Assertion For Justice, Equality And Freedom.

Thursday, March 6, 2014

'উন্নয়নের মূল কথা নারী পুরুষের সমতা'

বিশ্বের সব দেশে নারীরা অধিকার আদায়ের আন্দোলন করছেন। আর একটি দিনকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী নারী আন্দোলন একসূত্রে গাঁথা হচ্ছে। বৈশ্বিকভাবে মোকাবেলার জন্য একটা ইস্যু চিহ্নিত করে একই সুরে কথা বলা হচ্ছে। এভাবে ক্রমাগত আন্তর্জাতিক নারী আন্দোলন শক্তি সঞ্চয় করেছে। আন্তর্জাতিক নারী আন্দোলন জাতীয় নারী আন্দোলনের সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা, বিচ্ছিন্ন কোনো সংগ্রাম নয়।

বাংলাদেশে এখন নারী দিবস পালিত হচ্ছে ভিন্ন মাত্রায়। সরকার, বিভিন্ন নারী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন এবং উন্নয়ন সংগঠনগুলো উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ৮ মার্চ পালন করছে। গণমাধ্যমও ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এবারের ৮ মার্চের স্লোগানের মূল প্রতিপাদ্য_ 'নারীর সমান অধিকার সকলের অগ্রগতির নিশ্চয়তা'। নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সব সম্পদে নারী-পুরুষের সমান অংশীদারি। এখানে যেমন প্রয়োজন রয়েছে পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, তেমনি রয়েছে রাষ্ট্রের দায়িত্ব।


জাতিসংঘ সনদসহ কাগজে-কলমে বিশ্বে নারীদের অধিকারের কথা স্বীকৃত হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। উন্নত বিশ্বে নারীরা শিক্ষায়, কর্মে ও উদ্দীপনায় পুরুষের পাশাপাশি অবস্থান করলেও তাকে তার কর্মক্ষেত্রে ও সমাজজীবনে কমবেশি নির্যাতিত হতে হচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বে শিক্ষায় ও কর্মক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে থাকায় সর্বোপরি ধর্মীয় সংস্কার ও সামাজিক নিষ্পেষণের জাঁতাকলে পড়ে নারী যেমন তার প্রাপ্য অধিকার পাচ্ছে না, তেমনি নির্যাতিত-নিগৃহীত হচ্ছে নানাভাবে।

স্বাধীনতার বিয়ালি্লশ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। সরকার এসেছে, গিয়েছে; কিন্তু নারীর জীবনমানের উন্নতি হয়নি। নারীশিক্ষা, নারীর কর্মসংস্থান, নারীর প্রতি সামাজিক মূল্যবোধের খুব একটা উন্নয়ন ঘটেনি। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রণীত আইনের বাস্তবায়ন ঘটেনি। প্রচলিত আইনের সংস্কারও যথোপযুক্তভাবে হয়নি। আজকের নারী আন্দোলনের মূল দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ্য হচ্ছে, পূর্ণ মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে নারীকে বিবেচনা বা মূল্যায়ন করা। নারী-পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও উন্নত ও সমতাপূর্ণ, বৈষম্যমুক্ত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠা করা, যা গোটা সমাজকে সমঅধিকার ও সমমর্যাদাভিত্তিক করার প্রয়াসকে সাফল্যের পথে অনেকদূর এগিয়ে দেবে।
শুধু বাজেট প্রণয়নই নয়, তার সুষ্ঠু বণ্টন এবং সে সঙ্গে রাষ্ট্র ও সমাজের অভ্যন্তরে নারীর জন্য বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটানো অত্যন্ত জরুরি। নারী-পুরুষের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির বাধা ভেঙে অর্থনীতির মূল স্রোতধারায় নারীকে কী করে সার্থকভাবে যুক্ত করা যায়, নারী সংগঠনগুলো তা বিবেচনায় রেখেই আজকের বাংলাদেশে বর্তমান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

আমাদের সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় নানা আইনে নারীর অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু বর্তমান আর্থসামাজিক ও রাষ্ট্রব্যবস্থার কারণে নারীরা এখনও সাংবিধানিক অধিকার ও আইনানুগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমাদের সংসদে ৩০টি আসন সংরক্ষিত ছিল নারীদের জন্য, বর্তমানে তা বাড়িয়ে ৫০ করা হয়েছে। কিন্তু প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের সুযোগ না থাকায় সত্যিকার নারী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছে না। এ ছাড়া বিবাহবিচ্ছেদ অভিভাবকত্ব ও সম্পত্তির উত্তরাধিকারবিষয়ক আইনগুলোতে নারী-পুরুষের মধ্যে বিরাট ব্যবধান তৈরি করেছে। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষায় এগিয়ে আসা, কর্মক্ষেত্রে উচ্চপদ থেকে তৃণমূল পর্যায়ে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণ, নারীর অধিকার সচেতনতার বিষয়ে জোর দিতে হবে।

 




 দিল মনোয়ারা মনু
লেখক :সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মী
 তথ্যসুত্রঃ সমকাল।

 
Our Another Site : Right Way BD | Right Way BD FB Group | Right Way BD FB Page |