Assertion For Justice, Equality And Freedom.

Thursday, March 6, 2014

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর ভূমিকাঃ কতটা এগিয়েছি আমরা

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর ভূমিকা যে কোনো দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অর্থনীতিতে কখনই তাদের কাজের মূল্যায়ন সঠিকভাবে করা হয়নি এবং অর্থনৈতিক তত্ত্বগুলোতে অনেক ক্ষেত্রে নারীর অ-আর্থিক কাজগুলোকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে ধরা হয়। যদিও নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব এখন অনেকাংশে জাতীয় নীতিতে মূল্যায়ন পাচ্ছে তথাপি তার অগ্রগতি সামান্য। একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে নারীর অবদানকে উপেক্ষা করে একটি টেকসই অর্থনৈতিক অবকাঠামো কখনই চিন্তা করা যায় না। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতেও নারীর অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি ও তাদের ক্ষমতায়ন দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। এ দেশের নারীরা শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ করছে, উচ্চশিক্ষা লাভ করে পেশাগত সাফল্য লাভ করছে, জাতীয় উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করছে, পারিবারিক আয় ও কল্যাণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। বিশ্বের দরবারে তৈরি পোশাক শিল্প আর ক্ষুদ্র ঋণের সাফল্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। শুধু এ ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপের সারণি-১ থেকে প্রতীয়মান হয়, বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ক্রমে বেড়ে চলেছে। সারণি-২ থেকে আরও স্পষ্ট হয়, কোন কোন খাতে নারীর অংশগ্রহণ কত।

সারণি-১-এ শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ২০১০ সালে মোট শ্রমশক্তি ছিল ৫৬.৭ মিলিয়ন (৫৪.১ শতাংশ)। পুরুষের সংখ্যা ছিল ৩৯.৫ মিলিয়ন (৩৭.৯ শতাংশ)। নারীর সংখ্যা ছিল ১৭.২ মিলিয়ন (১৬,২ শতাংশ)। শহরে মোট শ্রমশক্তি ছিল ১৩.৩ মিলিয়ন (১২.৪ শতাংশ)। পুরুষের সংখ্যা ছিল ৯.৩ মিলিয়ন (৮.৮ শতাংশ), নারীর সংখ্যা ছিল ৪.৯ মিলিয়ন (৩.৬ শতাংশ)। গ্রামে মোট শ্রমশক্তি ছিল ৪৩.৪ মিলিয়ন (৪১.৭ শতাংশ)। পুরুষের সংখ্যা ছিল ৩০.২ মিলিয়ন (২৯.১ শতাংশ), নারীর অংশগ্রহণ ছিল ১৩.৩ মিলিয়ন (২.৬ শতাংশ)। 
সারণি-২ :অর্থনীতির মূল মূল খাতে নারীর অংশগ্রহণ (শতাংশ হিসাবে)  
কৃষি খাতে পুরুষের অংশগ্রহণ ৪০.৫১ শতাংশ, নারীর অংশগ্রহণ ৫৩.২ শতাংশ। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে পুরুষের অংশগ্রহণ ১২.৫৯ শতাংশ, নারীর অংশগ্রহণ ১৬.৯৬ শতাংশ। খুচরা ব্যবসায় পুরুষ ১৬.৫৪ শতাংশ, নারী ৫.৪৩ শতাংশ। যোগাযোগ খাতে পুরুষ ১০.৭৪ শতাংশ, নারী ০.৪ শতাংশ। ব্যাংক ও ইন্স্যুরেন্সে পুরুষ ১.২২ শতাংশ, নারী ১.৩৭ শতাংশ। জনপ্রশাসন ও ডিফেন্সে পুরুষ ২.১৮ শতাংশ, নারী ১.০২ শতাংশ। শিক্ষা-বিনোদনে পুরুষ ৩.২১ শতাংশ, নারী ৪.৭ শতাংশ। কমিউনিটি ও সেবা খাতে পুরুষের অংশগ্রহণ ৪.১৩ শতাংশ এবং নারীর অংশগ্রহণ ১০.৭৮ শতাংশ।

সূত্রঃ ২০১০ সালের শ্রমশক্তি জরিপ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। 

উল্লেখ্য, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধানতম ক্ষেত্র গার্মেন্ট শিল্পে ৮০ ভাগ কর্মীই নারী। দেশের ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণকারীও নারী। অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের এক গবেষণায় জানা যায়, নারী বিনা পারিশ্রমিক ও কম পারিশ্রমিকে যে পরিমাণ শ্রম দান করে, তা টাকার অঙ্কে জিডিপির শতকরা ৪৮ ভাগ। এই চিত্র নারীর অর্থনৈতিক অবদানের কথা উল্লেখ করে।

তবে আমাদের সন্তুষ্ট হলে চলবে না। কারণ, নারীর অর্থনৈতিক উন্নতি মানে দেশের সার্বিক উন্নতি। তাই উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোতে এবং জাতীয় বাজেটে নারী উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। জাতীয় বাজেটে যে প্রকল্পগুলো নারীদের জন্য রাখা হয় সেখানে তাকে শুধু দুস্থ ও বিত্তহীন নারী হিসেবে না দেখে উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে দেখা উচিত। নারী উন্নয়ন এবং তার ক্ষমতায়নের জন্য একদিকে যেমন দরকার সহযোগী নীতিমালা অন্যদিকে সেই নীতিমালাগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ। শ্রমবাজরে নারীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। যেমন_ অনানুষ্ঠানিক খাতেই নারীদের অংশগ্রহণ বেশি। যার ফলে তাদের আয় কম এবং কাজের নিশ্চয়তাও কম। তা ছাড়া সরকারি চাকরিতে এখনও নারীর অংশগ্রহণ কম। মোট নিয়োজিত নারীর মাত্র ৩.২৫ শতাংশ সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত। আবার শ্রমবাজারে কর্মরত নারীদের অধিকাংশই খণ্ডকালীন কাজে নিয়োজিত। সুতরাং আনুষ্ঠানিক খাতেও আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে হবে। শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের জন্য নারীদের শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়াতে হবে। শুধু শিক্ষার হার বাড়ালেই যথেষ্ট নয়। শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে হবে।

 


ড. ফাহমিদা খাতুন
লেখক :অর্থনীতিবিদ
তথ্যসুত্রঃ সমকাল

 
Our Another Site : Right Way BD | Right Way BD FB Group | Right Way BD FB Page |