Assertion For Justice, Equality And Freedom.

Wednesday, March 26, 2014

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা

১৯ মার্চ ২০১৪, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সহযোগিতায় ছিল কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম (সিডিএমপি-২)। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশিত হলো।
 
আলোচনা
১ দুর্যোগ-পূর্ব প্রস্তুতিতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে
২. দুর্যোগ বিষয়ে গণমাধ্যম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে
৩. ত্রাণ কার্যক্রমের পাশাপাশি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিতে হবে
৪. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সাফল্যের দৃষ্টান্ত গণমাধ্যমে প্রচার করা
৫. দুর্যোগের আগে থেকেই সচেতনতামূলক প্রচার চালানো
৬. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির সংবাদ প্রচার করা।

যাঁরা অংশ নিলেন

মেছবাহ উল আলম               : সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়
মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম     : অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় প্রকল্প পরিচালক, সিডিএমপি
এ এস এম মাকসুদ কামাল : চেয়ারম্যান, ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ও ডিন, ফ্যাকাল্টি অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, ঢাবি
রিয়াজউদ্দিন আহমেদ            :   সম্পাদক, দ্য নিউজ টুডে
মতিউর রহমান চৌধুরী          :   সম্পাদক, মানবজমিন
সৈয়দ বদরুল আহসান             : নির্বাহী সম্পাদক, দ্য ডেইলি স্টার
মাহবুবা নাসরীন             : পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ, ঢাবি
আফসানা হক                          : সহকারী অধ্যাপক, আরবান অ্যান্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগ, বুুয়েট
এ এইচ এম বজলুর রহমান   : প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন
মো. সামছুর রহমান                 : পরিচালক প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর
পিটার মিডওয়ে                        : প্রজেক্ট ম্যানেজার, সিডিএমপি
আবদুল লতিফ খান                   : ডিজাস্টার রেসপনস ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ, সিডিএমপি
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম, সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো।

আব্দুল কাইয়ুম: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ এখন মডেল। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও দেশের মানুষ—সবার প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে। এখানে গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে দুর্যোগের আগে মানুষের মধ্যে সতর্কবার্তা ও করণীয় সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। ২০০৭ সালের সিডরে এক বাড়িতে দেখলাম ১৮ জনের মধ্যে ১০ জন বেঁচে গেছেন। তাঁরা একটি পাকা বাথরুমে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাহলে প্রতি বাড়িতে যদি একটি করে ছোট পাকা ঘর থাকে, সেটাও মানুষকে দুর্যোগের সময় রক্ষা করতে পারে। এসব বিষয়ে গণমাধ্যম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে পারে। প্রথম আলো সিডরের ওপর লেখা ও ছবি নিয়ে একটি প্রামাণ্য বই প্রকাশ করেছে। এটা ভবিষ্যতে গবেষণায় কাজে লাগবে। গণমাধ্যম এ ধরনের আরও অনেক কিছু করতে পারে। এখন আলোচনা করবেন মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম।

মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম: আমাদের দেশ ঝুঁকিপ্রবণ। ঝুঁকির দিক থেকে বাংলাদেশের স্থান বিশ্বে পঞ্চম। দেশের সব অঞ্চল কোনো না কোনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দুর্যোগে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বলতে কেবল ত্রাণ তৎপরতাকে বোঝানো হতো। আশির দশকের পর থেকে এ ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। বেশি জনসংখ্যার ঘনত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ছোট একটি ভূখণ্ডে ১৬ কোটি মানুষের বাস। বাধ্য হয়ে মানুষ উপকূল, শহরের বস্তিসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বাস করে। যথেষ্ট অর্থনৈতিক সক্ষমতা থাকলে দ্রুত ঝুঁকি মোকাবিলা করতে সহজ হতো। বঙ্গোপসাগর ও হিমালয়ের মাঝখানে আমরা আছি। সাগরের পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেলে দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোর লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়। উন্নয়ন নীতিতে দীর্ঘমেয়াদি সুবিধার কথা ভাবতে হবে। কেবল স্বল্পমেয়াদি সুবিধার কথা ভাবা হয়। ফলে অনেক সময় সুবিধার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। ১৯৯৮ সালে বন্যার স্থায়িত্ব ছিল ৬৮ দিন।
বাংলাদেশের রাস্তাগুলো পানি চলাচলের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে। গ্রাম থেকে বেশি পরিমাণে মানুষ শহরে আসছে। দুটোই জীবনের ঝুঁকি তৈরি করছে। এখন ৩০ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করে। ২০৫০ সালের আগেই ৫০ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করবে। এ ক্ষেত্রে আগুন, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় যেকোনো ধরনের দুর্যোগে ব্যাপক প্রাণহানি হবে। সাইক্লোন মোকাবিলায় কিছুটা অগ্রগতি হলেও বন্যা মোকাবিলায় যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি। দুর্যোগের একটি বড় কারণ হচ্ছে আবহাওয়ার পরিবর্তন। আমাদের খাদ্যের প্রধান উৎস কৃষি। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে কৃষি, পশুপালন, মৎস্য চাষ—সবকিছুর ব্যাপক ক্ষতি হবে। ফলে বেকার সমস্যা তীব্রতর হবে। তীব্র লবণাক্ততার জন্য এক হাজার কিলোমিটার উপকূলীয় অঞ্চলে ভয়াবহ পানিসংকট তৈরি হয়েছে। এ অঞ্চলের কৃষি, পশুপালন, মাছ চাষ সবকিছু বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। শহরে ভবনধস ও অগ্নিকাণ্ডের পরিমাণ বাড়ছে। অবস্থানগত কারণে পানি আমাদের সমস্যায় ফেলছে।
বেশি পানি, কম পানি, অসময়ে পানি—সবই সমস্যা তৈরি করছে। ১৯৭১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের মোট ৪৪০টি দুর্যোগ হয়। এতে দেশের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়। মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫৪০ কোটি ৩৮ লাখ ২ হাজার মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ।প্রাণহানি হয় দুই লাখ ৪৩ হাজার ৮৪ জনের। দুর্যোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের বিষয় হলো ভূমিকম্প। ৭ মাত্রার বেশি তীব্র ভূমিকম্প হলে বড় শহরগুলোতে ব্যাপক মানুষের মৃত্যু ও ভবনধস হবে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে না ভাবলে বিপর্যয়ে পড়ব, যা থেকে উদ্ধার পাওয়া কষ্টকর হবে।

রিয়াজউদ্দিন আহমেদ: ১৯৭০ সালের সাইক্লোনের ঘটনা কভার করেছি। আমেরিকা থেকে জাহাজ এসেছিল। সিঙ্গাপুর থেকে প্লেন এসে কেরোসিনের ড্রাম, রিলিফ নিচে ফেলে দিত। এখন সে অবস্থা নেই। দুর্যোগ মোকাবিলা করতে করতে দেশের মানুষ জীবন থেকে অনেক কিছু শিখেছে। ষাট-সত্তরের দশকের মতো এখন আর মানুষ মারা যায় না। এখন কোনো দুর্যোগ আসার আগে প্রায় সবাই জানতে পারে। এসব ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। দুর্যোগের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাংবাদিকেরা উপকূলের সংবাদ পাঠান। ফলে মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি জানতে পারে। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আমরা দুর্বল অবস্থায় আছি।
এ জন্য অনেক কিছু জানার পরও ঠিকভাবে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করতে পারছি না। শহরের রাস্তায় খোলা তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে প্রচণ্ড অব্যবস্থাপনা রয়েছে। ভূমিকম্পের ফলে অগ্নিকাণ্ড হবে। এতে জীবন ও সম্পদের হয়তো ৯০ শতাংশ ধ্বংস হবে। বারবার এসব বিষয় বলছি। আমার জানামতে, কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হয়েছে। একটা ভবনধস হলে সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রায় এক মাস লাগে সেটা ঠিক করতে। আর ভূমিকম্পে ঢাকায় যদি এক লাখ ভবন ধ্বংস হয়, তাহলে অবস্থা কী হবে? দুর্যোগের সময় কোথায় সাহায্য দরকার, কোথায় রিলিফের অনিয়ম হচ্ছে, গণমাধ্যম সবই তুলে ধরছে। কোনো বিষয়ে দ্বিমত হলে ছবি দেখিয়ে প্রমাণ করা হচ্ছে। গণমাধ্যম অনেক বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে। এবং কিছু কাজও হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বংলাদেশ একটা মডেল। আগামী দিনে গণমাধ্যম এ ক্ষেত্রে আরও বেশি কাজ করবে।

মাহবুবা নাসরীন: ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালে পরপর দুবার বাংলাদেশে বন্যা হয়। তখন আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। আমি ১৯৮৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিই। এ সময় টাইম ম্যাগাজিন-এ একটি ছবি ছাপানো হয়। মানুষ গলাপানিতে দাঁড়িয়ে সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছে। একজন তাদের কবিতা পড়ে শোনাচ্ছেন। তখন মনে হলো আমরা সমাজবিজ্ঞানীরা কী করছি। তাই রুটি বানানোসহ বিভিন্ন কাজ শুরু করলাম। আমার কমনওয়েলথ বৃত্তিতে দুর্যোগে মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকে—এ বিষয় নিয়ে গবেষণা করি। গবেষণার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা ছিল না। গণমাধ্যমের খবরই ছিল প্রধান উৎস।
১৯৯৩ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো হলো। তখন ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যানসহ কিছু কাজ শুরু হলো। আমার গবেষণায় সাহায্য করেছে বাংলাদেশের মানুষ। অত্যধিক গরম, শীত, মঙ্গা ইত্যাদিকে দুর্যোগ বলা হবে কি না এসব বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। গণমাধ্যম এ ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে। আমাদের প্রবণতা হলো দুর্যোগ হলেই কাজ করব। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা হলো প্রতিনিয়ত কাজ করার একটা বিষয়। ২০০৪ সালের পর থেকে বাংলাদেশ রিলিফ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছে। কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম কাজ করছে। মন্ত্রণালয় তৈরি হলো। ১৯৯৭ সালে স্ট্যান্ডিং অর্ডার অন ডিজাস্টার তৈরি হয়েছে। এর ফলে দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ মডেল হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনা হয়নি। কিছু মানুষ আর্সেনিক লবণাক্ততাসহ বিভিন্ন দুর্যোগের মধ্যে আছে। তাদের জন্য গণমাধ্যম কাজ করতে পারে। নীতিমালা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে গণমাধ্যম ভূমিকা রাখতে পারে। আহ্বান করব গণমাধ্যম যেন সারা বছর এ ক্ষেত্রে কাজ করে।

মো. সামছুর রহমান: ২৭ মার্চ দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালন করব। অক্টোবরে আমাদের দুর্যোগের বিষয় নিয়ে কর্মসূচি রয়েছে। পত্রপত্রিকায় ঘোষণা যায়। অনেক সময় সংবাদ সম্মেলন করি। গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা অনুষ্ঠানে আসেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, পরের দিন পত্রিকা দেখে হতাশ হই। আমাদের খবর পাওয়া যায় না। বিষয়টি আমাদের ভাবিয়ে তোলে। কী করলে গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। তখন সচিব মহোদয় বললেন, ওনাদের কাছে যাই। ওনারাই বলবেন কী করলে গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে।
আমরা খুব বেশি বলতে চাই না। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে শুনতে চাই, কী করলে আমাদের খবর বেশি বেশি গণমাধ্যমে আসবে। মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেশে প্রতিবছর বন্যা হয়। দরিদ্র ও অল্পশিক্ষিত মানুষগুলো অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শিখে গেছে। তাদের বেশি কিছু বলতে হয় না। সমস্যা হচ্ছে শিক্ষিত মানুষদের নিয়ে। তাঁরা বেশি জানেন। আমাদের কথা শুনতে চান না। তর্ক-বিতর্ক করেন। এ জন্য আমরা শহরের দুর্যোগ সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারি না। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সাফল্য অর্জিত হয়েছে। অনেকের কাছে রোল মডেল হয়েছি। এর সব কৃতিত্ব শিক্ষাবঞ্চিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর। দেশে পারাপারের নৌকাগুলোতে বেশি যাত্রী ওঠে। ফলে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জ বন্দর ও শহরে যোগাযোগের জন্য প্রতিদিন আসা-যাওয়া মিলে প্রায় এক লাখ লোক পারাপার হয়। নিয়ম করলাম কোনো নৌকায় ছয়জনের বেশি উঠবে না। কিন্তু দেখা গেল সবাই হুড়মুড় করে উঠে পড়ে। মানুষ তার জীবনের ঝুঁকির ব্যাপারে সচেতন নয়। এসব ক্ষেত্রে গণমাধ্যম এগিয়ে এলে জনগণের উপকার হয়। তাই গণমাধ্যমকে অনুরোধ করব তারা যেন আরও বেশি বেশি সহযোগিতা করে।

এ এইচ এম বজলুর রহমান: এ ধরনের অনুষ্ঠান নিয়মিত হওয়া দরকার। তাহলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। আমরা দেখতে চেয়েছিলাম দুর্যোগের ক্ষেত্রে কমিউনিটি রেডিও কীভাবে কাজ করে। উপকূলীয় অঞ্চলে এখন ছয়টি কমিউনিটি রেডিও কাজ করছে। ২০১৩ সালে মহাসেন হয়েছিল। মহাসেনে কমিউনিটি রেডিওর কার্যকারিতা লক্ষ করেছি। দুর্যোগে উপকূলীয় অঞ্চল বিদ্যুৎবিহীন ছিল। আধুনিক প্রযুক্তি কাজ করছিল না। একনাগাড়ে ৫১৪ ঘণ্টা কমিউনিটি রেডিও কাজ করেছে। তাই নীতিনির্ধারকদের বলব নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পুরোনো প্রযুক্তিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। ক্যাটরিনায় আমেরিকাও একই ভুল করেছিল। ক্যাটরিনার ভয়াবহতায় আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পারেনি। তখন তারা পুরোনো প্রযুক্তি ফিরিয়ে আনে। এ বিষয়ে বেশি করে আলোচনা হওয়া দরকার। তাহলে অনেক বিষয় বেরিয়ে আসবে। উপকূলীয় অঞ্চলে সিপিপি (সাইক্লোন প্রিপিয়ার্ডনেস প্রোগ্রাম) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখান থেকে গণমাধ্যম অনেক তথ্য পেয়ে থাকে। সিপিপি আরও বেশি কার্যকর রাখার ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

আফসানা হক: দুর্যোগের সময় গণমাধ্যম যথেষ্ট কাজ করে। তাদের প্রচারের ফলে বিদেশেও জনমত তৈরি হয়। প্রচুর সাহায্য আসে। কিন্তু দুর্যোগ-পূর্ব সময়েও গণমাধ্যম জনমত তৈরি করতে পারে। মানুষকে সচেতন করতে পারে। প্রচলিত গণমাধ্যম ছাড়াও বিলবোর্ড, লিফলেট, পোস্টার—এগুলোও গণমাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পরে। স্থানীয়ভাবে বিএনএনআরসি ভালো করে। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যম দুটোর মধ্যে সমন্বয় আনতে হবে। দুভাবে দুর্যোগ আসছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ। মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের জলাশয় ভরাট হচ্ছে। ফলে শহর ও গ্রামের মানুষ দীর্ঘ সময় পানিতে আবদ্ধ থাকছে। যেখানে সেখানে ভবন তৈরি হচ্ছে। ভবন তৈরিতে জাতীয় ভবন বিধিমালা মানা হচ্ছে না। ভবনধসে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের অসতর্কতাসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিবছর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম আগে থেকেই মানুষকে সচেতন করতে পারে। এসব নিয়ে তাদের ব্যাপক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সরকার ও নীতিনির্ধারণী মহলকে জানাতে পারে। তাদের কোথায় ঘাটতি রয়েছে, কী করণীয় আছে। সারা বছর গণমাধ্যম এসব নিয়ে কাজ করতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক আমার এক শিক্ষিকাকে বলছিলেন, তুমি দেশে গিয়ে কি গাছে থাকবে? তোমার দেশ তো বন্যায় ভেসে গেছে। ফলে কোনো বিষয় এমনভাবে উপস্থাপন করা যাবে না, যাতে সম্পূর্ণ নেতিবাচক ধারণা বিশ্বের কাছে যায়। গুজব-আতঙ্কের ক্ষেত্রেও মিডিয়া ভূমিকা রাখতে পারে। চূড়ান্তভাবে বলতে চাই, যাঁরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কাজ করবেন, তাঁদের যেন এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ থাকে। তাহলে নিজের নিরাপত্তা হবে। কাজটিও ভালো হবে। তাদের কাজ নিয়ে পরবর্তী সময়ে ফলপ্রসূ ডকুমেন্টেশন করা যাবে।

এ এস এম মাকসুদ কামাল: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দিবস উপলক্ষে আজকের গোলটেবিল বৈঠক। এ আলোচনায় গণমাধ্যম সম্পৃক্ত না থাকলে আলোচনাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা হলো দুর্যোগের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সবকিছু প্রস্তুত রাখা দ্রুত সতর্ককরণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। যদি নির্মাণবিধি না মেনে ভবন তৈরি করা হয়, তাহলে জেনেবুঝেই নিজের বাসস্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ করা হলো। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় দেশ অনেক এগিয়েছে। ৫০ হাজার সিপিপি সদস্য আছে। তিন হাজার সাইক্লোন শেল্টার আছে। তবে এ অঞ্চলে পাঁচ হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ প্রস্তুত অবস্থায় নেই। গণমাধ্যম কাজ করছে। কিন্তু কোন পর্যায় পর্যন্ত করছে, তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
দুর্যোগের সময় গণমাধ্যম ব্যাপক কাজ করে। কিন্তু দুর্যোগের আগে ও পরে সেটি আর থাকে না। বিশেষ করে মৌসুমি দুর্যোগগুলোর আগে গণমাধ্যম মানুষকে সচেতন করতে পারে। কীভাবে সাইক্লোন শেল্টারে যেতে হবে। কী কী নিতে হবে। আরও কী প্রস্তুতি দরকার ইত্যাদি। টেলিভিশনের পাশাপাশি এর মালিকদের অন্য ব্যবসা আছে। তাঁরা তাঁদের ব্যবসায়িক ও সামাজিক কার্যক্রম (সিএসআর) তহবিল এ কাজে ব্যবহার করতে পারে। 

সরকারসহ সবাইকে এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। সিডরের সময় গণমাধ্যমে প্রথম সাত নম্বর সতর্ক সংকেত দেওয়া হলো। তার দু-তিন ঘণ্টার মধ্যে ১০ নম্বর সতর্ক সংকেত দেওয়া হলো। মানুষ প্রস্তুত হওয়ার বেশি সময় পায়নি। টেলিভিশন স্ক্রলে বিপত্সংকেত ও গান একই সঙ্গে যায়। ফলে মানুষ বিপদকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। কোন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠান পরিবেশন কী হবে, এটা গণমাধ্যমকে ভাবতে হবে। ঢাকা শহরে কিন্ডারগার্টেনসহ দুই হাজার ৭০০-এর বেশি স্কুলের মধ্যে অনেক নামীদামি স্কুলও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে রয়েছে। দুর্যোগের ওপর জাতিসংঘ এক গবেষণা করেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় এক ডলার খরচ করলে রিলিফসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ১০ ডলার ব্যয় কমে আসবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বাজেটের বড় অংশ ব্যয় হয় রিলিফের জন্য। রিলিফ থেকে বেরিয়ে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য অনেক বেশি ব্যয় করতে হবে। প্রথম আলো সিডরের ওপর ডকুমেন্টেশন করেছে। এমন ডকুমেন্টেশন আরও করতে হবে।

সৈয়দ বদরুল আহসান: আমরা সংবাদপত্রে কাজ করি। মনে করি, সব জানি। আজ এখানে এসে অনেক কিছু জানা হলো। জনগণকে সচেতন উদ্বুদ্ধকরণের কথা বলা হয়েছে। সাংবাদিকদেরও আরও সচেতন হতে হবে। টেলিভিশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেবল রাজনীতির বিষয়ে আলোচনা হয়। অনেককে বলেছি কেন এত আওয়ামী লীগ-বিএনপির কথা বলা হয়। তাঁদের ব্যবস্থাপনা নাকি এটাই চায়। এর বাইরে আরও সামাজিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
কয়েক বছর আগে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নদী বাঁচাও আন্দোলন করেছিলাম। এখন এ বিষয়ে কথা শোনা যায় না। রাজনৈতিক দল ক্ষমতার বাইরে থাকলে গণমাধ্যমের বন্ধু হয়। ক্ষমতায় গেলে গণমাধ্যমকে চেনে না। আমাদের কথা শোনে না। বিলবোর্ডে অনেক রকমের বিজ্ঞাপন দেখি। দুর্যোগের বিষয় এখানে তুলে ধরা যেতে পারে। তাহলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা আরও বাড়বে। সাংবাদিকদের সব বিষয়ে লিখতে বলি। কোনো বিশেষ বিষয়ে দক্ষতা থাকে না। দুর্যোগের বিষয়ে কাজ করার জন্য সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। দুর্যোগসহ বেশি করে অন্য সামাজিক বিষয়গুলো টক শোতে আনতে হবে। আমি মনে করি, গণমাধ্যমকে আরও বেশি কাজ করতে হবে।

মতিউর রহমান চৌধুরী: আমরা সবাই গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই। কিন্তু মিডিয়ার অবস্থান কোথায়, সেটা বুঝতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় জাতীয় কমিটি আছে। এ কমিটিতে কি গণমাধ্যমের কোনো প্রতিনিধি আছেন? কোনোকালে ছিল? ছিল না। গণমাধ্যমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তাহলে তাদের কাছ থেকে কতটুকু আশা করতে পারেন? টক শোতে রাজনীতি নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। কারণ কী? রাজনীতিবিদেরা অনেক বিষয়ে কথা বলেন। এর মধ্যে রাজনীতি নিয়ে কথা বললে এটাই হেডলাইন হয়। টেলিভিশনের স্ক্রলে এটাই দেখা যায়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দিবসে প্রধানমন্ত্রী অনেক কথা বলবেন।
যেই রাজনীতি নিয়ে দুটো লাইন বলবেন, এটাকে সবাই হেডলাইন করবেন। মূল বিষয়টি মানুষের মধ্যে আলোচনায় আসবে না। আলোচনাগুলো যে জায়গার বিষয়, সেখানে হওয়া উচিত। বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও ইলেকট্রিক তার রাস্তার ওপর নেই। ইলেকট্রিক লাইনকে অবশ্যই মটির নিচে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, মাটির নিচে তার নেওয়ার জন্য কয়েকবার টাকা এসেছে। এ টাকা নয়ছয় হয়েছে। গণমাধ্যমে এ খবর দিলে হয়তো মামলা হবে। ভয়ংকর সিডরের সময় গণমাধ্যমে গান বেজেছে। এটা ঠিক নয়। অনেক সময় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় থাকে না। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায় না। টেলিভিশনকে যেতে দেওয়া হয় না। বলে সেনসেটিভ। কিসের সেনসেটিভ? বিদেশি পত্রিকাগুলো সহযোগিতা পাচ্ছে। আমরা পাচ্ছি না। যাঁরা দুই লাইন লেখেন না, তাঁরা বিদেশে সম্মেলনগুলোতে যান। অথবা এমন একজনকে নেওয়া হলো, যিনি সাত দিন পর বদলি হলেন অন্য কোথাও। তাঁর অভিজ্ঞতা কোনো কাজে লাগল না। এসব বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। মসজিদভিত্তিক ক্যাম্পেইন হতে পারে। সবার সঙ্গে একমত, দুর্যোগের আগে-পরে গণমাধ্যমের কাজ করা প্রয়োজন।

মেছবাহ উল আলম: দুর্যোগ মন্ত্রণালয় ও গণমাধ্যম মানুষের জন্য কাজ করছে। এখানে কোনো রাজনীতি নেই। দুর্যোগ সবার জন্য। ঝড় এলে বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর মানুষকে ক্ষতি করবে, অন্যরা বেঁচে যাবে তা নয়। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের মডেল মনে করা হয়। কিন্তু সব ধরনের দুর্যোগ নয়। কেবল ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় মডেল। ১৯৭০ সালের ঝড়ের কথাই আলোচনায় আসে। ষোলো শ-সতেরো শ সালেও এ রকম বড় ঝড় হয়েছে। একটি বইয়ে পড়েছি, ইংরেজ বাহাদুর ঝড় দেখতে গিয়ে গাছে লাশ দেখেছেন। ১৯৭০ সালের পর থেকে আমরা রিলিফনির্ভর ছিলাম। এখন বেরিয়ে আসছি। বিভিন্নভাবে ঝুঁকি মোকাবিলার দক্ষতা বাড়াতে হবে। এখানে সবার ভূমিকা আছে।
মহাসেনে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ব্যাপক লোককে উদ্ধার করতে পেরেছি। সম্পদ বাঁচাতে পেরেছি। গণমাধ্যমসহ সবার সহযোগিতায় এটা হয়েছে। যেকোনো দুর্যোগের ক্ষেত্রে আগে থেকেই প্রচার-প্রচারণা চালানো উচিত। জাতি হিসেবে আমরা অত্যন্ত ভালো। প্রতিবেশীর বিপদে দেশের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমেরিকার একটা দলকে বললাম দুর্যোগের সময় ৫০ হাজার সদস্য বিনা পয়সায় কাজ করে। ওরা বিশ্বাস করতে পারে না, এটা কী করে সম্ভব। সবার বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। এখানে গণমাধ্যমের ভূমিকা আছে। ছোটবেলা থেকেই রেডিওতে আবহাওয়ার সংবাদ শুনে আসছি। এখন কতটুকু গ্রহণ করছি, সেটা একটা বিষয় হতে পারে। গত বছর প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ বিষয়ে আলোচনা হলো। কিন্তু কোনো পত্রিকায় সে খবর পেলাম না। তখন মনে হলো সমস্যা কোথায়, ওনাদের সঙ্গে বসি। ওনারাই বলুক কী করতে হবে। সাংবাদিকেরা লেখার বিষয় খোঁজেন। এটা কি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়? সিপিপির জন্য ১৫ কোটি টাকার সরঞ্জাম দিয়েছি। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সিপিপি খুব ভালো অবস্থায় আছে। রানা প্লাজাধসের সময় আমাদের আরবান স্বেচ্ছাসেবকেরা চরম ঝুঁকি নিয়ে রাত-দিন কাজ করেছেন। এ কাজের যাবতীয় তহবিল দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে গেছে। কিন্তু পত্রিকায় এ খবর আসেনি। অন্তত আমাদের জন্য দুই লাইন লিখলে উত্সাহিত হই। সাংবাদিক-আমরা উভয়ই মানুষের জন্য কাজ করি। এ কাজ আরও কত ভালোভাবে করা যায়, সেটি আমাদের উভয়ের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

অবদুল লতিফ খান: দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। সবার মধ্যে ভালো যোগাযোগ থাকলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ার সুযোগ বেশি হবে। অনেক নতুন বিষয় আছে। এগুলো মানুষের জানা দরকার। গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ জানতে পারে। আগে আমরা তিন দিনের অগ্রিম বন্যার পূর্বাভাস দিতে পারতাম। এখন পাঁচ দিন আগে পূর্বাভাস দিতে পারি। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক একটা সমীক্ষা করেছে। এ সমীক্ষায় বলা হয়েছে, তিন দিনের জায়গায় পাঁচ দিন আগে বন্যার পূর্বাভাস দেওয়ায় বাংলাদেশের জনগণের স্থানান্তরযোগ্য সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ২০ শতাংশের বেশি রোধ করা সম্ভব হয়েছে। মিলিয়ন ডলার ক্ষতি কমে যাচ্ছে। এসব ইতিবাচক ঘটনা গণমাধ্যম প্রচার করতে পারে। তাহলে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও আপনারা আজকের অনুষ্ঠানে এসেছেন, সময় দিয়েছেন। সবাইকে আমাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।

পিটার মিডওয়ে: গণমাধ্যম এবং কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করতে পারে। যুক্তরাজ্যে ১৮ শ শতকে গণমাধ্যম সরকার পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যুক্তরাজ্যে সাংবাদিকেরা দুর্যোগ নিয়ে বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করেন। এটা অনেক বেশি জনপ্রিয়। বড় দুর্যোগে অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা সবকিছুকে দুর্বল করে দেয়। তাই দুর্যোগ মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দুর্যোগে গণমাধ্যম দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করতে পারে। সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীরা দুর্যোগ মোকাবিলায় ভালো কাজ করছে। এদের সঙ্গে যদি গণমাধ্যম আরও সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলায় আরও সাফল্য অর্জন করতে পারবে। আজ প্রথম আলো ও কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের উদ্যোগে যে ফলপ্রসূ আলোচনা হলো তাতে ভবিষ্যতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় গণমাধ্যমের ভূমিকা আরও অনেক বেশি বাড়বে বলে মনে করি।

আব্দুল কাইয়ুম: বারবার দুর্যোগ এসে আমাদের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়। বাংলাদেশকে আরও শক্তভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় অন্য সবার মতো গণমাধ্যমও কাজ করছে। ভবিষ্যতে গণমাধ্যমের আরও বেশি অংশগ্রহণ থাকবে বলে আশা করি। আপনাদের সবাইবে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।




তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলো, বংলাদেশ

 
Our Another Site : Right Way BD | Right Way BD FB Group | Right Way BD FB Page |