চট্টগ্রামে জয়া পাল (৩৫) নামের এক গৃহবধূ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর শরীরে কেরোসিন
ঢেলে আগুন দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর থেকে জয়ার স্বামী ও ভাশুর
পলাতক। গতকাল সোমবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন
ইউনিটে মারা যান জয়া। চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ চৌধুরীহাট
এলাকার বণিকপাড়া হরিঠাকুরের বাড়িতে স্বামী-সন্তানসহ যৌথ পরিবারে থাকতেন
তিনি। তাঁর বাবার বাড়ি রাঙ্গুনিয়ার দামাইরহাট সোনারগাঁওয়ে। জয়ার নয় বছর ও দুই বছর বয়সী দুটি ছেলেসন্তান রয়েছে। চমেক
পুলিশ ফাঁড়ি ও বার্ন ইউনিট সূত্র জানায়, রোববার রাত আড়াইটার সময় অগ্নিদগ্ধ
অবস্থায় জয়াকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁর স্বামী সঞ্জয় পাল ও ভাশুর ধনঞ্জয়
পাল। ভর্তি করার সময় তাঁরা জানান, রান্নার চুলা থেকে জয়ার শরীরে আগুন লাগে।
কন্যার জন্য পিতার আহাজারি |
জয়ার
বাবা গোপাল কৃষ্ণ দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাত দেড়টার সময় জয়ার স্বামী
সঞ্জয় আমাকে ফোনে জানায়, রান্না করতে গিয়ে কাপড়ে আগুন লেগে অগ্নিদগ্ধ হয়েছে
জয়া। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিষয়টি আমি আমার ছেলে উত্তম দত্তকে
জানাই। উত্তম চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে থাকে।’ জয়ার ভাই উত্তম জানান,
তিনি রাত তিনটার সময় বার্ন ইউনিটে এসে জয়ার স্বামী ও ভাশুরকে দেখতে পান। এ
সময় অগ্নিদগ্ধ বোনের কাছে জানতে পারেন, তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে
দেওয়া হয়েছে। এ কথা তিনি মুঠোফোনে ধারণ করতে চাইলে তাঁর হাত থেকে ফোনটি
কেড়ে নেন জয়ার ভাশুর। তারপর জয়ার স্বামী ও ভাশুর পালিয়ে যান। জয়ার বোন
তপশ্রী দত্ত জানান, ১১ বছর আগে সঞ্জয়ের সঙ্গে জয়ার বিয়ে হয়। এরপর থেকেই
নানা অজুহাতে জয়ার ওপর নির্যাতন করে আসছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সহ্য করতে
না পেরে বছর খানেক আগে জয়া বাবার বাড়ি চলে এসেছিল। কিন্তু আর নির্যাতন করা
হবে না—এ প্রতিশ্রুতি পেয়ে আবারও সে স্বামীর সংসারে ফিরে যায়। তপশ্রী জানান, একাধিক নারীর সঙ্গে সঞ্জয়ের সম্পর্ক ছিল। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় সব সময় নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে জয়াকে।
পরিবারের দাবি, মারা যাওয়ার আগে জয়া তাঁর শরীরে আগুন লাগানোর জন্য স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের দায়ী করে গেছেন। বার্ন ইউনিটের একজন ওয়ার্ডবয় জয়ার এ বক্তব্য মুঠোফোনে ধারণ করেছেন বলেও তাঁরা জানান। চমেক বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক মিশমা ইসলাম বলেন, আগুনে জয়ার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে যায়। তাঁর শ্বাসনালিও সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।এ ঘটনায় মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে জয়ার পরিবার। যোগাযোগ করা হলে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইসমাইল জানান, ঘটনাটা শুনেছি। ঘটনাস্থলে লোকও পাঠানো হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলে মামলা নেওয়া হবে।
সুত্রঃ প্রথম আলো, বাংলাদেশ