ইচ্ছার বিরুদ্ধে বছর দেড়েক আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী
উপজেলার চরগঙ্গা গ্রামের খাদিজাতুত তাহিরা। তখন সে সপ্তম শ্রেণীর বার্ষিক
পরীক্ষা দিয়েছে মাত্র। বিয়ের পরদিনই তাকে শ্বশুরবাড়ি যেতে হয়। এরপর কেটে
যায় ছয়টি মাস। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে বাবার বাড়ি যেতে দেয়নি। এ সময়ের মধ্যে স্বামী সোহাগ শরীফ ৫০ হাজার টাকা ও একটি মোটরসাইকেল যৌতুক
দাবি করেন খাদিজার বাবার কাছে। সোহাগ শরীফ বরগুনার আমতলী উপজেলার রাওঘা
গ্রামের মো. নসু শরীফের ছেলে। অপরিণত বয়সে বিয়েটা যেমন মেনে নিতে পারেনি
খাদিজা, তেমনি স্বামীর যৌতুক চাওয়াটাকেও স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়নি।
প্রতিবাদ করায় শারীরিকভাবে কয়েক দফা লাঞ্ছিত হতে হয় তাকে।
গত বছরের মে মাসের শেষ দিকে বাবার বাড়িতে আসার সুযোগ পায় খাদিজা। তার বাবা
একজন কৃষক। বাবার বাড়ি ফিরে সে আবার যোগাযোগ করে বড় বাইশদিয়া এ হাকিম
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়েরই ছাত্রী ছিল সে। বছরের প্রায় অর্ধেক সময়
চলে গেলেও অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে আবার পড়াশোনা শুরু করে মেয়েটি। ২০১২
সালের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৪ দশমিক ৫৮ পায় সে। এরপর একই
বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। গত শুক্রবার রাতে সোহাগ শরীফের বড় ভাই জাফর শরীফ চরগঙ্গা গ্রামে গিয়ে
এলাকার লোকজনকে ধরে সমঝোতার মাধ্যমে খাদিজাকে তাঁদের বাড়িতে নেওয়ার চেষ্টা
করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তীব্র প্রতিবাদ করে খাদিজা। তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে
না দেখে গত শনিবার রাতে ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে।
এ হাকিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহতাব হোসেন জানান, খাদিজা
অনেক মেধাবী ছিল। খাদিজার পড়ার টেবিলে রাখা একটি ডায়েরির পাতা উল্টিয়ে দেখা
গেল সেখানে লেখা, ‘কর্মজীবন: আ. মজিদ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিতে হবে।
পরে বিএড করতে হবে। এরপর গ্রামের এই বিদ্যালয়েই শিক্ষকতা...।’ খাদিজার মা হেলেনা বেগম বলেন, ‘আমরা ওরে শ্বশুরবাড়ি দিতামই না। ও ক্যান যে এভাবে চইল্যা গ্যাল, জানি না!’