
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় হতদরিদ্র
রাখাল শুক্লবৈদ্যের বাড়িতে হানা দেয় পাকিস্তানি বাহিনী। তাঁকেসহ ওই বাড়ির
২১ জনকে হত্যা করে। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় ঘরবাড়ি। রাখালের স্ত্রী পুষ্প
রানী বৈদ্যও রেহাই পাননি। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে শারীরিক ও মানসিক
নির্যাতনের শিকার হন। তাঁর বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গোছাবাড়া
গ্রামে। পুষ্প রানী ভেঙে পড়েননি। দুই শিশু ছেলেকে বুকে আগলে জীবনসংগ্রামে
ঝাঁপিয়ে পড়েন। অপরিসীম শ্রমে টাকা উপার্জন করে দুই ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে
বিদেশে পাঠিয়েছেন। ‘নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু
করা নারী’ ক্যাটাগরিতে তিনি ‘জয়িতা’র স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাঁর মতো আরও চারজন
‘জয়িতা’ হিসেবে সম্মান পেয়েছেন। ‘ অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী নারী’
ক্যাটাগরিতে দেলোয়ারা খাতুন, ‘শিক্ষা ও চাকরিক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী
নারী’ ক্যাটাগরিতে মিনা রানী সরকার, ‘সফল জননী নারী’ ক্যাটাগরিতে সুফিয়া
আক্তার খানম এবং ‘সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী’
ক্যাটাগরিতে সালমা বাছিত সিলেট বিভাগের সেরা ‘জয়িতা’র স্বীকৃতি আদায় করে
নেন। সেরা জয়িতাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে মনোনীত সব জয়িতাকেও সনদ ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের
সভাপতি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার এন এম জিয়াউল আলম বলেন, ‘জনসংখ্যার অর্ধেক
নারীকে পেছনে রেখে দেশ ও সমাজ সামনে এগোতে পারে না। সম্প্রতি একটি সমাজ
নারীদের পেছনে টেনে নিতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সেই অশুভ চেষ্টা সফল হয়নি।’ অনুষ্ঠানে
বিচারক হিসেবে ছিলেন সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. শামসুল ইসলাম
চৌধুরী, মদনমোহন কলেজের অধ্যক্ষ আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম এবং জাতীয় মহিলা
আইনজীবী সমিতির সিলেট বিভাগীয় সভাপতি সৈয়দা শিরিনা আক্তার। প্যানেলিস্ট
ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ
ইশফাকুল হোসেন, মহিলা পরিষদ সুনামগঞ্জের সভানেত্রী শীলা রায় ও জাতীয় মহিলা
সংস্থা মৌলভীবাজারের চেয়ারম্যান জহুরা আলাউদ্দিন। অনুষ্ঠানে জয়িতাদের
জীবনসংগ্রাম নিয়ে তৈরি করা বেশ কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।
অনুষ্ঠানের সব শেষে ছিল সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল ও মণিপুরী নৃত্য
পরিবেশনা।
তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলো, বাংলাদেশ।