Assertion For Justice, Equality And Freedom.

Wednesday, January 15, 2014

ঘূর্ণিঝড় সিডর - ২০০৭, জীবনের প্রতীক সিডর সরকার...

২৪০ কিলোমিটার গতির ঘূর্ণিঝড়। ১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস। সাড়ে তিন হাজার মানুষের মৃত্যু। ৫৫ হাজার মানুষ আহত। ৮৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাত। কয়েক ঘণ্টার তাণ্ডবে লন্ডভন্ড বাংলাদেশের উপকূলীয় ১১ জেলা। সিডর নামের সেই ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে আঘাত হেনেছিল বাগেরহাটের শরণখোলার বলেশ্বর নদ দিয়ে। তারই পার্শ্ববর্তী উপজেলা মংলার চিলা ইউনিয়ন। সেই দিন বিকেলে শত মানুষের সঙ্গে জীবন বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটেছেন সাথী সরকার ও জর্জি সরকার। সাথী সরকার অন্তঃসত্ত্বা। স্থানীয় সেন্ট মেরিস গির্জাসংলগ্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হয় তাঁদের। সেই ঘোর দুর্যোগের রাতে ভোরের আলো ফোটার আগমুহূর্তে জন্ম নিল এক শিশু। ঝড়-ঝঞ্ঝাকে পরাস্ত করে টিকে থাকা উপকূলবাসীর সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠল সেই শিশু। সাথী দম্পতি তার নাম রাখলেন সিডর। সিডর সরকার। দেখতে দেখতে ছয় বছর পার করে সাত বছরে পা দিয়েছে সেদিনের ছোট্ট সিডর। এ বছর শিশু শ্রেণী থেকে সব বিষয়ে এ প্লাস পেয়ে প্রথম শ্রেণীতে উঠেছে সে। তবে ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাত সয়ে পৃথিবীর মুখ দেখলেও দারিদ্র্য নামক ঝড়ের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে  তাকে।


সিডরের দাদি রিভা সরকার (৫৫) গতকাল মঙ্গলবার আবার প্রথম আলোকে গর্ব করে বললেন, সিডর ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝড় থেমে যায়। কিন্তু জীবনের ঝড় মাথায় নিয়েই সিডরকে এখনো এগিয়ে যেতে হচ্ছে। সিডরের বাবা জর্জি সরকার (৩১) ও মা সাথী সরকার (২৬) বছর দুই আগে ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ নিয়েছেন। সিডর এখন থাকছে দাদির কাছে। সে এলাকার দিশারী শিশু শিক্ষানিকেতনে পড়ে। সাথী দম্পতি মাস শেষে যে টাকা পাঠান, তা দিয়ে চলে সংসার ও সিডরের পড়াশোনা। সিডরের দাদা রঞ্জিত সরকার সুন্দরবনে মাছ ধরেন। আয় তেমন নেই। দাদা বললেন, তিন বছর ধরে সিডর কানের যন্ত্রণায় খুব কষ্ট পাচ্ছে। টাকার অভাবে বড় ডাক্তার (বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক) দেখাতে পারছেন না।  গতকাল শেষ বিকেলে রঞ্জিতের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, সিডর উঠানে খেলছে। বড় হয়ে কী হবে—প্রথাগত এই প্রশ্নে ছোট্ট সিডর খেলতে খেলতে উত্তর দেয়, ‘মানুষ হব।’ তারপর কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে, ‘ফাদার হব। মানুষের সেবা করব।’

ঘুর্নিঝড়ে মানুষের ভোগান্তি, আপডেটঃ ২৩ মে, ২০১৩, প্রথম আলো : 

ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের পর সাত দিন পার হলেও বরগুনার বেশির ভাগ এলাকার জলাবদ্ধতা কমেনি। বরগুনা সদর ও তালতলীতে এখনো অনেক পরিবার পানিবন্দী। বরগুনায় এত দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা আগে কখনো হয়নি। সিডর-আইলা এবং ষাট ও সত্তরের দশকে প্রলয়ংকরী বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ে বিস্তীর্ণ উপকূলে ১৫-২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলেও ৮-১০ ঘণ্টার মধ্যে পানি নেমে যায়। কিন্তু এবারই প্রথম দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে এই এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। এ ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কাজ করেন এমন স্থানীয় ব্যক্তিরা। এ জন্য জেলার প্রায় ৭০০ খাল দখলের কারণে সরু হওয়া এবং সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত স্লুইসগেট ও বাঁধ মেরামত না হওয়াকে দায়ী করেন তাঁরা।

সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সোবহান মৃধা বলেন, ভাটার সময় যে পানি নামে ভাঙা স্লুইসগেট ও বাঁধ দিয়ে, জোয়ারের সময় তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পানি ওঠে। ফলে জলাবদ্ধতা কমছে না। তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের বড় আমখোলা গ্রামের বাসিন্দা ফোরকান আকন অভিযোগ করেন, বড় আমখোলা, লাউপাড়া ও কবিরাজপাড়া—এই তিন গ্রামের মানুষ সাত দিন ধরে পানিবন্দী। বড় আমখোলা এলাকায় তিন গ্রামের পানি নিষ্কাশনের জন্য আছে একটি কালভার্ট। সেটি স্থানীয় কয়েকজন দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেখানে মাছ ধরার জন্য ইচ্ছামতো পানি ওঠানামা করাচ্ছেন। এতে এই তিন গ্রামের প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দী।

রেড ক্রিসেন্টের ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি’র সদর উপজেলা দলনেতা জাকির হোসেন বলেন, সিডরে জেলার বেশির ভাগ স্লুইসগেট অকেজো হয়ে গেছে। বেশির ভাগ স্লুইসগেটে জলকপাট না থাকায় পানি ওঠানামায় কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ ছাড়া সিডর ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলোও মেরামত হয়নি। ফলে এবার জলোচ্ছ্বাস ও প্রবল বর্ষণে জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তিনি বলেন, যেসব প্রাকৃতিক খাল দিয়ে এসব পানি ভাটায় নেমে যাওয়ার কথা, সেসব খালের বেশির ভাগ দখলের কারণে সংকুচিত হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টি ও জোয়ারে যে পরিমাণ পানি লোকালয় ও ফসলি মাঠে জমে ভাটার সময় তার অর্ধেকও নামতে পারে না। এতেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বরগুনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা সদর, আমতলী ও পাথরঘাটার ২২৫টি স্লুইসগেট ষাটের দশকে নির্মাণের পর দীর্ঘদিন সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এগুলোর ভিত দুর্বল হয়ে পড়েছে। সিডর ও আইলার সময় পানির প্রবল তোড়ে বরগুনা সদরের নিশানবাড়িয়া, বরইতলা, খাজুরতলা ও গুলিশাখালী; পাথরঘাটার রূপদোন, ছোনবুনিয়া, ছোট পাথরঘাটা, ঘুটাবাছা, কালমেঘা, পদ্মা, লাঠিমারা, কোড়ালিয়া, মাছেরখাল, ছৈলাতলা, বাদুরতলা, নিজলাঠিমারা ও চরদুয়ানি এবং আমতলী উপজেলার জয়ালভাঙা, তেঁতুলবাড়িয়া, কড়ইবাড়িয়া, পচাকোড়ালিয়া, আরপাঙ্গাশিয়া, ঘটখালী, হলদিয়া ও গুলিশাখালী এলাকার স্লুইসগেটগুলো অকেজো হয়ে গেছে। মহাসেনের পর এসব এলাকাই ব্যাপকভাবে জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। পাউবো বরগুনার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আকবর হায়দার ভূঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের রাস্তা কেটে অথবা স্লুইসগেট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য অনুরোধ করেছি।






সুত্রঃ প্রথম আলো, বাংলাদেশ

 
Our Another Site : Right Way BD | Right Way BD FB Group | Right Way BD FB Page |