Assertion For Justice, Equality And Freedom.

Sunday, July 7, 2013

একদিনের নারী অবমাননার কিছু খন্ডচিত্র

প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ব্লেড দিয়ে জখম! :

প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক স্কুলছাত্রীর (১৪) দুই হাত ব্লেড দিয়ে জখম করেছেন এক তরুণ। গতকাল শনিবার সকালে মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার নবগ্রামে এই ঘটনা ঘটে। ওই তরুণের নাম জাহিদ হোসেন (২২)। সদর উপজেলার চর মকিমপুর গ্রামের জাহিদ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের স্নাতক (পাস) প্রথম বর্ষের ছাত্র। সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়েটি ও তার স্বজনেরা জানান, দুই বছর ধরে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে জাহিদ তাকে উত্ত্যক্ত করেন। গতকাল সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় নবগ্রাম এলাকায় জাহিদ মেয়েটির পথ আটকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় জাহিদ প্যান্টের পকেট থেকে ধারালো একটি ব্লেড বের করে মেয়েটির দুই হাতে দুটি পোঁচ দেন। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান স্থানীয় লোকজন। 

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মেয়েটির ডান হাতে দুটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। বাঁ হাতেও মারাত্মক আঘাত পেয়েছে। দুই হাতেই ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। মেয়েটির ভাই প্রথম আলোকে বলেন, ‘উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি আমরা আগেই জানতাম। কিন্তু বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে বোনকে সাবধানে চলাচলের উপদেশ দিয়েছিলাম।’ নবগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান লক্ষ্মী চ্যাটার্জি জাহিদকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, মোটরসাইকেল নিয়ে বখাটেরা পৌর এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে ভিড় জমায়। মেয়েরা প্রায়ই ওই বখাটেদের উত্ত্যক্তের শিকার হয়ে আসছে। এসব বিষয় নিয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় বারবার আলোচনা করা হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। সদর থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ওই ছাত্রীর ভাই জাহিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। জাহিদকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

 

মাগুরায় স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার :

মাগুরা সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ওই ছাত্রীকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রতিবেশী জিল্লুর রহমানের (২৫) বিরুদ্ধে মামলা হলেও পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মাগুরা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিশ্বজিৎ রায় প্রথম আলোকে জানান, জিল্লুর শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ওই ছাত্রীকে কৌশলে বাড়ির পাশে কলাবাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে পালিয়ে যান। পরে ওই ছাত্রী বাড়ি ফিরে লজ্জা-অপমানে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ঘটনাটি দেখতে পেয়ে ছাত্রীর ফুফু তাকে নিবৃত্ত করে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। এসআই জানান, গতকাল শনিবার মাগুরা সদর হাসপাতালে ওই ছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। জিল্লুরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

 

প্রেম করে বিয়ে, জোর করে তালাক, মেয়ের মৃত্যু : 

প্রেম করে বিয়ে করার পর সালিস বৈঠকের মাধ্যমে ছেলের কাছ থেকে মেয়েকে নিয়ে আসার পর বাবার বাড়িতে গতকাল শনিবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, মেয়েকে বেঁধে রেখে তাঁকে জোর করে তালাকনামায় স্বাক্ষর করানো হয়েছে। ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বানিহালা ইউনিয়নের লাউটিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও পরিবার জানায়, ওই গ্রামের সমেশ আলীর ছেলে রূপ মিয়ার (২৪) সঙ্গে প্রেমানন্দ নমদাসের কন্যা বাসনা রানী নমদাসের (১৮) প্রেম হয়। পরে গত ২২ জুন তাঁরা পালিয়ে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় ২৬ জুন মেয়ের বড় ভাই অমূল্য নমদাস (৪০) তারাকান্দা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে গত সোমবার এ ব্যাপারে স্থানীয় মাতাব্বর প্রদীপ চক্রবর্তীর নেত্বত্বে একটি সালিস বৈঠক হয়। বৈঠকে বানিহালা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত উপস্থিত ছিলেন। সালিসে বাসনা প্রথমে তাঁর বড় ভাইয়ের সঙ্গে বাড়িতে যেতে রাজি হননি। পরে বৈঠকে মেয়েকে রাজি করিয়ে বড় ভাইয়ের সঙ্গে নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

প্রতিবেশী লোকজন জানান, বাড়িতে মেয়েটিকে একটি টিনের চালাঘরে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এমনকি রাতে ঘরের দরজায় তালা দিয়ে রাখত তাঁর পরিবার। এতে মেয়েটি রাগে ও ক্ষোভে ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতেন না। গত বৃহস্পতিবার মেয়ের পরিবারের সদস্যরা বাসনাকে একটি তালাকনামায় স্বাক্ষর করতে বললে তাতে মেয়েটি রাজি হননি। পরে একপর্যায়ে তিনি রাজি হন। গতকাল মেয়েটি হঠাৎ তাঁর নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তাঁর নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। অবশেষে তিনি মারা যান।  অমূল্য নমদাস বলেন, বৈঠকের পর বাসনাকে ঘরে এনে কয়েক ঘণ্টা রশি দিয়ে বেঁধে রাখলেও পরে খুলে দেওয়া হয়। বাসনা তালাকনামায় স্বাক্ষর করতে প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজি হন।
ছেলের মা মোমেনা খাতুন বলেন, ‘গত সোমবার এক সালিস বৈঠকে আমার ছেলের কাছ থেকে তাঁরা মেয়েকে নিয়ে যান। এটুকুই আমরা জানি।’ আবুল হাসনাত বলেন, ‘আমরা সালিস করে মেয়েকে তাঁর বড় ভাইয়ের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি। প্রথমে মেয়েটি রাজি না হলেও পরে তিনি তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে যেতে রাজি হন। শুনেছি, মেয়েটিকে ঘরে প্রায়ই তালাবদ্ধ করে রাখত তাঁর পরিবার।’ তারাকান্দা থানার এসআই এয়াকুব আলী জানান, বাসনার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

 

 

 

 

 Date: 07-07-2013

Source: Doinik Prothom Alo

 
Our Another Site : Right Way BD | Right Way BD FB Group | Right Way BD FB Page |