Assertion For Justice, Equality And Freedom.

Wednesday, February 12, 2014

তোমরাই বাংলাদেশের বাতিঘর - নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রয়াস কর্মসূচি ‘জয়িতা’

http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/7/76/Begum_Rokeya.jpg২০ নারী বললেন তাঁদের সংগ্রামী জীবনের কথা। কেউ বা স্কুলে যাওয়ার পথে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে প্রতিবাদমুখর হয়েছিলেন; কেউ বা শিক্ষিত স্বামীর কাছ থেকে ‘অসুন্দর ও অশিক্ষিত’ তকমা পেয়ে স্বামী-বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রতিজ্ঞায় অটল থেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিলেন। যৌতুকের কারণে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাড়িছাড়া এক নারী পরিশ্রম করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। প্রতিদিন মদ খেয়ে মাতলামি করে বউ-পেটানো স্বামীর অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করে এক নারী গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন এলাকার সব কটি মাদকের আস্তানা। গতকাল বুধবার সিলেট বিভাগীয় ‘জয়িতার অন্বেষণে বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে সিলেট বিভাগের চার জেলার নানা প্রান্তের ২০ জন নারী নিজেদের জীবনের এ রকম বাস্তব গল্প শোনালেন। প্রতিটি গল্পই ছিল বেদনাবিধুর এক দুঃখগাথা। এ সবই সমাজে শত প্রতিকূলতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারীর টিকে থাকার প্রত্যয়ী গল্প। গত ২৫ জানুয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে দেশের সাত বিভাগে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর। সিলেট বিভাগীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ১০টায় সিলেট সার্কিট হাউস মাঠে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। কর্মসূচির মিডিয়া পার্টনার প্রথম আলো, চ্যানেল আই ও রেডিও ভূমি। ২০ জন নারীর মধ্যে সেরা পাঁচজনকে ‘জয়িতা’ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় হতদরিদ্র রাখাল শুক্লবৈদ্যের বাড়িতে হানা দেয় পাকিস্তানি বাহিনী। তাঁকেসহ ওই বাড়ির ২১ জনকে হত্যা করে। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় ঘরবাড়ি। রাখালের স্ত্রী পুষ্প রানী বৈদ্যও রেহাই পাননি। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। তাঁর বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গোছাবাড়া গ্রামে। পুষ্প রানী ভেঙে পড়েননি। দুই শিশু ছেলেকে বুকে আগলে জীবনসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অপরিসীম শ্রমে টাকা উপার্জন করে দুই ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে বিদেশে পাঠিয়েছেন। ‘নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করা নারী’ ক্যাটাগরিতে তিনি ‘জয়িতা’র স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাঁর মতো আরও চারজন ‘জয়িতা’ হিসেবে সম্মান পেয়েছেন। ‘ অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী নারী’ ক্যাটাগরিতে দেলোয়ারা খাতুন, ‘শিক্ষা ও চাকরিক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী’ ক্যাটাগরিতে মিনা রানী সরকার, ‘সফল জননী নারী’ ক্যাটাগরিতে সুফিয়া আক্তার খানম এবং ‘সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী’ ক্যাটাগরিতে সালমা বাছিত সিলেট বিভাগের সেরা ‘জয়িতা’র স্বীকৃতি আদায় করে নেন। সেরা জয়িতাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে মনোনীত সব জয়িতাকেও সনদ ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানের সভাপতি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার এন এম জিয়াউল আলম বলেন, ‘জনসংখ্যার অর্ধেক নারীকে পেছনে রেখে দেশ ও সমাজ সামনে এগোতে পারে না। সম্প্রতি একটি সমাজ নারীদের পেছনে টেনে নিতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সেই অশুভ চেষ্টা সফল হয়নি।’ অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে ছিলেন সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. শামসুল ইসলাম চৌধুরী, মদনমোহন কলেজের অধ্যক্ষ আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম এবং জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সিলেট বিভাগীয় সভাপতি সৈয়দা শিরিনা আক্তার। প্যানেলিস্ট ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন, মহিলা পরিষদ সুনামগঞ্জের সভানেত্রী শীলা রায় ও জাতীয় মহিলা সংস্থা মৌলভীবাজারের চেয়ারম্যান জহুরা আলাউদ্দিন। অনুষ্ঠানে জয়িতাদের জীবনসংগ্রাম নিয়ে তৈরি করা বেশ কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। অনুষ্ঠানের সব শেষে ছিল সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল ও মণিপুরী নৃত্য পরিবেশনা।






তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলো, বাংলাদেশ।

 
Our Another Site : Right Way BD | Right Way BD FB Group | Right Way BD FB Page |