার নোংরা ছবি দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তরুন সমাজকে নানাভাবে আকর্ষিত করছে ও তাদের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটাচ্ছে, সেখানে আবেগ-বিবেক, প্রকৃত ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং জবাবদিহিতা ইত্যাদি বিষয়গুলিত দিন দিন যেন বিলুপ্তির পথেই পা বাড়াচ্ছে। তাই শয়তানি শক্তির প্রভাবে নারী নির্যাতন আগের চাইতে আরও ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করছে। নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়। তরুন সমাজের কাছে নারী মানেই যৌণ চাহিদা মেটানোর ভোগ্যপন্য, আইটেম, শরীরের গঠন ও আকৃতি, অপবাদিণী, কলংকিনী এবং আরো ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই আজকালকের যুগের কিশোর-তরুনেরা স্থান-কাল-বয়স চোখে দেখেনা আর বিবেচনাও করেনা। পুরুষের বয়স পঞ্চাশ হলেই কি আর নারীর বয়স বারো হলেও সমস্যা নেই। অথচ বারো বছরের একটা কিশোরী মেয়ে জীবন সম্পর্কে কি ই বা শিক্ষা লাভ করেছে?

এভাবে আর চলতে দেয়া যায়না। ধর্ষনের মতো জঘন্য পাপাচারগুলি সংঘটিত হবার পর সংবাদ মাধ্যম ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলি ধর্ষিতার বিচার ও ক্ষতিপুরনের জন্য নানা রকমের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। কিন্তু ঘটনা ঘটার পুর্বেই তার প্রতিকার মুলক ব্যবস্থা নেয়া উত্তম, যাতে করে এই সমস্ত ঘটনা ঘটার সুযোগই না হয়। এইজন্য যেই পদক্ষেপগুলি বেশি করে নেয়া প্রয়োজন, সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্তপুর্ন পদক্ষেপ হলো, তরুন সমাজের ভিতরে সমাজিক ভাবে সচেতনতা তৈরীর জন্য যত রকমের ব্যবস্থা নেয়া যায়, সব রকমের কার্যক্রম গ্রহন করা।

গ্রামে-গঞ্জে বসবাস করা দরিদ্র ঘরের অশিক্ষিত অথবা অর্ধশিক্ষিত একটি ছেলে যেমনি করে জীবনের প্রকৃত শিক্ষা থেকে দূরে বাস করে, তেমনি করে শহরে থাকা তথাকথিত আধুনিক বাবা-মায়েরা তাদের আদরের ছেলেকে জীবনের সমস্ত চাহিদাগুলি মেটানোর সাথে সাথে সত্ত্যিকারের প্রকৃত শিক্ষা দিতে পারছেন কি না, আজকের এই অস্থির-যান্ত্রিক যুগে এই কথাটিও প্রশ্নবিদ্ধ। নারীরা এখন আর ঘরে বসে থাকতে পারেননা। জীবনের তাগিদে তাকেও পুরুষের মতো ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করতে হয়। কারন ঘুরে ফিরে সেইটাই, পুরুষের উপর তারা পুরোপুরি ভাবে ভরসা করতে পারছেননা। এই দিকে তাদের সন্তান একা একা ঘরে বসে কি করছে, তার খবর রাখার সময় কোথায় তাদের? এখন গোড়ায় হাত দিলেই তো সমস্যা। নারী-পুরুষেরা কেন একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারছেননা!? মুল্যবোধ ও জবাবদিহীতার অভাব কেন এবং কোথায়? 

সবশেষে এটুকুই বলতে হয়, শিকড় থেকে সত্যিকারের আধুনিক ও সচেতন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা ছাড়া আর কোন বিকল্প পথ খোলা নেই। তাই দেশের প্রতিটি অঞ্চলের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পাশাপাশি নতুন নতুন পর্যায়ের আধুনিক মানের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিশোর-তরুন কমিউনিটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন, যেখানে কিশোর ও তরুন সমােজের ছেলে-মেয়েরা প্রকৃত অর্থে মানুষের প্রতি মানুষের মূল্যবোধ তথা নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, জবাবদিহীতা এবং নিজের জীবনের সম্মান ও প্রয়োজন রক্ষা করে চলতে পারবে। কারন, অপরাধ যখন সংঘটিত হয়, তখন এক পক্ষ সাথে সাথেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় আর অপর পক্ষ হয় তার কিছু সময় পরে, যখন সে ধরা পরে যায়। পরবর্তী অপরাধ সংঘটির হবার আগেই দেশ ও মানুষের কল্যানে এখনই প্রয়োজন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করার।

নীচে আমাদের পুরনো আমলের ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থার ছোট একটি চিত্র তুলে ধরা হলো, যা দেখলে দুঃখই হয়ঃ 

ধর্ষণের শাস্তি দুই লাখ টাকা জরিমানা !
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে সালিসের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই টাকা দেওয়ার জন্য ১৫ দিনের সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনাটি জানলেও এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। গত রোববার ওই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়। মেয়েটির পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার সকালে ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রী বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল। পথে উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধোপাদহ গ্রামের বাসিন্দা নাফিস খান (২২) মেয়েটিকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পাশের বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করেন। ঘটনাটি স্থানীয় কয়েকজন দেখে নাফিসকে আটক করেন। পরে তাঁকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য দেলোয়ার হোসেনের জিম্মায় দেওয়া হয়।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, নাফিস ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। ওই রাতেই ধোপাদহ গ্রামে নাফিসের চাচা লুৎফর রহমানের বাড়িতে সালিস হয়। সেখানে নাফিসকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ওই সালিসে কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। মতিয়ার রহমান বলেন, জরিমানার টাকা ১৫ দিনের মধ্যে মেয়েপক্ষকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মেয়ের দিনমজুর বাবা বলেন, ‘টাকা এখনো পাইনি। আদৌ পাব কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সালিসকে সম্মান করে থানায় অভিযোগ করিনি।’ গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুভাষ বিশ্বাস বলেন, ‘ঘটনাটি জানি। তবে কেউ অভিযোগ দেয়নি বলে খোঁজখবর নিইনি। ধর্ষণের ঘটনায় মামলা ছাড়া বিচার করা যায় না।’

Maksuda
Date: 01-10-2014.


তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলো, বাংলাদেশ

 
Our Another Site : Right Way BD | Right Way BD FB Group | Right Way BD FB Page |