কোনো অপরাধ বা অপরাধমূলক কিছু ঘটার পর সে বিষয়ে থানায় প্রতিকার
পাওয়ার জন্য যে সংবাদ দেওয়া হয়, তাকে এজাহার বা এফআইআর (ফার্স্ট
ইনফরমেশন রিপোর্ট) বলে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে বা তাঁর পরিবারের কেউ
কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি, যিনি ঘটনা ঘটতে দেখেছেন কিংবা ঘটনা সম্পর্কে অবগত
আছেন, তিনি থানায় এজাহার করতে পারেন। মূলত এজাহার করার মাধ্যমে থানায়
মামলা করা হয়।
এজাহার করার নিয়মকানুন:
কোনো অপরাধ সম্পর্কে নিকটস্থ থানায় এজাহার করতে হবে। এজাহারের আবেদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বরাবর লিখতে হবে। লিখিত আকারে দেওয়া হলে সাদা কাগজের এক পিঠে লিখতে হবে। কম্পোজ করেও দেওয়া যাবে। ঘটনার পূর্ণ বিবরণ, ঘটনার স্থান, সময় ও কীভাবে ঘটনা ঘটল, আসামির নাম ঠিকানা জানা থাকলে তার বিবরণ স্পষ্টভাবে লিখতে হবে। এজাহারকারীর পূর্ণ ঠিকানা ও সই থাকতে হবে। যদি মৌখিকভাবে থানায় এজাহার দেওয়া হয়, তাহলে থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তা লিখবেন। অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে, জিডি (সাধারণ ডায়েরি) আর এজাহার এক বিষয়। এ দুটি এক বিষয় নয়। জিডি হচ্ছে থানায় কোনো ঘটনা সম্পর্কে অবগত করা মাত্র, আর এজাহার হচ্ছে সরাসরি মামলা গ্রহণে পদক্ষেপ নেওয়া।
এজাহারে উল্লিখিত অপরাধ যদি আমলযোগ্য কিংবা এমন কোনো ঘটনাসংক্রান্ত হয়,
যা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিলে আসামিদের ধরা যাবে বা শনাক্ত করা যাবে, সে
ক্ষেত্রে পুলিশ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে। আর যদি এজাহারে বর্ণিত অপরাধ বা
বিষয়টি আমলযোগ্য না হয়, তবে পুলিশ এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিচারিক
ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দাখিল করবে। সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য
বা তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে অনুমতি নেবে। এমনও
হতে পারে, এজাহারকারীকে সরাসরি মুখ্য বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ
দাখিল করার পরামর্শ দেবে।ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কত দিনের মধ্যে পুলিশকে
সংবাদ দিতে হবে বা এজাহার করতে হবে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট সময় দেওয়া নেই
আইনে। তবে এজাহার করতে দেরি করা উচিত নয়। দেরিতে এজাহার মামলার গুণাগুণ
নষ্ট করতে পারে। কোনো কারণে এজাহার করতে দেরি হলে তার সুনির্দিষ্ট কারণ
আবেদনে উল্লেখ করতে হবে।
থাকতে হবে সতর্ক:
এজাহার গ্রহণকালে পুলিশের কর্মকর্তাকে যথেষ্ট আন্তরিক ও সতর্ক থাকা উচিত। একজন এজাহারকারী হচ্ছে মামলায় প্রথম সাক্ষী। এজাহারকারীর সাক্ষ্যের ওপর অনেকাংশ নির্ভর করে মামলার বিচার ও পরিণতি। তাই এজাহার গ্রহণের সময় সতর্ক না থাকার কারণে মামলার বিচারে এর প্রভাব পড়ে। কর্মকর্তাকে এজাহারকারী থেকে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে, যাতে কোনো গরমিল না হয় সাক্ষ্যের সময়। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো এজাহারকারী যদি মৌখিক কোনো বিবৃতি দেন, তাহলে তা লিখিত আকারে নিয়ে এজাহারকারীকে পড়ে শোনাতে হবে এবং তাঁর স্বাক্ষর নিতে হবে। যে কর্মকর্তা এজাহার লিখবেন, তিনিই সিল ও সই দেবেন। কোনো আমলযোগ্য অপরাধের ঘটনা থানায় এলে তা মৌখিক আর লিখিত—যা-ই হোক, এজাহার হিসেবে নিতে থানা বাধ্য থাকবে। কোনো ঘটনা টেলিফোনে বা ই-মেইলে পেলে সংবাদদাতাকে থানায় গিয়ে এজাহার করার কথা বলতে হবে। যদি বার্তা প্রেরণকারীকে পাওয়া না যায়, তাহলে পুলিশের কর্মকর্তা নিজেই এজাহার করতে পারবেন, যদি ঘটনাটির সত্যতা পাওয়া যায়।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
Source: Doinik Prothom Alo