
জরিপে
চার ধরনের নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে। শারীরিক, যৌন ও মানসিক নির্যাতন
ছাড়াও নারীরা বড় ধরনের অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হন। আর এই অর্থনৈতিক
নির্যাতনের মধ্যে যৌতুকের বিষয় নিয়েও নারীদের প্রশ্ন করা হয়। দেখা গেছে,
এক-তৃতীয়াংশ নারীরই যৌতুকের বিনিময়ে বিয়ে হয়েছে। মুসলিম নারীদের অনেকেই
দেনমোহর, কাবিননামার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতন নন। ৪০ শতাংশের বর্তমান ও
প্রাক্তন স্বামী দেনমোহরের টাকা কখনোই পরিশোধ করেননি। জরিপে
অন্তর্ভুক্ত খানাগুলোতে জমির মালিকানা আছে ৮১ শতাংশ পুরুষের। আর মাত্র ১৯
শতাংশ নারীর জমির মালিকানা আছে। বাড়ির মালিকানার ক্ষেত্রেও ৮৬ শতাংশ
পুরুষের বিপরীতে নারীর হার মাত্র ১৪ শতাংশ। জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের ১৫
দশমিক ৫ শতাংশ অবিবাহিত। সম্প্রতি বিবাহিত ৭২ শতাংশ। তবে এঁদের মধ্যে ৬
শতাংশ বিভিন্ন কারণে স্বামীর সঙ্গে থাকেন না। বিধবা এবং তালাকপ্রাপ্ত নারীর
সংখ্যা ১১ শতাংশ। ১ শতাংশেরও কম নারী একা থাকেন।

স্বামীর
অনুমতি: ৪৬ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার জন্যও স্বামীর
অনুমতি নিতে হয়। ৩০ শতাংশ নারীর স্বামী পর্দাপ্রথা মানতে তাঁদের বাধ্য
করেছেন। এক-চতুর্থাংশই বলেছেন, শাশুড়ি ও ননদের সঙ্গে স্ত্রী খারাপ ব্যবহার
করেছেন, এ অভিযোগ পেয়ে স্বামী নির্যাতন চালিয়েছেন। ২৪ শতাংশ নারীই
জানিয়েছেন, স্বামী বাবা-মা তুলে বাজে গালি দেন। অন্য পুরুষের সঙ্গে কথা
বলার অপরাধে ২৪ শতাংশ নারীই স্বামীর নির্যাতনের শিকারের কথা জানিয়েছেন।
প্রায় ১১ শতাংশেরই পড়া বা কাজে বাধা দিয়েছেন স্বামী। ২৩ শতাংশ নারী
জানিয়েছেন, বিনোদনের জন্য বাইরে যাওয়ার বিষয়ে স্বামীর নিষেধাজ্ঞা আছে।
পরিবার পরিকল্পনার জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ বা বাদ দিতে বাধ্য করার
কথা জানিয়েছেন প্রায় ১১ শতাংশ নারী। মেয়েসন্তান জন্ম দেওয়ার অপরাধে প্রায় ৬
শতাংশই স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হন।
স্বামী বদল হলেও পিছু ছাড়েনি
নির্যাতন: জরিপমতে, প্রাক্তন ও বর্তমান স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার
হওয়ার ক্ষেত্রে খুব একটা তারতম্য নেই। অর্থাৎ স্বামীর বদল হলেও নির্যাতন
পিছু ছাড়েনি। বর্তমান স্বামীর হাতে ৮১ শতাংশ মানসিক নির্যাতনের শিকার। এ
ক্ষেত্রে সাবেক স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ৭৩ শতাংশ। শারীরিক
নির্যাতনের ক্ষেত্রে বর্তমান স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হন ৬৪ শতাংশ,
সাবেক স্বামীর হাতে এ হার প্রায় ৫৯ শতাংশ। বর্তমান স্বামীর নির্যাতনের
কারণে ৩ শতাংশ এবং সাবেক স্বামীর নির্যাতনের কারণে ২ শতাংশ নারীর গর্ভের
সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। অর্থনৈতিক, বিয়ের সময় যৌতুক নেওয়া, বিয়ের পর যৌতুকের
জন্য চাপ দেওয়াসহ অন্যান্য কারণেও তেমন পার্থক্য ঘটেনি দুই স্বামীর বেলায়।
জায়গাভেদে
নির্যাতন: কর্মক্ষেত্রে ১৬ শতাংশ নারী শারীরিক, ২৫ শতাংশ মানসিক ও ২৮
শতাংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হন। নির্জন স্থানে, প্রকাশ্যে অথবা
যাতায়াতের সময় ৪৩ শতাংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হন। কোচিং সেন্টারে ১০
শতাংশ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ শতাংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হন। জায়গার
পাশাপাশি নারীর অবস্থান অনুযায়ীও নির্যাতনের তারতম্য ঘটে। একা থাকা
নারীদের ৩৫ শতাংশ এবং তালাকপ্রাপ্ত নারীদের ৩৭ শতাংশই মানসিক নির্যাতনের
শিকার। তালাকপ্রাপ্তদের ৩০ শতাংশ যৌন নির্যাতনের শিকার হন।
বাংলাদেশ
উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো এবং সরকারের সপ্তম
পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন কমিটির সদস্য নাজনীন আহমেদ প্রথম আলোকে
বলেন, শারীরিক নির্যাতনের বাইরেও যে অর্থনৈতিক বা মানসিকভাবে নারীরা
নির্যাতনের শিকার হন বিবিএসের জরিপে তা স্পষ্ট হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নের বড়
জায়গা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। দেশের অনেক নারী যোগ্যতা থাকার পরও উপার্জন
করতে পারছেন না। সম্পত্তিতেও নারীর অধিকার খুবই কম। যতটুকু আছে বিভিন্ন
কারণে তাও পান না। এ ছাড়া যে গৃহবধূ সারাক্ষণ বাড়িতে কাজ করছেন তাঁরও যে
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আছে তাও পুরুষেরা ভুলে যান। অথচ অর্থনৈতিক অধিকার
নিশ্চিত করতে না পারলে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বড় দুর্বলতা থেকেই
যাচ্ছে।
সুত্রঃ প্রথম আলো, বাংলাদেশ
তারিখঃ ২৪-০১-২০১৪।