নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় এক গৃহবধূকে নির্মমভাবে নির্যাতনের অভিযোগে
তাঁর স্বামীকে গত সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ওই গৃহবধূকে উদ্ধার
করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নাম ইমদাদুল হক ওরফে পাভেল। তিনি রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহর ছেলে। ওই গৃহবধূ গতকাল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী নগরে র্যাব-১১
ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে স্বামীর নির্যাতনের
বর্ণনা দেন। গৃহবধূর বাড়ি রূপগঞ্জের রূপসীর সাইনবোর্ড এলাকায়। তবে বিয়ের
আগে তিনি ঢাকায় বনানীতে মামার বাসায় থেকে ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজে
পড়তেন। ২০১০ সালে তিনি ইমদাদকে ভালোবেসে বাবা-মায়ের অমতে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের
কিছু দিন পর থেকেই ইমদাদ যৌতুকের দাবিতে মারধর করা শুরু করেন। ২০১১ সালের ৬
ফেব্রুয়ারি তাঁদের একটি কন্যাসন্তান হয়।
গতকাল কাঁদতে কাঁদতে ওই গৃহবধূ বলেন, ‘ইমদাদ আমার মুখে জোর করে মশা মারার
ওষুধ ছিটায়, যাতে মরে যাই। এরপর ধাক্কা দিয়ে বাথরুমে আটকে রাখে। আমি বলেছি,
তুমি নেশা করো, যেখানে-সেখানে যাও। আমি তোমার কাছে থাকব না। এটা বলায় আমার
মুখের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে। গলা দিয়ে রক্ত পড়ে, তবু আমাকে ছাড়ে না।
কিছু থেকে কিছু হলে ওর (ইমদাদ) মা, বাবা আমার চুল ধরে মাটিতে ফেলে মারতে
মারতে যা করে, কোনো মানুষ এভাবে মারে না। শবে বরাতের পরদিন রাতে মদ খেয়ে
এসে ইমদাদ আমার হাতে গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দেয়। বলে, আমার মুখে ইস্ত্রি
লাগিয়ে মেরে ফেলবে।’ র্যাব-১১-এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহাঙ্গীর আলম
জানান, নির্যাতিত গৃহবধূ সোমবার বিকেলে র্যাবের কাছে ফোন করে তাঁকে ঘরের
ভেতর দিনের পর দিন আটকে রেখে নির্যাতনের বিষয়টি জানান। পরে রাতে
র্যাব-১১-এর একটি দল অভিযান চালিয়ে তাঁকে (গৃহবধূ) ও তাঁর শিশুসন্তানকে
উদ্ধার করে এবং স্বামী ইমদাদকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় ইমদাদের লোকজন
র্যাবের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করেন। র্যাবের অভিযান টের পেয়ে পালিয়ে
যান তাঁর বাবা চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ। রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, ওই গৃহবধূ
তাঁর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে
মামলা করেছেন। ইমদাদকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ইমদাদের
বাবা ও মাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
Source: Dainik Prothom Alo