Assertion For Justice, Equality And Freedom.

Tuesday, January 21, 2014

সংকোচহীন সচেতন নারী - খেলতে খেলতে বহুদূর

স্কুলে চলছে বার্ষিক দৌড় প্রতিযোগিতা। ছোট্ট রেহানা সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিল। জিতেও নিল প্রথম পুরস্কার। সবাই তাকে কোলে নিয়ে নাচছে, কেউ হাতে গুঁজে দিল চকলেট। ১৯৯০ সাল। কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী রেহানা তখন ভাবল, ‘আরে, এ তো দেখি ভারি মজার ব্যাপার! খেলায় জিতলে এত আদর পাওয়া যায়।’ সেদিনই সিদ্ধান্ত নেওয়া—খেলাধুলা করবেন। কোনো পদক আর পুরস্কারের লোভে নয়, সামান্য আদর পেতেই খেলার জগতে নাম লেখালেন রেহানা। হলেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অ্যাথলেট। 



রেহানা পারভীনকে অলরাউন্ডার বলাই যায়। খেলেছেন কাবাডির জাতীয় দলে। তবে কাবাডির চেয়ে হ্যান্ডবলের রেহানাকেই বেশি চেনে ক্রীড়াঙ্গন। একসময় ফুটবলও খেলতেন। ২০০৬ সালে কলম্বোতে দশম সাফ গেমসের কাবাডি দলে খেলেছেন, সেবার বাংলাদেশের ব্রোঞ্জ পদক অর্জনে বড় অবদান ছিল রেহানার। একই বছর মেয়েদের এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল টুর্নামেন্টের বাছাই পর্বে খেলতে যান ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। উড়িষ্যায় আমন্ত্রণমূলক প্রমীলা ফুটবলে সাতটি প্রদেশের সঙ্গে খেলে বাংলাদেশ। সেখানে দুটি প্রদেশের বিপক্ষে ম্যাচ সেরা রেহানা। ফিফার এলিট রেফারির কোর্সটা সেরেছেন ২০০৯ সালে। কোর্স করেছেন ভলিবল রেফারিংয়েরও। নেপালে বাংলাদেশ ভলিবল দলের একটি ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। কাবাডির কোচ হওয়ার প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পেয়েছেন ‘রাষ্ট্রপতি আনসার সেবা পদক’। বর্তমানে আনসার মহিলা ফুটবল দলের কোচ তিনি। তিন ভাই, চার বোনের মধ্যে রেহানাই সবার ছোট। এ জন্য সবাই একটু বেশিই আদর করতেন তাকে। শৈশবের দুরন্তপনায় কখনো বাধা দেয়নি পরিবার। বরং উপভোগই করতেন সবাই। ছোটবেলায় সাইকেল চালানো শিখেছেন। লুকিয়ে লুকিয়ে বড় ভাইয়ের মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যেতেন কাকডাকা ভোরে। অনেকে তাঁর সাইকেল, মোটরসাইকেল চালানো মোটেও ভালো চোখে দেখতেন না। কুড়িগ্রাম স্টেডিয়ামে অনুশীলনে যেতেন ট্র্যাকস্যুট, ট্রাউজার পরে। তা দেখেও অনেকে হেসেছেন। তাতেও দমে থাকেননি।
 
দিন বদলে গেছে। মেয়েরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। গণমাধ্যমের আলোটাও তাঁদের ওপর পড়ছে। ২৫ বছরের খেলার ক্যারিয়ারের শুরুতে এসব পাননি। তা নিয়ে বেশ আফসোস রেহানার। তবে এটা ভেবে তাঁর ভালো লাগে যে একটা মেয়ে খেলা থেকে উপার্জন করে মায়ের হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন। বললেন, ‘আমাদের মেয়েরা এখন অনেক ভালো আছে। আর্থিক সমস্যা এখনো পুরো কাটেনি। তারপরও একটা মেয়ে ঢাকায় এসে খেলে আয় করছে, তার মা সেটা পেয়ে খুশি হচ্ছেন।’ রেহানা নিজেই নতুন নারী খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। বিভিন্ন ক্লাবে খেলার ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন অনেককে। ব্যক্তিগত জীবনে রেহানা এখনো অবিবাহিত। বিয়ের প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, ‘কীভাবে যে সময়টা পার হয়ে গেল ভেবেই পাইনি! আমি চাইনি দুই নৌকায় পা দিতে। তাহলে হয়তো সংসার সামলাতে গিয়ে খেলাটাই হতো না।’
 
সারাক্ষণ খেলা নিয়ে থাকতেন বলে মা প্রায়ই বলতেন, ‘এত যে খেলা খেলা করিস। তুই কি দিল্লি যাবি?’ কথার কথা হিসেবেই মা এমনটা বলতেন। তাই তো ফুটবল খেলতে দিল্লি যাওয়ার সময় বিমানে উঠেই কেঁদে ফেলেন রেহানা। মা তখন এই পৃথিবীতেই নেই। মনে মনে মায়ের উদ্দেশে বলছিলেন, ‘মা, তুমি যদি বেঁচে থাকতে, তাহলে দেখতে তোমার মেয়ে দিল্লি গেছে।’ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসে মাকে স্মরণ করে আরেকবার চোখের জল মুছলেন রেহানা।




সুত্রঃ প্রথম আলো, বাংলাদেশ 

 
Our Another Site : Right Way BD | Right Way BD FB Group | Right Way BD FB Page |