একজন বেকার পুরুষ দৈনিক ২০ ঘণ্টা ২৪ মিনিট নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
অনেকটা ‘অলস’ সময় কাটান। ঘুম, আড্ডা, পড়াশোনা, টিভি দেখা, খাওয়াদাওয়াসহ
ব্যক্তিগত পরিচর্যায় তাঁরা এই সময় ব্যয় করেন। তবে বেকার নারীরা এভাবে দৈনিক
সাড়ে ১৬ ঘণ্টা সময় দেন। তবে কর্মজীবী নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে এই ব্যবধান
অনেক কম। গতকাল বৃহস্পতিবার সময় ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান
ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। বিবিএস প্রথমবারের
মতো এ দেশের মানুষের সময় ব্যবহার নিয়ে জরিপ করেছে। জরিপে প্রাপ্ত ফলাফল
অনুযায়ী, পুরুষের চেয়ে নারীরাই কাজে বেশি ব্যস্ত থাকেন। তাঁরা চাকরির
পাশাপাশি গৃহস্থালিসহ বিভিন্ন কাজকর্মে পুরুষদের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করে
থাকেন। অথচ পুরুষের তুলনায় নারীরা অবসর কাটানও কম। আর গৃহস্থালির কাজে
নারীরাই এগিয়ে রয়েছেন।
বিবিএসের জরিপে বলা হয়েছে, কর্মে নিয়োজিত একজন পুরুষ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অর্থের বিনিময়ে ৬ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট কাজ করেন। আর নারীরা পাঁচ ঘণ্টা ১২ মিনিট কাজ করেন। তবে কর্মজীবী নারীরা গৃহস্থালির কাজে পুরুষের চেয়ে তিন গুণ বেশি সময় দেন। এ ক্ষেত্রে পুরুষ ১ ঘণ্টা ২৪ মিনিট আর নারীরা ৩ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট ব্যয় করেন। অন্যদিকে বেকার পুরুষেরা গৃহস্থালির কাজে মাত্র ১ ঘণ্টা ১২ মিনিট ব্যয় করেন। আর পুরুষের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি সময় দেন নারীরা। নারীরা ৬ ঘণ্টা ১২ মিনিট বাসার কাজ করেন। আবার বেকার পুরুষেরা বেকার নারীদের চেয়ে অবসর ও বিনোদনে প্রায় দ্বিগুণ সময় ব্যয় করেন।
পেশাওয়ারি হিসেবে চাকরিজীবী ও বিপণনকাজে নিয়োজিত নারীরা সবচেয়ে কম অবসর পান। তাঁরা দৈনিক গড়ে ৫ ঘণ্টা ১২ মিনিট চাকরিস্থলে কাজ করে বাসায় এসে মাত্র ৫৪ মিনিট অবসর পান। কেননা, বাসায় এসে তাঁরা পৌনে চার ঘণ্টা গৃহস্থালির কাজ করেন। আর একই পেশার পুরুষেরা পৌনে ৯ ঘণ্টা কাজ করে কর্মস্থল থেকে ফিরে মাত্র ৫৪ মিনিট গৃহস্থালির কাজে সময় দেন। গ্রামের পেশাজীবী নারীরা প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট কাজ করেন, পুরুষেরা করেন মাত্র দেড় ঘণ্টা। শহরে পেশাজীবী নারীরা বাসার কাজ করেন ৩ ঘণ্টা, আর পুরুষেরা করেন মাত্র ১ ঘণ্টা। ২০১২ সালে সময় ব্যবহার নিয়ে এই পরীক্ষামূলক জরিপ শুরু হয়। সেই বছরের মে মাসে বাংলাদেশের তিন হাজার ৭৮০টি খানার ১৫ বছর ও এর ঊর্ধ্বে ১০ হাজার দুজন লোকের মধ্যে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে
বিবিএসের সম্মেলনকক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রতিবেদনের ফলাফল
তুলে ধরেন বিবিএসের শিল্প ও শ্রম শাখার উপপরিচালক কবির উদ্দিন আহমেদ। পরিসংখ্যান
ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব নজিবুর রহমান বলেন, এই প্রতিবেদনে
নারীদের অর্থনৈতিক জয়গানই উঠে এসেছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় নীতিনির্ধারকদের
এই প্রতিবেদন কাজে লাগবে। অ্যাকশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন,
বিনোদন হিসেবে নারীরা পিঠা বানান, কাঁথা সেলাই করেন। এসব কাজের অর্থনৈতিক
অবদান রয়েছে। আরও বক্তব্য দেন বিবিএসের মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামাল,
বিটিভির মহাপরিচালক ম হামিদ, বিবিএসের শিল্প ও শ্রম শাখার পরিচালক সামছুল
আলম প্রমুখ।
তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলো, বাংলাদেশ।