Assertion For Justice, Equality And Freedom.

Saturday, July 27, 2013

নবজাতক ও বাড়ন্ত শিশুর যত্ন

প্রথম সন্তানের জন্মের পর প্রসুতি মাতা নবজাতকের যত্ন ও অপ্রত্তাশিত অসুখ-বিসুখ নিয়ে অনেক সময় বিপাকে পরে থাকেন। অনেক যত্ন আর প্রতিক্ষার পর যখন মায়ের কোলে তার সবচেয়ে আদরের সন্তান এসে যায়, তখন প্রতিটা মা ই চান, তার সন্তান সব দিক দিয়ে সুস্থ থাকুক এবং স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠুক। কিন্তু অপ্রত্তাসিত পরিস্থিতি ও শিশুদের অসুখ-বিসুখ মায়েদেরকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। তাই মায়েদের এইসব দুশ্চিন্তা দূর করতে নবজাতক  ও বাড়ন্ত শিশুর যত্ন এবং অসুখ-বিসুখের নানান দিক নিয়ে আমাদের প্রতিবেদন :


নবজাতকের মাথার পেছনে ফোলা?

কোনো কোনো শিশুর জন্মের পর মাথার পেছনে বা পিঠের নিচের দিকে কোনো একটি অংশ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে থাকে। এ নিয়ে অভিভাবকেরা আতঙ্কে ভোগেন ও বিপাকে পড়েন। এটি ভ্রূণের অঙ্গসংগঠনজনিত একটি স্নায়ু সমস্যা। এই ফোলা অংশের ভেতর স্নায়ু বা স্নায়ুরস থাকলে তাকে মেনিনগোসিল বলা হয়। এই সমস্যার জন্য অনেক সময় শিশুর হাত-পা নাড়াতে অসুবিধা বা প্রস্রাব-পায়খানার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এর সঙ্গে থাকতে পারে মাথার ভেতর পানি জমে মোটা হয়ে ওঠা বা হাইড্রোকেফালাস, বাঁকা পা বা ক্লাব ফুট ইত্যাদি জন্মগত ত্রুটি। এসব ত্রুটির কারণ বলা মুশকিল। তবে গর্ভকালীন সময় উচ্চমাত্রার জ্বর, সংক্রমণ ও নানা ধরনের ওষুধ খাওয়ার কারণে এসব ত্রুটি হতে পারে। এটি জন্মগত ত্রুটি হলেও বংশগত নয়। গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করলে শিশুর এসব জন্মগত ত্রুটি অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়। এ সময় নিয়মিত ফলিক অ্যাসিড সেবন ও প্রচুর তাজা শাকসবজি খাওয়া উচিত। 
- ডা. সুদীপ্ত কুমার মুখার্জি , নিউরোসার্জারি বিভাগ, জাতীয় ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতাল।


শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে মায়ের বুকের দুধ পাচ্ছে কি না তা বোঝার উপায় কী?

 শিশু কাঁদলেই যে সে দুধ পাচ্ছে না এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। শিশু যদি ২৪ ঘণ্টায় ছয় বার প্রস্রাব করে তবে আপনি নিশ্চিন্ত হতে পারেন যে বাচ্চা পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে। এ ছাড়া শিশু পরিতৃপ্ত থাকবে এবং ধীরে ধীরে তার ওজন বাড়তে থাকবে। তবে জন্মের পর প্রথম ১৫-২০ দিন শিশুর ওজন সাধারণত একটু কমে, তারপর বাড়তে শুরু করে। একটা জিনিস অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে, সেটা হলো দুধ খাওয়ার সময় সে ঠিকমতো বড় হাঁ করেছে কি না। l       
-ডা. নন্দলাল দাশ, শিশু বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। 



ছয় মাস পরে কী খাওয়াবেন?

বয়স পেরিয়েছে ছয় মাস। শিশুর প্রধান খাবার মায়ের বুকের দুধ তো খাবেই, এ সময় থেকে অন্য খাবারও তাকে দিতে হবে। ছয় মাসের পর থেকে শিশুর প্রথম খাবার অবশ্যই শর্করা দিয়ে শুরু করা উচিত। যেমন নরম ভাত, আলু সেদ্ধ, হজমে সমস্যা না হলে ধীরে ধীরে ফল সেদ্ধ করে দেওয়াটা ভালো। যেমন: আপেল, গাজর, আঙুর, পাকা কলা, পাকা পেঁপে, সেদ্ধ মিষ্টি কুমড়া, সুজি ইত্যাদি।  

শিশুর খাবার ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে বারডেম হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান তাহমিনা বেগম বলেন, ‘শিশুকে প্রতিদিন নতুন রান্না করা খাবার খাওয়াতে হবে। ফ্রিজে রাখা বা বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না। শিশুর খাবার খাওয়ানোর বাটি, চামচ ও যিনি খাওয়াবেন তাঁর হাত অবশ্যই পরিষ্কার থাকতে হবে।’ শিশুকে ছয়-নয় মাস পর্যন্ত অন্য খাবার দিনে তিনবার খাওয়াতে হবে। শিশুকে নতুন খাবার দেওয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখুন, শরীরের কোথাও র‌্যাশ, বমি বা ঢেকুরের পরিমাণ বেশি হচ্ছে কি না। বাচ্চার কান্নার পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে গেছে বা পেট ফুলেছে, প্রস্রাব-পায়খানায় পরিবর্তন অনুভব করলে সেই খাবার বন্ধ করতে হবে। অবস্থা বেগতিক মনে হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ৯-১২ মাস পর্যন্ত শিশুকে খাবার দিতে হবে পাঁচ থেকে সাতবার। এই সময় সবজির খিচুড়ি দেওয়াটা খুব উপকারী। সবজি, চাল, ডাল, সয়াবিন তেলে সমস্যা না হলে মুরগির ছোট্ট এক টুকরা মাংস, কলিজা খিচুড়িতে মিশিয়ে খাওয়ান। সবজির মধ্যে আলু, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, গাজর, মূলা, শালগম, পেঁপে খাওয়ানো যেতে পারে। 

- ফারহানা মোবিন।

 

 শিশুর হঠাৎ জ্বর :

জ্বর কোনো রোগ নয়। এটি রোগের উপসর্গ। জ্বরের অন্যতম কারণ নানা ধরনের সংক্রমণ। শিশুদের  সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা, আমাশয় থেকে শুরু করে হাম, বসন্ত এবং আরও জটিল কোনো সংক্রমণ যেমন, নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, মেনিনজাইটিসের প্রথম লক্ষণ জ্বর। তাই জ্বরকে অবহেলা করা ঠিক নয়।

 শিশুর জ্বর হলে লক্ষ করুন:

১.   ঘাড়ে শক্তভাব, সামনে-পেছনে নড়ায় সমস্যা মস্তিষ্কের সংক্রমণ বা মেনিনজাইটিসের লক্ষণ।
২.   কাশি ও শ্বাসকষ্ট, ঘন ঘন শ্বাস, বুকের খাঁচা ভেতরে ঢুকে যাওয়া, বুকে শব্দ ইত্যাদি হতে পারে নিউমোনিয়ার লক্ষণ।
৩.   শরীরে দানা, দাগ, ফুসকুড়ি থাকলে হাম বা বসন্ত কি না, দেখে নিন। তবে ডেঙ্গু, ওষুধের প্রতিক্রিয়া বা মারাত্মক অ্যালার্জিতে ত্বকে এমন দানা থাকতে পারে।
৪.   শিশু জ্বর সত্ত্বেও স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া ও আচরণ করছে কি না, খেয়াল করুন। শিশু যদি নেতিয়ে পড়ে, অর্ধচেতন দেখায়, শুষ্ক ও পানিশূন্য দেখায়, খিঁচুনি হয় বা শ্বাসকষ্ট হয়, তবে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।বেশির ভাগ ভাইরাসজনিত জ্বর কয়েক দিনের মধ্যে সেরে যায়। সাত দিনের বেশি স্থায়ী হলে তা টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু হেমোরেজিক বা মারাত্মক অন্য রোগের জন্য হতে পারে।গা গরম হলেই জ্বর নয়। শিশুর বগলের নিচে থার্মোমিটার তিন-পাঁচ মিনিট রাখার পর দেহের তাপমাত্রা যদি ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি পাওয়া যায়, তবে জ্বর আছে ধরে নিতে হবে।

বাড়িতে কী করবেন :

l যে বাচ্চা বুকের দুধ পান করে, তাকে বারবার বুকের দুধ দিন।
l  স্বাভাবিক তরল খাবার ও প্রচুর পানি পান করান, যাতে শরীর পানিশূন্য না হয়।
l শিশুর ওজন ও ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী প্যারাসিটামল খাওয়ান বা সাপোজিটরি ব্যবহার করুন।
l ছোট শিশুকে সর্দিকাশির সিরাপ, যাতে জ্বর কমানোর উপাদানও আছে, তা সেবন করানো উচিত নয়। এতে জ্বরের ওষুধের ‘ওভার ডোজ’ হয়ে যেতে পারে। 

l      শিশুর ঘরের তাপমাত্রা আরামদায়ক (১৮ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রাখুন। জানালা খুলে রাখুন, যথেষ্ট বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন। প্রয়োজনে ফ্যান ছেড়ে দিন। অতিরিক্ত কাপড়-চোপড় ও কাঁথা বা চাদরের প্রয়োজন নেই। বিশেষত, মাথা ঢেকে রাখবেন না, কারণ ছোট্ট শিশুদের তাপ মাথা থেকেই বেশি নির্গত হয়। জ্বর ছাড়ার জন্য তাপ নির্গত হওয়াটা জরুরি।  
- ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, শিশুরোগ বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

 

শিশুর ডায়রিয়া সারছে না? :

শিশুদের ডায়রিয়া সাধারণত স্বল্পস্থায়ী। পানিশূন্যতা পূরণ, ঘন ঘন বুকের দুধ ও স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানো ছাড়া আর কোনো চিকিৎসার দরকার হয় না। ৭-১০ দিনের মাথায় প্রায় সব বাচ্চা সুস্থ হয়ে ওঠে। তা ছাড়া বেশির ভাগ ডায়রিয়া ভাইরাসজনিত বলে অ্যান্টিবায়োটিকেরও প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু দুই সপ্তাহের পরও যদি ডায়রিয়া না সারে এবং শিশু গুরুতর বা মধ্যমমাত্রার পানিস্বল্পতায় ভোগে, তবে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত।

—দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়ায় ভোগা শিশুর রোগের কারণ নির্ণয় করার চেষ্টা করতে হবে এবং তার প্রতিকার করতে হবে। শিশুর পানি ও অন্যান্য খাবার বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন উপায়ে প্রস্তুত বা পরিবেশন করা হয় কি না, লক্ষ করুন।
—শিশুর ওজন কমে যাচ্ছে কি না, পানিশূন্যতায় ভুগছে কি না, লক্ষ রাখুন।
—শিশুর খাদ্যতালিকায় প্রয়োজনমতো ক্যালরি, আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে কি না, দেখুন। প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেলে তার ক্ষতিগ্রস্ত আন্ত্রিক ঝিল্লির পর্দা আবার তৈরি হতে পারে এবং তার হজমশক্তির উন্নতি হয়।

—এমন খাবার বা পানীয় শিশুকে খেতে দেবেন না, যা তার হজম হয় না বা মল নরম করে।

—যেসব শিশু বুকের দুধ পান করে না, তার খাবারে গাভির দুধ বা ল্যাকটোজসমৃদ্ধ উপাদান কমিয়ে আনা দরকার। অনেক সময় শিশুর ল্যাকটোজ অসহনশীলতা থাকে ও বারবার ডায়রিয়া হয়।

—দেড় মাস থেকে ছয় মাস বয়সের মধ্যে এক মাস বিরতিতে দুই ডোজ রোটা ভাইরাস টিকা খাওয়ানো হলে তা ডায়রিয়া থেকে অনেকটাই সুরক্ষা দিতে পারে।

—ডায়রিয়া দীর্ঘমেয়াদি হলে, মলের সঙ্গে রক্ত গেলে বা ওজন দ্রুত কমতে থাকলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

—ডায়রিয়া সেরে যাওয়ার পর ভিটামিন ও খনিজ পরিপূরক এবং জিংক ট্যাবলেট ১০ দিনের জন্য সেবন করতে হবে।
- ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, শিশুরোগ বিভাগ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

  

 শিশুদের কত দিন পরপর কৃমির ওষুধ খাওয়ানো উচিত?  

 আমাদের দেশে দুই বছরের বেশি বয়সের শিশুদের প্রতি ছয় মাস পরপর এক ডোজ কৃমির ওষুধ খাওয়ানো উচিত। কেননা, আমাদের গ্রাম ও শহর দুই জায়গাতেই শিশুর অপুষ্টির একটি প্রধান কারণ হলো কৃমি। দুই বছরের কম বয়সে উপসর্গ থাকলে বা কৃমির উপস্থিতির প্রমাণ পেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়াতে পারেন।   

-অধ্যাপক তাহমীনা বেগম শিশু বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল।

 

 শিশু জন্মের পর মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা কী?

 সন্তান জন্মের পর, সেটা অস্ত্রোপচার আর স্বাভাবিক প্রসবই হোক, মায়েদের খুব কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। পানিশূন্যতা, কম নড়াচড়া ও নানা রকম ওষুধের প্রভাবে এটি হয়। এ থেকে অনেক হার্নিয়া, পাইলস ইত্যাদি জটিলতাও দেখা দেয়। এ সময় প্রচুর পানি ও দুধ পান করবেন। প্রচুর আঁশযুক্ত খাবার খাবেন। একটু হাঁটাচলা করবেন। প্রয়োজনে ল্যাক্সেটিভ বা সাপোজিটরি ব্যবহার করতে পারেন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে। 
- ডা. রোনা লায়লা, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ বারডেম হাসপাতাল।

 

শিশুর আদরে সাবধানতা জরুরি :

ছোট্ট শিশুদের কোলে নেওয়ার বা আদর করার সময় সামান্য অসাবধানতায় হঠাৎ করে মস্তিষ্কে আঘাত লাগতে পারে। অনেক সময় বেশি ঝাঁকুনি, কোনো কিছুর সঙ্গে ধাক্কা বা আঘাত, জন্মগত মাথায় আঘাত বা অসাবধানতাবশত যে মস্তিষ্কের আঘাত ঘটে তা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। বাড়িতে ও বিদ্যালয়ে শিশু নির্যাতনের কারণেও এ রকম আঘাত লাগতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে শেকেন বেবি সিনড্রোম বা ব্যাটার্ড বেবি সিনড্রোম। খুলির ভেতর মস্তিষ্ক একধরনের তরল বা সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইডের ভেতর ভাসমান অবস্থায় থাকে। শিশুদের মস্তিষ্ক খুবই কোমল বলে কখনো কোনো আঘাত বা ঝাঁকুনিতে খুলির হাড়ের সঙ্গে ঘষা খেয়ে সহজেই আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এতে করে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, চোখের ভেতর বা রেটিনায় রক্তক্ষরণ, স্পাইনাল কর্ডে আঘাত বা মস্তিষ্কের ভেতর পানি জমার মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। শিশুদের ঘাড়ের পেশি দুর্বল থাকায় অনেক সময় ঝাঁকুনি বা দুলুনির সময়ও এমন হতে পারে। সাধারণত দুই বছরের নিচে বয়সের শিশুরাই এ ধরনের আঘাত পায়। তবে পাঁচ বছর পর্যন্ত যেকোনো সময় এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে। মৃদু আঘাতের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ শিশুর বেলায় তেমন বড় কোনো সমস্যা না-ও হতে পারে। মাঝারি ও গুরুতর আঘাত পেলে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শিশু মৃত্যুবরণ করতে পারে। রেটিনা আঘাতপ্রাপ্ত হলে চোখের ভেতর রক্তক্ষরণ হয় ও অন্ধত্ব হতে পারে। মস্তিষ্কের ভেতর রক্তক্ষরণ হলে ভেতরে চাপ বেড়ে যাওয়া ও অন্যান্য সমস্যায় শিশু শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে, জড়তা, খিঁচুনি, বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। শিশুর ঘাড়, কাঁধ বা মাথা ধরে কখনোই ঝাঁকাবেন না। অতিরিক্ত কান্নাকাটি করলে তার কারণ বা অসুবিধার বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করুন, শিশুকে আঘাত করবেন না, ঝাঁকাবেন না বা মারধর করবেন না।

 

 শিশুর মুখে আঙুল?

মুখে আঙুল চোষা শিশুদের একটি অভ্যাস। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শিশুরা জন্মের আগে থেকেই সাকিং রিফ্লেক্স বা চোষার প্রবণতা অর্জন করে, মুখে আঙুল চোষা সেই প্রবণতারই অংশ। তবে দুই থেকে চার বছর বয়সের মধ্যে এই প্রবণতা বা অভ্যাস আর থাকে না। তার পরও অনেক শিশু বিশেষ সময়ে মুখে আঙুল দিয়ে থাকে। এ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে বিষয়টিকে উপেক্ষা করাই ভালো। এ অভ্যাস এমনিতেই চলে যাবে। কিন্তু অভিভাবক হিসেবে জানা দরকার কখন আপনি এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন। এক. চার বা পাঁচ বছর বয়সের পরও অভ্যাসটি রয়ে গেলে তা শিশুর দাঁত ওঠায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। দুই. স্কুলগামী শিশুরা এ অভ্যাসের কারণে বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষকের হাসাহাসি বা সমালোচনার শিকার হয় এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তিন. শিশু এ অভ্যাসের কারণে বারবার পেটের সংক্রমণে ভুগতে পারে। চিকিৎসকদের পরামর্শ হলো, এ নিয়ে শিশুদের খুব বেশি সমালোচনা বা খেয়াল না করা। বকাবকি বা ধমকাধমকি না করে মৃদুভাবে মাঝেমধ্যে বুঝিয়ে বলতে পারেন। শিশু কোনো ভীতি বা দুশ্চিন্তা থেকে এটি করছে কি না, খুঁজে বের করে প্রতিকার করুন। সংক্রমণ এড়াতে শিশুর হাত সব সময় পরিষ্কার রাখুন। খুব প্রয়োজন হলে দন্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

সূত্র: মায়ো ক্লিনিক।

 

শিশুদেরও ওজন স্বাভাবিক চাই :

কিন্ডারগার্টেনের যেসব শিশু এই মুহূর্তে একটু গোলগাল গোছের, তাদের দেখতে যত মিষ্টিই লাগুক পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণী পৌঁছা অবধি অন্যদের তুলনায় তারা পাঁচ গুণ বেশি মোটা হওয়ার ঝুঁকির  মধ্যে আছে। পরবর্তী সময়ে মানে কৈশোরে মোটা হওয়ার    কারণে তাদের ভবিষ্যৎ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হূদেরাগ ইত্যাদির ঝুঁকিও যাবে বেড়ে। সম্প্রতি শিকাগোতে আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনে সম্মেলনে বিজ্ঞানীরা এ তথ্য প্রকাশ করেন। প্রায় আট হাজার শিশুর ওপর পাঁচ বছর ধরে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা বলছেন যে পাঁচ বছরের নিচে অর্থাৎ কিন্ডারগার্টেনে পড়ে এমন পশ্চিমা শিশুদের মধ্যে ১৪.৯ শতাংশ অতি ওজন এবং ১২.৪ শতাংশ স্থূলতায় ভুগছে। এই শিশুরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওবেসিটি বা স্থূলতার ৪৫ শতাংশ পূরণ করবে। তাঁরা আরও বলেন, মেয়েদের তুলনায় ছেলে শিশুরা অতিরিক্ত ওজন সমস্যায় ভোগে, বিশেষ করে নয় বছর বয়সের পর। সম্মেলনে প্রস্তাব করা হয় যে শিশুদের খাদ্যাভ্যাস, খেলাধুলা ও জীবনাচরণের দিকে অভিভাবকদের ছোটবেলা থেকেই সচেতন হওয়া উচিত।  
 সূত্র: আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন।






Source: Doinik Prothom Alo

 

 






 
Our Another Site : Right Way BD | Right Way BD FB Group | Right Way BD FB Page |