Assertion For Justice, Equality And Freedom.

Saturday, September 28, 2013

আবার পায়ের ওপর দাঁড়াবেন ১০৭ জন !

রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর বিমের তলায় আটকা পড়েছিলেন সপ্তম তলায় কর্মরত শ্রমিক রেহানা আক্তার (২০)। পরদিন ভোরবেলায় উদ্ধার পেলেও হারিয়েছেন দুই পা। সেই রেহানা গতকাল শনিবার নতুন এক জোড়া পা পেয়েছেন। নতুন পায়ে সবার সামনে কারও সাহায্য ছাড়া হেঁটেছেনও। রেহানাসহ রানা প্লাজা ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় পা হারানো ১০৭ জনকে কৃত্রিম পা লাগিয়ে দিয়েছে থাইল্যান্ডের প্রোসথেসিস ফাউন্ডেশন অব এইচআরএইচ দ্য প্রিন্সেস মাদার। ১০৭ জনের মধ্যে পাঁচজন রানা প্লাজার ধসে পা হারিয়েছেন। ফাউন্ডেশনের ৬৩ জন চিকিৎসক ও কারিগরি কর্মী রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) একটি ভ্রাম্যমাণ কারখানা বসিয়ে টানা এক সপ্তাহ কাজ করে এসব কৃত্রিম পা তৈরি করেন। স্বল্পমূল্যে কৃত্রিম পা বানানো বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি এটি। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাইকে সহযোগিতা করা। বাংলাদেশে আসা ৬৩ সদস্যের দলটির নেতৃত্ব দেন ফাউন্ডেশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ভাজারা রুজিওয়েতপংসতোরা। সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর থাই সরকার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃত্রিম পা লাগানোয় সহযোগিতার প্রস্তাব করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১০৭ জন পেলেন কৃত্রিম পা। রোগী বাছাইয়ের কাজ করেছে পঙ্গু হাসপাতাল আর পুরো কর্মসূচিটিতে সমন্বয়কের কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক জুলফিকার আলী।

গত এক সপ্তাহ নির্বাচিত ব্যক্তিদের মাপজোক নিয়ে গতকাল পঙ্গু হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের পা হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজনকে পা পরিয়ে দেওয়া হয়। কৃত্রিম পা পরে হাঁটার জন্য অনুশীলন করতে হয়। যাঁরা এখনো হাঁটার চর্চা করেননি, তাঁরা পা না পরে বাড়ি নিয়ে গেছেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিয়োজিত থাই রাষ্ট্রদূত মাদুরোপোছানা ইত্তারং বলেছেন, বাংলাদেশের পঙ্গু হয়ে যাওয়া মানুষের জন্য থাই সরকার সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। তিনি এ দফার কর্মসূচিকে বলেছেন প্রথম পর্বের কাজ। পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক খন্দকার আবদুল আউয়াল রিজভী থাইল্যান্ডের প্রতিনিধিদলকে ধন্যবাদ জানান। যাঁরা কৃত্রিম পা লাগিয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে বলেন, ‘দৃঢ় মনোবল দরকার। তাহলেই আপনারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন। কৃত্রিম পা নিয়ে অনেকে খেলাধুলাও করেছেন। আপনারাও পারবেন।’

যেন নতুন জীবন ফিরে পাওয়া: রেহানা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই দিন প্র্যাকটিস কইরাই আইজকা হাঁটছি। খুবই ভয় পাইছি, যদি পইড়া যাইতাম। তবু মেলা দিন পরে একা একা হাঁটলাম।’ রেহানা এখনো সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) চিকিৎসাধীন। হাঁটুর ওপর থেকে বাঁ পা হারিয়েছিলেন রানা প্লাজার শ্রমিক শিল্পী বেগম। গতকাল তিনিও পেলেন কৃত্রিম একটি পা। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন সেটা পরে। কিন্তু মুখে ছিল হাসির আভা। বললেন, ‘নতুন পা লাগানোর পর থেকি মেয়ের সাথে দেখা হয়নি। সে স্কুলে ছিল। দেখলে যে কী খুশি হবে।’ পা পেয়েছে পাঁচ বছরের ছোট্ট ইতিমণিও। যাত্রাবাড়ীতে ট্রাকের তলায় পড়ে পা হারিয়েছে সে। ধুঁকে ধুঁকে কাটছিল ছটফটে শিশুটির জীবন। গতকাল এক চিকিৎসক যখন তাকে পা’টা পরিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন তার চোখে-মুখে হাসি। যেন পা’টা একবার ঠিকঠাকমতো লেগে গেলেই দেবে এক ছুট।

মাত্র চার বছর বয়সে গ্যাংগ্রিনে দুই পা-ই হারায় ১৬ বছরের তানিয়া আক্তার। এত দিন হাঁটুতে ভর দিয়ে বাসার ভেতরে হাঁটলেও এখন নতুন দুই পা পেয়েছে সে। তবে এখনো নতুন পায়ে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের লউর ফতেহপুর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেবে তানিয়া। তার মা মাজেদা বেগম বলেন, ছোটবেলায় পা কাটা পড়ার পর থেকেই ছোট মেয়েটিকে নিয়ে তিনি খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। ফুটফুটে একটা মেয়ে, কিন্তু দুই পা-ই নেই। টাঙ্গাইলের ১৭ বছরের কলেজপড়ুয়া আরেফিন রায়হান গত বছর মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে যমুনা সেতুর ওপর দুর্ঘটনায় ডান পা হারায়। অনেকটাই ভেঙে পড়েছিল আরেফিন। নতুন পা পেয়ে গতকাল থেকেই হাঁটা শুরু করেছে। গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও দিতে পারেনি। এবার ভালো প্রস্তুতি নিয়েই পরীক্ষা দেবে বলে জানায়। রানা প্লাজা ধসে হাত-পা হারানো আরও ২০ জন সাভারের দুটি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিয়েছেন ও নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে নয়জনকে সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি) কৃত্রিম হাত-পা সংযোজন করে দিয়েছে। আর দুই পা হারানো পাখি বেগম সিডিডিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া সিআরপিতে চলছে অঙ্গ হারানো ১০ জনের চিকিৎসা।




Source: Doinik Prothom Alo

 
Our Another Site : Right Way BD | Right Way BD FB Group | Right Way BD FB Page |